সাগরে মাছধরার উপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা আজ রোববার মধ্যরাত বারোটা এক মিনিট (২০ মে) থেকে শুরু হচ্ছে। ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের প্রজননকাল উপলক্ষে বঙ্গোপসাগর ও নদী মোহনায় এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত। ফলে আগামী ২ মাসের বেশি সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সামুদ্রিক মাছ আহরণ।
ট্রলার মালিকরা জানান, সাগরে মাছ ধরার উপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার কারণে ইতোমধ্যে কক্সবাজারের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ মাছধরার নৌকা বঙ্গোপসাগর থেকে ঘাটে ফিরে এসেছে। বাকী ট্রলারগুলো আজ রোববার সন্ধ্যার মধ্যে ঘাটে ফিরে আসবে। তবে গতকাল শনিবারই কঙবাজার থেকে শেষবারের মতো মাছ সরবরাহ করা হয়েছে রাজধানী ঢাকাসহ জেলার বাইরে। আজ রোববার মধ্যরাতে নিষেধাজ্ঞা শুরুর আগে যেসব ট্রলার মাছ ধরে আনবে তা স্থানীয় বাজারেই বিক্রি হবে।
গতকাল শনিবার সাগর থেকে শতশত ট্রলার ঘাটে ফিরে এলেও শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারীঘাটে ইলিশ এসেছে মাত্র ২৬ মেট্রিক টনের মতো। আর আগেরদিন শুক্রবার ২৮ মেট্রিক টন, বৃহস্পতিবার ২১ মেট্রিক টন এবং বুধবার ১০ মেট্রিক টন ইলিশ এসেছিল।
কক্সবাজার ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক মাস্টার মোস্তাক আহমদ বলেন, গত বছর অক্টোবরে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার পর থেকে আর আশানুরূপ ইলিশের দেখা মিলছে না বঙ্গোপসাগরে। তবে চলতি মাসের শুরুতে হালকা বৃষ্টিপাতের ফলে গত কয়েকদিন ধরে জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়ছে। আর সেই মুহুর্তে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার কারণে সাগরে মাছ না ধরেই ঘাটে ফিরে আসতে হচ্ছে। তিনি জানান, আজ মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার কারণে কঙবাজারের প্রায় ৭ হাজার ইঞ্জিন নৌকার মধ্যে প্রায় ৭০% নৌকা ঘাটে ফিরেছে। বাকী বোটগুলো রোববার সন্ধ্যার মধ্যেই ঘাটে ফিরে আসবে বলে তিনি আশা করছেন।
দরিয়ানগর বোট মালিক সমিতির সভাপতি নজির আলম বলেন, গত কয়েক মাসে সাগরে তেমন মাছ ধরা পড়েনি। ফলে অধিকাংশ নৌকাই ঘাটে নোঙর করা ছিল। তবে চলতি মাসের শুরুতে হালকা বৃষ্টিপাতের পর ইলিশের আশায় প্রায় সকল জেলেই এখন সাগরে মাছ ধরছে। শেষবারের মতো আজ ১৯ মে (আজ) বিকাল পর্যন্ত এই বোটগুলো মাছ ধরবে। যেহেতু এই বোটের মাছগুলো স্থানীয় বাজারেই বেশি বিক্রি হয়।
কঙবাজার শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিশারীঘাট মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির পরিচালক জুলফিকার আলী বলেন, রোববার মধ্যরাত (২০ মে) থেকে মাছধরা ও পরিবহনের উপর নিষেধাজ্ঞা শুরু হলেও ১৮ মের পর ফিশারীঘাট থেকে দেশের অন্যত্র আর মাছ সরবরাহ করা হবে না। আবার ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে সাগরে মাছ ধরা শুরু হলেও সেই মাছ ধরে অবতরণ কেন্দ্রে আসা শুরু হবে আরো প্রায় এক সপ্তাহ পর। সে হিসাবে আগামী আড়াই মাসের জন্য ‘মৎস্যশূন্য’ খা খা প্রান্তরে পরিণত হতে যাচ্ছে শহরের প্রধান মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র।
সাগরে মাছধরা বন্ধ থাকার কারণে শহরের বরফকলগুলোও আগামী দুই মাসাধিককাল সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি মৎস্য ব্যবসায়ী ও শ্রমিকসহ জেলার প্রায় এক লাখ লোক সাময়িক বেকার হয়ে যাচ্ছে বলে জানান ফিশারীঘাট মৎস্য ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জয়নাল আবেদীন। ট্রলার মালিক সমিতি জানায়, কঙবাজার বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরা পেশায় নিয়োজিত রয়েছে প্রায় ১ লাখ জেলে–শ্রমিক।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বদরুজ্জামান বলেন, ইলিশসহ অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের প্রজননকাল উপলক্ষে রোববার মধ্যরাত ১২টা থেকে বঙ্গোপসাগর ও নদী মোহনায় মাছ ধরার উপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হচ্ছে। এই নিষেধাজ্ঞা শেষ হবে আগামী ২৩ জুলাই। এই সময়ে দেশের সামুদ্রিক জলসীমানায় সব ধরনের মৎস্য আহরণ, পরিবহন ও সংরক্ষণ নিষিদ্ধ করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। মাছের প্রজনন, উৎপাদন, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তিনি বলেন, সাগরে ৬৫ দিন মৎস্য আহরণ বন্ধ রাখতে প্রচার–প্রচারণা চালানো হচ্ছে। কেউ এ সময়ে সাগরে গেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, সাগরে মাছের প্রাচুর্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার ২০১৯ সাল থেকে প্রথমবারের মতো ছোট নৌকাগুলোকেও ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞার আওতায় নিয়ে আসে। এরআগে ২০১৫ সাল থেকে কেবল বড় বাণিজ্যিক ট্রলারগুলোর জন্যই এ নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল। তবে ইলিশের প্রজননকাল উপলক্ষে ছোট ট্রলারগুলোকে ২০১১ সাল থেকেই ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়, যেটি অক্টোবর মাসে এখনও কার্যকর রয়েছে।