আলোকিত সমাজ গঠনে বইয়ের ভূমিকা

মহিউদ্দিন ইমন | শুক্রবার , ১১ জুলাই, ২০২৫ at ১১:২৩ পূর্বাহ্ণ

কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন বই হচ্ছে অতীত আর বর্তমানের মধ্যে বেঁধে দেয়া সাঁকো। বই এমন একটি উপকরণ, যা একজন মানুষকে সহজেই আলোকিত করে তুলতে পারে। শিক্ষার আলো, নীতিনৈতিকতাআদর্শ, ইতিহাসঐতিহ্য, কৃষ্টিসভ্যতা, সাহিত্যসংস্কৃতিসহ সবকিছুই রয়েছে বইয়ের ভেতরে। একমাত্র বইয়ের মধ্যেই আছে সব ধরনের জ্ঞান। তাই জীবনের জন্য বই প্রয়োজন। প্রত্যেকের জীবনেই একঘেয়েমি, দুঃখকষ্ট, অস্থিরতা, মানসিক সমস্যাসহ নানা সমস্যা থাকে। কিন্তু বই পড়লে সেসব চিন্তা মাথায় থাকে না। অবসর সময়গুলো বিনোদনের মাধ্যমে কাটানোর জন্য কত কিছুই না আবিষ্কৃত হয়েছে পৃথিবীতে, কিন্তু বই পড়ার মতো নির্মল আনন্দের সমতুল্য হতে পারেনি কিছুই। সৈয়দ মুজতবা আলীর কথাটা আমরা সবাই জানি ‘বই কিনে কেউ কোনোদিন দেউলিয়া হয় না।’ আমরা যদি মনোযোগ দিয়ে কোনো বই পড়ি, তাহলে সে বইয়ের বিষয়বস্তু বা ঘটনা কখনও ভুলে যাব না। তাই জীবনের অবসর সময়গুলো বইয়ের মাঝে ডুবে থাকা দরকার। জ্ঞানচর্চা মানুষকে যেমন মহৎপ্রাণ করে তোলে, তেমনি চিত্তকে মুক্তি দেয়। মানবাত্মাকে জীবনবোধে বিকশিত করে। জাগ্রত করে তোলে মনুষ্যত্ববোধে। সব বিষয়ে সুশৃঙ্খল ও পূর্ণাঙ্গ জ্ঞানার্জন এবং পরিপূর্ণ মানসিক প্রশান্তি লাভ করতে হলে অবশ্যই বই পড়তে হবে। কারণ সব জ্ঞানের উৎস বই।

টলস্টয় এর বিখ্যাত উক্তি জীবনে তিনটি জিনিসের প্রয়োজনবই, বই এবং বই।একটি সুস্থ, সুন্দর জাতি গঠন করতে হলে অবশ্যই বই পড়তে হবে। বই পড়ার কোনো বিকল্প নেই। বই মানুষের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটায়। বড় মনের মানুষ হওয়ার জন্য বইয়ের সান্নিধ্যে আসতেই হবে। একজন লেখক তার সুপ্ত ভাবনাকে লেখনীর মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলেন।

কবিসাহিত্যিকলেখকেরা তাদের সমস্ত জ্ঞান বইয়ের পাতায় ঢেলে দেন। বই পড়ে সেই জ্ঞানের আলো সংগ্রহ করা যায়। বই পড়া মানুষের কাছেই দেশের ভবিষ্যৎ নিরাপদ থাকবে। যারা বড় হতে চায়, তাদের প্রয়োজন বেশি বেশি করে বই পড়া। আমাদের মনে রাখতে হবে, যত বেশি বই পড়ব, তত বড় হব।

যারা সমাজে অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে, তারা বই পড়া থেকে দূরে রয়েছে। বই পড়া থেকে দূরে সরে গিয়েই বিভ্রান্তির পথে চলে যায় মানুষ। আমাদের জানতে হবে, বই শুধু মানুষের মেধা বা জ্ঞান বৃদ্ধি করে না, বরং বই পড়লে মানুষ হয়ে ওঠে কর্মোদ্যম, সহনশীল ও সহমর্মী। মানুষ বই পড়েই নিজেকে জানতে পারে এবং নিজের জীবনকে আলোকিত করে তুলতে পারে। একটি ভালো বই যে কোনো সময় যে কোনো মানুষকে সম্পূর্ণরূপে বদলে দিতে পারে। উন্নত জাতি ও রাষ্ট্র গড়তে হলে মানুষের জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে হবে। হতে হবে আলোকিত মানুষ। এজন্য প্রয়োজন বই পাঠ করা। নতুন প্রজন্মকে যত বেশি বই পাঠে উৎসাহিত করা যাবে, ততই তারা জ্ঞানসমৃদ্ধ হবে। দেকার্তে বলেছেন ‘ভালো বই পড়া যেনো গত শতকের মহৎ লোকের সাথে আলাপ করার মতো।’ দেশকে নেতৃত্ব দেয়ার, তরুণ প্রজন্মকে যোগ্য করে তোলার অন্যতম হাতিয়ার বই। তাই বই পাঠের বিকল্প কিছু নেই।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবই পড়ার উপকারিতা
পরবর্তী নিবন্ধঅভিশপ্ত ইহুদি জাতির করুণ ইতিহাস