সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ ৩৪ জনকে আসামি করে নগরীর চান্দগাঁও থানায় একটি হত্যা মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আশেকানে আউলিয়া ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী তানভীর আহমেদ ছিদ্দিকী নিহতের ঘটনায় এই মামলা দায়ের করা হয়। শুক্রবার রাতে নিহত তানভীরের চাচা মোহাম্মদ পারভেজ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, তানভীর আহমেদ ছিদ্দিকী নিহত হওয়ার ঘটনায় রুজুকৃত মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ছাড়াও নগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের তিনজন কাউন্সিলরসহ ৩৪ জনের নাম উল্লেখ করে এজাহার দায়ের করা হয়। এতে আরও ৪০ থেকে ৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ১৮ জুলাই নগরীর বহদ্দারহাট এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগ–যুবলীগের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান আশেকানে ডিগ্রি কলেজের ছাত্র তানভীর আহমেদ (১৯)। তার মাথায় গুলি লাগে। সংঘর্ষ চলাকালে স্থানীয় কাউন্সিলর এসরারুল হকের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ–যুবলীগের একাধিক নেতাকর্মীকে অস্ত্র হাতে গুলি করতে দেখা যায়। উল্লেখ্য, ওইদিন তানভীর ছাড়াও গুলিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হৃদয় চন্দ্র তরুয়া ও দোকানকর্মী সাইমন নিহত হন।
মামলায় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা বাবর আলী, মহানগর আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মশিউর
রহমান চৌধুরী, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ এসরারুল হক, জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন ও চকবাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নুর মোস্তফা টিনু, মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তারেক বিন ওসমান শরীফ, মহেশখালীর কালারমারছড়ার বাসিন্দা নোমান শরীফ, নগর স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মহিউদ্দীন ফরহাদ, আওয়ামী লীগ কর্মী মোহাম্মদ জালাল প্রকাশ ড্রিল জালাল, যুবলীগ কর্মী মোহাম্মদ ফরিদ, চট্টগ্রাম সিটি কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি মোহাম্মদ তাহসীন, যুবলীগ কর্মী এইচ এম মিঠু, মহেশকালীর কালারমারছড়ার বাসিন্দা নুরুল আলম প্রকাশ কালা বদা, আরিফ ইফতেকার রশিদ, মহেশখালীর ধনঘাটার বাসিন্দা ওসমান গণি, চান্দগাঁও থানা স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা ইলিয়াছ বাবুল, মহেশখালীর আঁধারঘোনা এলাকার বাসিন্দা মাইনুল ইসলাম শরীফ, চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনির উদ্দিন, নগর যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ ফিরোজ, মহেশখালীর শাহ ঘোনা এলাকার বাসিন্দা জাফর আলম, নগর স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মোহাম্মদ দেলোয়ার, চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সহসভাপতি মোহাম্মদ জিয়াউদ্দীন আরমান, মহেশখালীর ইউনুসখালী এলাকার বাসিন্দা মনছুর আবেদীন, নগর যুবলীগ কর্মী মোহাম্মদ জাফর, মহেশখালীর কালারমারছড়ার বাসিন্দা আবুল হাসনাত, শাহঘোনা এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ সুমন উদ্দীন, চট্টগ্রাম সিটি কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হোসাইন অভি, বাঁশখালীর যুবলীগ নেতা মোহাম্মদ শোয়াইব, বাঁশখালী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজান সিকদার, নগর আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান চৌধুরী, নগর যুবলীগ নেতা মাহবুব আলম, মোহাম্মদ কাইসারসহ ৩৪ জনের নামোল্লেখ করা হয়।
নিহত কলেজছাত্র তানভীর আহমেদ ছিদ্দিকী (১৯) কঙবাজারের মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া এলাকার নয়াপাড়ার বাদশা মিয়ার পুত্র। উল্লেখ্য, ওইদিন গুলিবিদ্ধ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হৃদয় চন্দ্র তরুয়া (২৩) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং বহদ্দারহাট কাঁচাবাজার মুদির দোকানের কর্মচারী সাইমন প্রকাশ মাহিন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
প্রসঙ্গত, ইতোমধ্যে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি হত্যা মামলা হয়েছে।