সাধারণ পরিবারের সন্তানের অসাধারণ যাত্রা

সিলিকন ভ্যালিতে কাজ করার সুযোগ পেলেন ফটিকছড়ির ইরফান, বছরে বেতন সাড়ে ৩ কোটি টাকা

ফটিকছড়ি প্রতিনিধি | সোমবার , ৩০ জুন, ২০২৫ at ৫:০৬ পূর্বাহ্ণ

ফটিকছড়ির সন্তান মোহাম্মদ ইরফান উদ্দীন বিশ্বের প্রযুক্তি বিপ্লবের অন্যতম কেন্দ্র সিলিকন ভ্যালিতে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির শীর্ষস্থানীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রতিষ্ঠান অ্যাস্টেরা ল্যাবসে ইলেকট্রিক্যাল প্রোডাক্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি পাওয়ার মাধ্যমে তার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।

নয় ধাপের কঠোর ইন্টারভিউ পর্ব পেরিয়ে গত ২১ মে নিয়োগপত্র হাতে পান ইরফান। আজ ৩০ জুন থেকে তিনি অফিসিয়ালি যোগ দেবেন। বছরে বেতন ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা, সঙ্গে প্রথম বেতনের সাথে ৩০ লাখ টাকা সাইনিং বোনাস।

ইরফানের শুরুটা সহজ ছিল না। ফটিকছড়ির ধর্মপুর ইউনিয়নের কমিটি বাজার এলাকার সাধারণ পরিবারের সন্তান তিনি। ধর্মপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও চট্টগ্রাম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। দুই পরীক্ষায় জিপিএ৫ পেয়েছেন। এরপর চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) থেকে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন, যদিও সিজিপিএ ছিল মাত্র ২.৯৮। স্নাতক শেষে চাকরি না পেয়ে কিছুদিন বেকার ছিলেন। পরে ওয়ালটনে চাকরি করে হাতেকলমে কাজ শিখেন। কিন্তু তার চাওয়া ছিল অনেক বেশি; সিলিকন ভ্যালিতে নিজের স্থান তৈরির স্বপ্ন ছিল। সেজন্য বিদেশে উচ্চশিক্ষার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। কম সিজিপিএ ও গবেষণাপত্র না থাকার বাধা কাটিয়ে তিনি জিআরই পরীক্ষায় ৩৩১ স্কোর করে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ওয়াইওমিংয়ের মাস্টার্সে ফুল ফান্ডিং স্কলারশিপ পান ২০২৩ সালের আগস্টে।

মাস্টার্সের শেষ সেমিস্টারে এসে চাকরি খোঁজার কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হন ইরফান। জানুয়ারি থেকে একের পর এক চাকরির জন্য আবেদন করলেও প্রথমে সাড়া মেলেনি। ক্লাস, পরীক্ষা ও গবেষণার চাপের মধ্যেও প্রতিদিন দুই ঘণ্টা সময় আলাদা করতেন চাকরির জন্য। ফেব্রুয়ারি থেকে ধীরে ধীরে ইন্টারভিউ কল আসা শুরু হলেও প্রথম চাকরির অফার পেতে অপেক্ষা করতে হয় মে মাস পর্যন্ত। এক হাজারের বেশি আবেদন জমা দিয়ে অবশেষে তিনি সিলিকন ভ্যালির শীর্ষস্থানীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রতিষ্ঠান অ্যাস্টেরা ল্যাবসে ইলেকট্রিক্যাল প্রোডাক্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে সুযোগ পান।

এই চাকরি পেতে তাকে ৯ ধাপের কঠোর ইন্টারভিউ দিতে হয়, যার মধ্যে একদিনে টানা ৭টি ইন্টারভিউ দিতে হয়েছে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে। অনসাইট ইন্টারভিউয়ের জন্য ওয়াইওমিং থেকে ক্যালিফোর্নিয়ায় ভ্রমণও করতে হয়েছে তাকে। এই দীর্ঘ এবং চ্যালেঞ্জিং ইন্টারভিউ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ইরফান বুঝতে পেরেছেন, বাংলাদেশের কাজের অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা বিদেশে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।

ক্লাসমেট মাহাফুজুল ইসলাম বলেন, ইরফান সবসময়ই মেধাবী। তার সাফল্যে আমরা গর্বিত। সে আজ সবার জন্য এক উদাহরণ।

ধর্মপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একরাম উল্লাহ বলেন, ইরফান শুধু আমাদের বিদ্যালয়ের নয়, দেশের গর্ব। তার জন্য আমাদের দোয়া রইল।

ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, তার এই অসাধারণ অর্জন ফটিকছড়ি ও দেশের জন্য গর্বের বিষয়।

বাংলাদেশ থেকে সিলিকন ভ্যালিতে যাত্রার গল্প শেয়ার করে মোহাম্মদ ইরফান উদ্দীন বলেন, চুয়েট থেকে স্নাতক শেষ করার পর ঠিক করেছিলাম দেশেই ক্যারিয়ার গড়ব। চাকরি খুঁজছিলাম, কিন্তু দীর্ঘ সময় বেকার থাকার পর ওয়ালটনে চাকরি পাই। সেই সময়ের অভিজ্ঞতা আমার বর্তমান চাকরি পাওয়ায় খুবই কাজে লেগেছে। ব্যক্তিগত কারণে বিদেশে উচ্চশিক্ষার সিদ্ধান্ত নিই এবং ২০২৩ সালের আগস্টে বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার জন্য যাত্রা করি। যেকোনো ইঞ্জিনিয়ারের মতো আমারও স্বপ্ন ছিল একদিন সিলিকন ভ্যালিতে চাকরি করার। আজ সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅ্যামোনিয়াসহ বিভিন্ন রাসায়নিক ও নষ্ট ডিমে বেকারি পণ্য প্রস্তুত
পরবর্তী নিবন্ধউখিয়া-টেকনাফে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২, আহত ৬