আমার মনে হয় একমাত্র পাগল ব্যতীত সকলেই ভালোবাসার মতো সম্মানের কাণ্ডারী। এটির লোভে বা প্রেমে পড়ে না এমন মানুষ এ পৃথিবীতে আছে বলে আমার মনে হয় না। সম্মান পাওয়ার জন্য বিশ্বের প্রায় সকলেই বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে থাকে। তবে মিথ্যা কৌশলে পাওয়া সম্মান কখনও চিরস্থায়ী হয় না, যে কোন সময়ে তা ধিক্কার জানিয়ে বিদায় নেয়। তখন মনে হয়, এমন সম্মান পাওয়ার চেয়ে না পাওয়াই তার জন্য কল্যাণকর ছিল। কারণ ক্ষমতা–পদ–পদবী–অর্থ ইত্যাদির দাপটে মুখে পাওয়া সম্মান হতে একবার ছিটকে পড়লে তার প্রতি মানুষের ঘৃণা দেখে মনে হয় এমন সম্মান কারো জীবনেই কাম্য হওয়া উচিত নয়। আমাদের দেশে এমন ব্যক্তিগণ ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পরে তাকে বিভিন্ন ব্যক্তি বা সংগঠন কর্তৃক সংবর্ধনা দেয়া হয়। তবে হাস্যকর হলেও সত্যি যে, এমন অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য সংবর্ধিত ব্যক্তি কর্তৃক অর্থ বা বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেয়ার খবরও অহরহ শোনা যায়। এছাড়া অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন ধরনের সম্মানজনক পদক বা অন্যের গবেষণার ফসল চুরি করে অথবা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে সম্মানজনক ডিগ্রী সংগ্রহ করার বা অন্যের লেখা চুরি করে তা নিজের নামে চালিয়ে দেয়াসহ ইত্যাদি ধরনের খবরও প্রিন্ট মিডিয়ার কল্যাণে আমরা শোনে থাকি। তবে এ সব ভুয়া কার্যক্রম ফাঁস হয়ে গেলে তাদের প্রতি সচেতন জনগণ কর্তৃক ছোঁড়ে দেয়া মন্দ কথা শোনতেও অনেক সময়ে লজ্জাষ্কর মর্মে মনে হয়।
আমরা সকলেই বুঝি সম্মান অমূল্য সম্পদ এবং এর বিকল্প নেই। তবে এটি বিশেষ করে সততার বিনিময়ে মানুষকে ভালোবাসার মাধ্যমে অর্জন করতে হয়, জোর করে আদায়যোগ্য নয়। এটি অনেকেই বুঝে না বা বুঝলেও নিজ যোগ্যতায় তা আদায় করতে ব্যর্থ হয়ে তার জন্য পাগলপ্রায় হয়ে যায়। তৎসময়ে এরা সম্মানের জন্য এতোই নীচে নেমে যায় যে, বিশেষ করে এলাকাভিত্তিক অনুষ্ঠানের ব্যানারে নিজের নাম অতিথির তালিকায় না দেখে সে ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে বা যে কোন উপায়ে সে অনুষ্ঠান পণ্ড করার মতো নির্লজ্জ মানুষ হিসেবে সমাজে পরিচিতি লাভ করে। এক বাক্যে বলা যায় যে, অনেকেই নিজ গুণে সম্মানের অধিকারী হতে না পারলে তা জোর করে আদায় করার কূটকৌশলে ব্যস্ত থাকে, যার পরিণতি মাঝে মধ্যে ভয়াবহ রূপ নেয়।
উদাহরণ স্বরূপ বলতে দ্বিধা নেই যে, আমার এলাকা নগরীর ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু তেমন অর্থ বিত্তের মালিক না হলেও সর্বত্র তাঁর সম্মান ছিল। এর একমাত্র কারণ হলো তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার না করে সৎ পথে থেকে অন্যের সমস্যাকে নিজের মনে করে তা সমাধানে আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন। তিনি সর্বমোট ৭ বার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন এবং প্রতি বারই তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সঙ্গে তাঁর প্রাপ্ত ভোটের ব্যাপক ব্যবধান থাকতো। আন্তরিকতার মাধ্যমে এলাকার জনগণের মন জয় করতে সক্ষম হয়ে ব্যাপক সম্মানের অধিকারী হওয়ায় অনেক ক্ষমতাধর ও অর্থ বৈভবের মালিকও তাঁর কাছে পরাজিত হতে বাধ্য হয়েছেন। তাই আমাদের মনে প্রাণে অন্তরে বিশ্বাস করতে হবে যে, সম্মান ক্ষমতা–পদ–পদবী বা অর্থ বৈভব দিয়ে জোরপূর্বক আদায়যোগ্য নয়, তা নিজ কর্মগুণে সকলের অন্তর জয় করার মাধ্যমে অর্জন করতে হয়।