সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা গতকাল মহাসমারোহে অনুষ্ঠিত হয়েছে। রীতি অনুয়ায়ী প্রতি বছর আষাঢ় মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে অনুষ্ঠিত হয় জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা।
গতকাল শুক্রবার নগরের নন্দনকানন রথের পুকুর পাড় এলাকায় তুলসীধামের মোহন্ত ও ঋষিধাম অধিপতি দেবদীপ পুরী মহারাজের পৌরহিত্যে কেন্দ্রীয় রথযাত্রা উৎসব উদযাপন কমিটির উদ্যোগে রথপরিক্রমা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম সাম্যের শহর, সমপ্রীতির শহর। ধর্ম–বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে শহরের উন্নয়নে। এই ঐক্যই আমাদের শক্তি।
শ্রীমৎ দেবদীপ পুরী মহারাজ বলেন, রথের চাকা আমাদের জীবনে ভক্তির গতি এনে দেয়। রথ যেমন সম্মিলিতভাবে টানতে হয়, তেমনই জীবনের ভার ভাগ করে নিতে হয় সবাইকে। আশীর্বাদক ছিলেন শীতলপুর লোকনাথ সেবাশ্রমের অধ্যক্ষ গোবিন্দ ব্রহ্মচারী। স্বাগত বক্তব্য দেন, কেন্দ্রীয় রথযাত্রা উৎসব উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিধান ধর ও অর্থ সম্পাদক সুজিত হাজারী। অ্যাড. সুজন কান্তি দে’র সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন অধ্যাপক প্রণব মিত্র চৌধুরী, স্থপতি প্রণত মিত্র চৌধুরী, যোগেশ্বর চৌধুরী, উত্তম কুমার চক্রবর্তী, সৌরভ প্রিয় পাল, ডা. মনোজ চৌধুরী, কৃষ্ণ কর্মকার, রঞ্জন প্রসাদ দাশগুপ্ত, শান্তময় দাশ, সজল চৌধুরী, চন্দ্রনাথ পাল, ডা. বিবরণ দাশ, প্রদর্শন দেবনাথ, অনুপম দেবনাথ পাভেল প্রমুখ। এছাড়া বিভিন্ন মঠ–মন্দিরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা বক্তব্য দেন। এসময় অতিথিদের কেন্দ্রীয় রথযাত্রা উৎসব উদ্যাপন কমিটির পক্ষ থেকে সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়। মদনমোহন নরসিংহ গোপাল জীও’র মন্দির থেকে ঢোলক বাদ্য, মঙ্গল শঙ্খ ও উলুধ্বনি দিয়ে শ্রীজগন্নাথ–সুভদ্রা ও বলভদ্র দেবকে রথারোহণ করানো হয়। পরে বেলুন উড়িয়ে ও রথের রশি টেনে রথপরিক্রমা শুরু করেন তুলসীধামের মোহন্ত এবং অতিথিরা। শোভাযাত্রাটি নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এদিকে তুলসীধামে রথযাত্রা উপলক্ষে দিনব্যাপী আয়োজন করা হয় নামযজ্ঞ, মদনমোহন পূজা, জগন্নাথ–সুভদ্রা–বলভদ্রের পূজা, বিতরণ করা হয় মহাপ্রসাদ।
আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটি : আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির উদ্যোগে গতকাল শুক্রবার নন্দনকানন শ্রীশ্রী রাধামাধব মন্দির ও গৌর–নিতাই আশ্রম প্রাঙ্গণে জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উৎসবে প্রধান অতিথি ছিলেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। মহান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রামে নিযুক্ত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার ডা. রাজীব রঞ্জন। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি দীপক পালিত ও অধ্যাপক জিনবোধি ভিক্ষু। সভাপতিত্ব ও পৌরাহিত্য করেন নন্দনকানন আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ মন্দিরের অধ্যক্ষ পণ্ডিত গদাধর দাস ব্রহ্মচারী। স্বাগত বক্তব্য দেন তারণ নিত্যানন্দ দাস ব্রহ্মচারী। উপস্থিত ছিলেন অকিঞ্চন গৌর দাস ব্রহ্মচারী, মুকুন্দ ভক্তি দাস ব্রহ্মচারী, সৌরভ প্রিয় পাল, তমাল ধর, সুবল সখা প্রেম দাস ব্রহ্মচারী, শচী দুলাল প্রেম সাগর দাস ব্রহ্মচারী, অপূর্ব মনোহর দাস ব্রহ্মচারী, প্রাণকৃষ্ণ দাস, অজিত নরোত্তম দাস, রণবীর মাধব দাস, সদগতি বৈষ্ণব দাস, জগদানন্দ কৃষ্ণ দাস প্রমুখ। সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন এই সময় বলেন, চট্টগ্রাম ধর্মীয় সমপ্রীতির শহর। এই শহরে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান একসঙ্গে বসবাস করেন। এখানে কোনো বিভেদ নেই। এই ঐক্য ধরে রেখে চট্টগ্রামকে একটি গ্রিন ও ক্লিন সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে সবার সহযোগিতা চাই।
ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার ডা. রাজীব রঞ্জন রথযাত্রা উপলক্ষে সবাইকে শুভেচ্ছা জানান। পরে বেলুন উড়িয়ে মেয়র এবং ভারতীয় সহকারী হাই কমিশনার রথযাত্রার উদ্বোধন করেন। নন্দনকানন থেকে রথটি বৌদ্ধমন্দির থেকে চেরাগি পাহাড় হয়ে আন্দরকিল্লা, লালদীঘি ও নিউমার্কেট হয়ে নন্দনকাননে নেওয়া হয়।
গোলপাহাড় কালী মন্দির : নগরীর ও আর নিজাম রোডস্থ গোলপাহাড় মহাশ্মশান ও মন্দির পরিচালনা পরিষদের উদ্যোগে জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উৎসব দু’দিনব্যাপী বিভিন্ন মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানমালার মধ্যদিয়ে গতকাল শুক্রবার অনুষ্ঠিত হয়। রাধাকৃষ্ণ মন্দির থেকে ঢোলক বাদ্য, মঙ্গল শঙ্খ ও উলুধ্বনি দিয়ে শ্রীজগন্নাথ–সুভদ্রা ও বলভদ্র দেবকে নতুন সুসজ্জিত রথে আরোহণ করানো হয়। রথ পরিক্রমার উদ্বোধন করেন হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টী দীপক কুমার পালিত। বিশেষ অতিথি ছিলেন রিংকু শর্মা। দোদুল কুমার দত্তের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন, বিশ্বনাথ দাশ বিশু। রথ পরিক্রমা নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে রাধাকৃষ্ণ মন্দিরে শেষ হয়।