এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের র্যাম্প নির্মাণের জন্য গাছ কাটার বিরুদ্ধে নগরবাসীর তীব্র বিরোধিতার মুখে প্রকল্পের ডিজাইন নিয়ে নতুন চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। র্যাম্পটি নির্মাণের জন্য তড়িঘড়ি না করে আরো পরীক্ষা–নিরীক্ষা করতে বলা হয়েছে। শহরের আইকনিক এই সড়ক থেকে র্যাম্প না তুলে লালখান বাজারের দিক থেকে র্যাম্প নির্মাণ করা যায় কিনা তাও পরীক্ষা–নিরীক্ষা করা হবে।
গতকাল চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বোর্ড সদস্য, নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি আশিক ইমরান, প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান, পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীরা সরেজমিনে পুরো এলাকা ঘুরে দেখেন। তারা বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে আরো গভীরভাবে চিন্তা ভাবনা ও পরীক্ষা–নিরীক্ষা করার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
সিডিএর পক্ষ থেকে প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মাহফুজুর রহমান জানান, গুরুত্বপূর্ণ র্যাম্পটি নির্মাণে ছোট এবং মাঝারি সাইজের ৪২টি গাছ কাটা পড়বে। কোনো শতবর্ষী বা বড় গাছ কাটা পড়বে না। দোতলা সড়কটির মাঝের খালি জায়গায় থাকা গাছগুলোর মধ্যে একেবারে নিচের লাইনের গাছগুলো কেটে র্যাম্প নির্মাণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটিও বড় গাছ প্রকল্পের জন্য কাটতে হবে না।
সিডিএর এই বক্তব্য মানতে নারাজ পরিবেশবাদীসহ নগরীর মানুষ। তারা বলছেন, কেবল গাছ নয়, দোতলা এই সড়কটি শহরের আইকনিক রোড। গাছ কাটার আওয়াজে এমন সুন্দর একটি জায়গা এবং রাস্তাটা যে নষ্ট হয়ে যাবে সেটি চাপা পড়ে যাচ্ছে। রাস্তাটি চট্টগ্রামের বড় সম্পদ মন্তব্য করে তারা বলেন, এই রাস্তা এবং এর প্রাকৃতিক শোভা রক্ষা করতেই হবে।
রাস্তা এবং গাছ রক্ষার জন্য চট্টগ্রামের মানুষের তীব্র প্রতিবাদ শুরু হওয়ায় নড়েচড়ে বসেছে সিডিএ। এরই প্রেক্ষিতে সিডিএর বোর্ড সদস্য স্থপতি আশিক ইমরান র্যাম্প নির্মাণে তড়িঘড়ি না করে প্রকল্পের ডিজাইন নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা করার নির্দেশনা প্রদান করেন। প্রকল্প পরিচালক এবং পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ডিজাইন পরিবর্তনের বিষয়টি মাথায় রাখার তাগাদা দেন তিনি। বিদ্যমান ডিজাইনে প্রস্তাবিত র্যাম্প আরো রাস্তার দিকে সরিয়ে আনলে বেশ কিছু গাছ রক্ষা পাবে। এছাড়া লালখান বাজার মোড়ের পরে গিয়ে র্যাম্প এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে তুলে দেওয়া হলে গাছ কিংবা রাস্তা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। মানুষের প্রয়োজন সারবে। স্টেডিয়াম মোড় হয়ে চিটাগাং ক্লাবের সামনে দিয়ে লালখান বাজার মোড় পার হয়ে যে কেউ র্যাম্প ব্যবহার করতে পারবে। সড়কের ওই জায়গাটিতে র্যাম্প তোলার মতো চওড়া জায়গা রয়েছে বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, দুটি অপশন নিয়ে চিন্তা করছি আমরা। এই দুটির যে কোনো একটি কাজে লাগাতে হবে। রেলওয়ে কলোনি এবং বঙ্গবন্ধু স্কুলের মাঝ বরাবর র্যাম্প নির্মাণ করা যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, রেলওয়ের উচ্চতা সংক্রান্ত একটি আইন আছে। এক্ষেত্রে সেটি অন্তরায় হবে।
দেওয়ানহাটের বিদ্যমান ওভারপাসের সাথে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে যুক্ত করা সম্ভব নয় মন্তব্য করে স্থপতি আশিক ইমরান বলেন, দেওয়ানহাট থেকে মনসুরাবাদের দিকে যাতায়াতে বছর কয়েক আগে নির্মিত ওভারপাসটি থেকে এক্সপ্রেসওয়ে বিশ ফুট উঁচুতে। একটির সাথে অন্যটিকে সংযুক্ত করা সম্ভব হবে না। সংযুক্ত করার যেসব কথা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার হচ্ছে সেগুলোর কোনোটির ভিত্তি নেই। তিনি বলেন, মনগড়াভাবে কিছু করার সুযোগ নেই। একমাত্র প্রকৌশলীরাই ব্যাপারটির সুষ্ঠু সমাধান দিতে পারবেন। দোতলা সড়ক এবং গাছ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ সিডিএ নেবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সরেজমিনে পরিদর্শনকালে আইএবি চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সম্পাদক স্থপতি ফজলে ইমরান চৌধুরী ও কোষাধ্যক্ষ স্থপতি বিজয় তালুকদার উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরী এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ হচ্ছে। ৪ হাজার ২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রকল্পটির মূল অবকাঠামো নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আগামী মাসে টাইগারপাস থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ফ্লাইওভার চালু করার কথা রয়েছে। এক্সপ্রেসওয়েতে মোট ১৫টি র্যাম্প রয়েছে। শহরের বিভিন্ন পয়েন্টের সাথে কানেক্টিভিটি বাড়ানোর জন্য র্যাম্প নির্মাণ করা হচ্ছে।
এর মধ্যে টাইগারপাস থেকে পলোগ্রাউন্ডমুখী র্যাম্প নির্মাণ আলোচনায় আসে। এই র্যাম্প নির্মিত হলে বেশ কিছু গাছ কাটা পড়ার পাশাপাশি শহরের আইকনিক একটি সড়ক ধ্বংস অভিযোগ করে নগরবাসী প্রতিবাদের ঝড় তোলে। ব্যাপক প্রতিবাদের মুখে র্যাম্প নিয়ে নতুন চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে।