দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ‘অমর একুশে বইমেলা–২০২৪’ আগামীকাল শুক্রবার নগরীর সিআরবি শিরীষতলা মাঠে শুরু হচ্ছে। ২৩ দিনব্যাপী এবারের মেলায় ঢাকা এবং চট্টগ্রামের ৯২ প্রকাশনা সংস্থার ১৫৫টি স্টল থাকবে। এর মধ্যে ডাবল স্টল ৭৮টি এবং সিঙ্গেল স্টল ৭৭টি। গতবার ১০৮ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ১৪০টি স্টল ছিল। অর্থাৎ এবার স্টল বাড়লেও প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমেছে। এবার মেলা প্রাঙ্গণের আয়তন ৪৩ হাজার বর্গফুট।
মেলার আয়োজক চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। তবে চট্টগ্রামের সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ, নাগরিক সমাজ, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাহিত্যিক, লেখক, বুদ্ধিজীবী এবং অন্যান্য শিল্প–সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতরাই সম্মিলিতভাবে এ মেলা বাস্তবায়ন করবেন। সম্মিলিত উদ্যোগে এবারের মেলাটি পঞ্চম আয়োজন। মেলা প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা ও ছুটির দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
মেলার সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে গতকাল বুধবার মেলা প্রাঙ্গণে সংবাদ সম্মেলন করেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। এসময় তিনি বলেন, মেলার সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আশা করছি এবারের বইমেলা অন্যান্যবারের চেয়ে অনেক বেশি লেখক–পাঠক সমাগমে ভরপুর হয়ে উঠবে। কারণ সিআরবি চট্টগ্রামের অপরূপ নৈসর্গিক একটি জায়গা। শত বছরের বৃক্ষরাজির ছায়ায় ঘেরা, ফুলের সুশোভিত এবং পাখির কুজনে ভরপুর নির্জন কোলাহলমুক্ত এমন একটি এলাকায় লেখক–পাঠকের মেলবন্ধনে বইমেলা সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে। প্রাণ ফিরে পাবে। নানা কারণে এবার সিআরবিতে আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
মেয়র জানান, প্রতিবারের মতো এবারও মেলাপ্রাঙ্গণে থাকছে দৃষ্টিনন্দন ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’, লেখক আড্ডাসহ নারী কর্নার এবং ওয়াইফাই জোন। এছাড়াও নিরাপত্তার স্বার্থে পুরো মেলাপ্রাঙ্গণ সিসিটিভি নেটওয়ার্কের আওতাভুক্ত থাকবে। মেলা কার্যালয়ে থাকবে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত আসন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মেলামঞ্চে ররীন্দ্র উৎসব, নজরুল উৎসব, লেখক সমাবেশ, যুব উৎসব, শিশু উৎসব, মুক্তিযুদ্ধ উৎসব, ছড়া উৎসব, কবিতা উৎসব, মাতৃভাষা দিবস ২১ ফেব্রুয়ারির আলোচনা, লোক উৎসব, তারুণ্য উৎসব, নারী উৎসব, বসন্ত উৎসব, মরমী উৎসব, আবৃত্তি উৎসব, নৃগোষ্ঠী উৎসব, পেশাজীবী সমাবেশ, কুইজ প্রতিযোগিতা, চাটগাঁ উৎসব, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী, বইমেলার সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে।
এছাড়া প্রতিদিন শিশু কিশোরদের চিত্রাংকন, রবীন্দ্র–নজরুল–লোক সঙ্গীত, সাধারণ নৃত্য, লোক নৃত্য, আবৃত্তি, উপস্থিত বক্তৃতা, দেশের গানের আয়োজন করা হবে। বইমেলায় চট্টগ্রামের সর্বস্তরের লেখক–পাঠক ও সৃজনশীল নাগরিকদের অংশগ্রহণে সংস্কৃতি ও মননের উৎকর্ষের পাশাপাশি ইতিহাস–ঐতিহ্য–সংস্কৃতির সম্মিলন ঘটবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন মেয়র।
তিনি বলেন, মেলার সার্বিক নিরাপত্তার জন্য বেসরকারি পেশাদার একটি নিরাপত্তা সংস্থা সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবে। সিএমপি কমিশনারকে মেলায় সার্বক্ষণিক পুলিশের সহযোগিতার জন্য পত্র দেয়া হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। সমগ্র মেলা সিসিটিভির আওতায় থাকবে। মেলার নিরাপত্তার জন্য সিরীষতলার পাশের রাস্তাটি বন্ধ রাখা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চসিক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, প্যানেল মেয়র গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, মেলার আহ্বায়ক কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু, আবদুস সালাম মাসুম, সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সভাপতি শাহাবুদ্দিন বাবু, সাবেক সভাপতি শাহাবুদ্দিন নিপু, কবি কামরুল হাসান বাদল ও চসিকের আবুল হাশেম।
এদিকে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার ৪৫টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান স্টল বরাদ্দ পেতে আবেদন করে। তারা পে–অর্ডারও দেয়। এর মধ্যে গতকাল সকালেও ১৪টি বরাদ্দ পায়নি। এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে মেয়রের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন। এ বিষয়ে মেলার আহ্বায়ক কাউন্সিলর ড. নিছার উদ্দিন আহমেদ মঞ্জু আজাদীকে বলেন, স্টল বৃদ্ধি করে সবাইকে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে।