আবুল হাশিম(১৯০৫–১৯৭৪)। ভারত উপমহাদেশের একজন মুসলিম জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদ ও ইসলামি চিন্তাবিদ। তিনি বাংলাদেশের বামপন্থি বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দীন উমরের পিতা। আবুল হাশিম ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ শে জানুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের কাশিয়াড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আবুল কাশেম। ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে বর্ধমান মিউনিসিপাল স্কুল থেকে আবুল হাশিম ম্যাট্রিকুলেশন, কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে আইএ এবং ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দের বিএ পাস করেন। ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে বিএল উপাধি লাভ করে বর্ধমান আদালতে আইন ব্যবসায় শুরু করেন। আইনজীবী হিসেবে তাঁর যথেষ্ট সুখ্যাতি ছিল। ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গীয় বিধান সভার নির্বাচনে নির্দলীয় প্রার্থী হিসেবে সদস্যপদ লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি মুসলিম লীগের রাজনীতির সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। এবং তাঁর নেতৃত্বে তরুনদের নিয়ে একটি বামপন্থী গ্রুপের সৃষ্টি করেন। ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে মুসলিম লীগের লাহোর প্রস্তাবে পাকিস্তানকে একটি অখণ্ড রাষ্ট্র হিসেবে দাবি না করে ভারতের উত্তর পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের জোর দাবি করেন। সেই হিসেবে বাংলায় একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হবার কথা। কিন্তু ১৯৪৬–এর নির্বাচনে বিজয়ের পর ১৯৪৬ এর ৯ এপ্রিল দিকে দিল্লিতে আহূত মুসলিম লীগের নবনির্বাচিত বিধায়কদের সভায় মুহম্মদ আলী জিন্নাহ্র পরামর্শে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তান প্রস্তাব পেশ করেন। জিন্নাহর এই প্রস্তাব উত্থাপনের পর বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশিম খুব দৃঢ়ভাবে এর বিরোধিতা করেন। তিনি বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের কারণে কারাবরণ করেন। বঙ্গবন্ধুর ছয় দফাসহ প্রগতিশীল বিভিন্ন আন্দোলন–সংগ্রামের সাথে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন। তাঁর রচিত গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য: ‘দ্য ক্রিড অব ইসলাম’, ‘অ্যাজ আই সি ইট’, ‘ইন্টিগ্রেশন অব পাকিস্তান’, ‘ইন রেট্রোসপেকশন’, ‘রব্বানী দৃষ্টিতে’ ইত্যাদি। ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ৪ ঠা অক্টোবর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।