নগরের উত্তর ও উত্তর মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ডে ৩৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে তিনটি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এর মধ্যে উত্তর হালিশহর ওয়ার্ডে ১৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ৭ তলা বিশিষ্ট হালিশহর আলহাজ্ব মহব্বত আলী সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন এবং ১৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ৭ তলা কিচেন মার্কেট কাম কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ প্রকল্প রযেছে। এছাড়া উত্তম মধ্যম হালিশহরে গৃহীত প্রকল্পটি হচ্ছে ৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকায় জরিনা মফজল কলেজ সংলগ্ন ২ দশমিক ৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রোড ড্রেইনসহ উন্নয়ন। গতকাল প্রকল্পগুলোর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা কমান্ডার লতিফুল হক কাজমী, প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবুল কাশেম, শিক্ষা কর্মকর্তা মোছাম্মৎ রাশেদা আক্তার, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জিল্লুর রহমান, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন ও নির্বাহী প্রকৌশলী আশিকুল ইসলাম।
কিচেন মার্কেট কাম কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনকালে ডা. শাহাদাত বলেন, যেহেতু কোনো কমিউনিটি সেন্টার বা বড় মার্কেট এই এলাকায় ছিল না সেহেতু আমরা চমৎকার একটা মার্কেট এই এলাকায় করে দিচ্ছি যাতে করে এলাকাবাসীর সুবিধা হয়। এই আধুনিক বিল্ডিং এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে, নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি করবে।
এ সময় বৃষ্টির পানির ব্যবহারের আহ্বান জানিয়ে মেয়র বলেন, রেইনওয়াটার হারভেস্ট সম্বন্ধে আমি আপনাদের কিছু বলতে চাই। রেনওয়াটার হারভেস্টিং মানে বৃষ্টির পানি যেটা পড়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় সেটাকে আমরা একটা বৈজ্ঞানিক উপায়ে ধারণ করে এই পানিটা রিসাইক্লিং করে ব্যবহার করতে পারি।
তিনি বলেন, পানির কিন্তু সংকট হবে ভবিষ্যতে। এজন্য ওয়াসার পানিকে আমরা নষ্ট করব না। পানি আমাদেরকে সেভ করতে হবে। পানির অপর নাম জীবন। আজকে আমরা হয়তো মনে করছি যে পানি তো আছে দেদারসে খরচ করি। একটা স্টেজে পানির অভাব দেখা দিবে। এখন একটা নলকূপ স্থাপন করার সময় দেখবেন অনেক গভীরে চলে যেতে হচ্ছে। এটা হয়তো গুড সাইন না। কাজেই পানির যত নীচে যাবে তত মনে করবেন যে ভূগর্ভে পানি কমে যাচ্ছে। ভূগর্ভে পানি কমে যাওয়া এটা রিস্কি। এজন্য বিল্ডিং নির্মাণের ক্ষেত্রে যে বিল্ডিং কোডগুলো আছে সেগুলো মেনে চলবেন। আপনারা নিয়ম মেনে চললে দেখবেন যে জলাবদ্ধতা হবে না। নেঙট জেনারেশনের জন্য আপনাদের চিন্তা করতে হবে। শুধু এখন আপনারা সুখী থাকবেন বউ বাচ্চা নিয়ে এটা চিন্তা করবেন না।
আলহাজ্ব মহব্বত আলী সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনকালে নৈতিক শিক্ষার উপর জোরারোপ করে মেয়র বলেন, আমরা যদি নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত না হই তাহলে সমাজকে আমরা কিছু দিতে পারবো না। পড়াশোনা করে আজকে আমি ডাক্তার হয়েছি, সব ঠিক আছে। কিন্তু ডাক্তার যখন মানবিক হতে না পারবে, একটা গরীব রোগীকে চিকিৎসা বিনামূল্যে দিতে না পারবে তখন এই শিক্ষার কোন দাম নেই। একজন শিক্ষক একটা মেধাবী গরীব ছাত্রকে বিনামূল্যে পড়াতে না পারলে উনার শিক্ষার কোন দাম নেই। এভাবে প্রতিটি পেশাতে আমাদেরকে মানবিক যদি হতে হয়, আমাদেরকে যদি সামাজিক হতে হয়, আমাদেরকে যদি সমাজের সত্যিকার দায়িত্ব পালন করতে হয় তাহলে আমাদেরকে অবশ্যই নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে।
শিক্ষাখাতে দেশ পিছিয়ে গেছে দাবি করে মেয়র বলেন, গত ১৬টি বছর আমরা দেখেছি শিক্ষার নামে বিভিন্ন ধরনের নৈরাজ্য হয়েছে। চাঁদাবাজি হয়েছে। আমার ছাত্র ছাত্রী ভাই বোনদের বইয়ে বানোয়াট ইতিহাস পড়ানো হয়েছে। এখানে শিক্ষক–শিক্ষিকা যারা আছেন মনে রাখবেন যে, বিগত সরকারের সময় মাদকাশক্তিতে অনেক ছেলে নষ্ট হয়ে গেছে। অনেকে বিভিন্নভাবে খারাপ ছেলের সংস্পর্শে এসে খারাপ হয়ে গেছে। কিশোর গ্যাং কালচার তৈর হয়েছে ওই সরকারের আমলে। আপনাদেরকে আমাদের সন্তানদেরকে বাঁচাতে হবে। তাদেরকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে খেয়াল রাখবেন। তাদের নখ পরিষ্কার আছে কিনা, তাদের চুল ঠিক আছে কিনা, হাইজিন মেন্টেন করছে কি না ছাত্ররা সব চেক করা আপনাদের দায়িত্ব। তাদেরকে সুস্থ নাগরিক হিসেবে গড়তে হবে আপনাদের।