নগরের পাহাড়তলী রেলওয়ে জাদুঘর সংলগ্ন শাহজাহান মাঠে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) অর্থায়নে নির্মাণ করা একটি পার্কের নাম পরিবর্তন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চট্টগ্রামের প্রথম শহীদ ওয়াসিমের নামে করার ঘোষণা দিয়েছেন মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে পার্কটি পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এ ঘোষণা দেন।
জানা গেছে, নগর উন্নয়নে অবকাঠামোগত উন্নয়নে ১২০ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের আওতায় প্রায় দুই একর জায়গায় ৩ কোটি ৬০ লাখ টাকায় পার্কটি নির্মাণ করে চসিক। ২০১৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর পার্কটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তখন পার্কটির নাম দেওয়া হয় ‘শেখ রাসেল শিশুপার্ক’। নাম পরিবর্তনের ফলে পার্কটির নাম হবে ‘শহীদ ওয়াসিম পার্ক’।
এ বিষয়ে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন আজাদীকে বলেন, ৫ আগস্টের পর সেন্টিমেন্টের মুখে পার্কটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরিদর্শনে গিয়ে সেটি খুলে দিতে নির্দেশনা দিয়েছি। একইসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চট্টগ্রামের প্রথম শহীদ ওয়াসিমের নামে নামকরণ করেছি পার্কটির। তিনি বলেন, আগ্রাবাদ কর্ণফুলী শিশুপার্কও পরিদর্শন করেছি। সেটাও বন্ধ রয়েছে। এ পার্কটিও খুলে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছি। সেখানে পাশেই একটি খোলা মাঠে শিশু–কিশোরদের খেলার জন্য উন্মুক্ত রাখার নির্দেশনা দিই। এদিকে গতকাল পার্ক পরিদর্শনে গিয়ে মেয়র উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, গত ১৬ বছর যারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন করতে গিয়ে এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আমাদের অনেকে শহীদ হয়েছে। আমরা এখনো পর্যন্ত তাদের কারো নামে কোনো পার্ক দিতে পারেনি। তাই আমরা চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে চট্টগ্রামের প্রথম শাহাদাত বরণকারী শহীদ ওয়াসিম আকরামের নামে এ পার্কের নামকরণের ঘোষণা দিচ্ছি। আজ থেকে এই পার্কের নাম হবে শহীদ ওয়াসিম পার্ক।
তিনি বলেন, এ পার্ক সবার জন্য উন্মুক্ত করতে চাই। পার্কটি প্রায় সময় বন্ধ থাকে এবং ময়লা–আবর্জনার জন্য লোকজন কম আসে–এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমি পার্কটি পরিদর্শন করতে আসলাম। স্থানীয়দের সাথে কথা বলেও অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। পার্কটি এখন থেকে উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে এবং পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন থাকবে। পার্কের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কাজ করা হবে। সবাই এখানে আসতে পারবে, হাঁটতে–ঘুরতে পারবে।
পার্কটি নগরবাসীর সুস্থ বিনোদনের খোরাক যোগাবে জানিয়ে শাহাদাত বলেন, চট্টগ্রাম পর্যটন সম্ভাবনাময় ট্যুরিজম সিটি। তবে ঠিকমতো ফোকাস করা যাচ্ছে না বিধায় পর্যটন খাতে আমরা এগুতে পারছি না। আমাদের ছেলেরা আসলে ঘুরতে পারে না। আমাদের এখানে ওয়াকওয়ে নাই। এ কারণে পার্ক থাকার পরও কেউ ভালোভাবে ঘুরতে পারছে না। এখানে পাহাড়ি একটা ভাব আছে, বসার জায়গা আছে। এ পার্কটিকে ভালো পর্যায়ে এনে আমরা চাই সবুজের সমারোহ গড়তে। আমি অন্যান্য পার্কেও যাব। নগরবাসীর সুস্থ বিনোদনের সুযোগ বাড়াব।
পাহাড়তলীর পার্কটি পরিদর্শন শেষে মেয়র আগ্রাবাদের কর্ণফুলী শিশুপার্ক পরিদর্শন করেন। এ সময় পার্কটি বন্ধ দেখতে পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। পার্কটি দ্রুত খুলে দেওয়ার জন্য প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ এবং পার্কের পাশেই আবদ্ধ একটি মাঠকে শিশুদের খেলার স্থানে রূপান্তরের ঘোষণা দেন মেয়র।
এ সময় অতি বাণিজ্যিকীকরণের ফলে চট্টগ্রামের সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছে জানিয়ে মেয়র বলেন, গত এক দশকে মানুষের সুস্থ বিনোদনের স্থানগুলোতে অতি বাণিজ্যিকীকরণ হয়েছে। যেমন বিপ্লব উদ্যানে দৃষ্টিনন্দন একটা পার্ক ছিল। নয়নাভিরাম সৌন্দর্য সেখানে ছিল। কিন্তু সেটা কমপ্লিটলি ধ্বংস করে দিয়েছে একটা মাফিয়া চক্র। সেখানে দোকান তো আগেই করেছে, নতুনভাবে ওই পার্কটির মধ্যে এমনভাবে ডিজাইন করেছে, ওখানে আরো ২০–২৫টা দোকান দেওয়ার পাঁয়তারা করেছে। সেদিন আমরা সেটা ভিজিট করে যে স্ট্রাকচার ছিল সেটাকে ভেঙে দিয়েছি এবং সেখানে ডিক্লেয়ার করেছি, এটা একটা নয়নাভিরাম গ্রিন পার্ক হবে। যেহেতু শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এ উদ্যান থেকে স্বাধীনতার সূচনা করেছিলেন, সেহেতু ওই ঐতিহাসিক পটভূমির কথাগুলো সেখানে লেখা থাকবে। এতে নতুন প্রজন্ম বিপ্লব কেন হয়েছে এবং মুক্তিযুদ্ধের যে প্রকৃত ইতিহাস তা জানতে পারবে। তিনি বলেন, আগ্রাবাদ ডেবাকেও দখলদারদের হাত থেকে মুক্ত করে জনগণের সুস্থ বিনোদনের জন্য উন্মুক্ত করার পরিকল্পনা আছে আমার।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, সচিব মো. আশরাফুল আমিন, প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবুল কাশেম ও নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার জাহান।