নৌপথে মিয়ানমার থেকে টেকনাফ হয়ে চট্টগ্রামে পাচার হওয়ার প্রাক্কালে চকরিয়া থানা পুলিশ কর্তৃক উদ্ধার হওয়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইয়াবার চালানটির গন্তব্য এবং পাচারকারী দলে কারা ছিল তা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে জানিয়েছে একমাত্র গ্রেপ্তারকৃত আসামি মো. শাহজাহান (২২)।
প্রায় ৩৮ কোটি টাকামূল্যের কক্সবাজার জেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম সাড়ে ১২ লাখ পিস ইয়াবার এই চালানটির পরিবহনে নিয়োজিত শাহজাহান সম্প্রতি চকরিয়া উপজেলা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক এই জবানবন্দি দেয়। আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাহিদ হোসাইন জবানবন্দী রেকর্ড করেন।
আদালত সূত্র জানায়, জবানবন্দীতে শাহজাহান জানায়- ইয়াবার চালানটি মিয়ানমার থেকে নিয়ে আসে ইয়াবা কারবারে জড়িত ১২ জনের একটি দল। সেই দলের একজনের বাড়ি হচ্ছে ঈদগাঁও উপজেলায়। তার নাম মো. সোহেল। সেই সোহেলের মাছ ধরার নৌযানে করে ইয়াবার চালানটি প্রথমে আনা হয়। এর পরে সোহেলের নৌযান থেকে পাঁচটি ড্রামভর্তি করে এসব ইয়াবা তাঁর (শাহজাহান) নৌযানে তুলে দেওয়া হয়।
শাহজাহান বলেন, ২৮ এপ্রিল সকালে সোহেল তাকে খুটাখালীর লালঘোনা ব্রিজের নিচে খালে যাওয়ার জন্য বলে। নৌযান নিয়ে সেখানে যাওয়ার পর সোহেলের নৌযান থেকে খুটাখালী এলাকার সাজ্জাদ, মহেশখালীর আবু তাহেরসহ কয়েকজন পাঁচটি ড্রাম তার নৌযানে তুলে দেয়। তাকে বলা হয়- চট্টগ্রামের জাকির নামের এক ব্যক্তির চাচাতো ভাইয়ের কাছে এসব ড্রাম হস্তান্তর করতে হবে।
জবানবন্দীতে শাহজাহান আরও জানায়- তখন খালে পানি কম থাকায় নৌযানটি চালানো যাচ্ছিল না। এজন্য নৌযান ছাড়তে জোয়ারের অপেক্ষায় থাকতে হয়। কিন্তু পুলিশ যখন ইয়াবার ড্রামভর্তি নৌযানটি চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলতেছিল সেই মুহূর্তে একজনের সংকেত পেয়ে সে পালিয়ে যায়।
পুলিশ জানায়, গত ২৯ এপ্রিল দিবাগত গভীর রাতে চকরিয়া থানার পুলিশ চকরিয়া-মহেশখালী চ্যানেলের খুটাখালীর উপকূলে অভিযান চালিয়ে মাছ ধরার একটি নৌযান থেকে সাড়ে ১২ লাখ পিস ইয়াবার চালানটি জব্দ করে। এ সময় পাচারকারীরা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে পালিয়ে যায়।
জেলা পুলিশ জানায়- কক্সবাজার জেলায় জব্দকৃত দ্বিতীয় বৃহত্তম ইয়াবার চালান ছিল এটি। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উদ্ধার করা এই চালানে একসঙ্গে পাওয়া যায় ১২ লাখ ৫০ হাজার পিস ইয়াবা। দুঃসাহসিক অভিযানে এই চালান জব্দের ঘটনায় পুলিশ শাহজাহানকে প্রধান আসামি করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করে। অভিযানের সময় শাহজাহান পালাতে সক্ষম হলেও সম্প্রতি তাকে গ্রেপ্তার করা হয় টেকনাফ থেকে। এর পর শাহজাহান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। তার বাড়ি কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার পোকখালী গ্রামে। সে ওই গ্রামের বদিউল আলমের ছেলে।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, ইয়াবা কারবারের শক্তিশালী সিণ্ডিকেটের অন্যতম হোতা শাহজাহান। চালানটি সরাসরি চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনায় ছিল। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ এবং আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে শাহজাহান ইয়াবার চালানটির সঙ্গে জড়িত কয়েকজনের নাম প্রকাশ করেছে। সে বর্তমানে কক্সবাজার জেলা কারাগারে রয়েছে। চালানের অন্য হোতাদের গ্রেপ্তারের মিশনে রয়েছে পুলিশ।