ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শতকোটি টাকা মূল্যের প্রায় সাড় আট কেজি কোকেনসহ আফ্রিকার দেশ মালাউইর এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। নোমথানডাজো তোয়েরা সোকো নামের ৩৫ বছর বয়সী ওই নারী গত বুধবার রাতে কাতার এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে আফ্রিকা থেকে ঢাকায় পৌঁছান। বিমানবন্দর থেকে তার একটি আবাসিক হোটেলে ওঠার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশনস ও গোয়েন্দা) তানভীর মমতাজ জানান। খবর বিডিনিউজের।
অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশে কঠিন অবস্থায় আনা কোকেনের সবচেয়ে বড় চালান এটি। জব্দ করা আট কেজি ৩০০ গ্রাম কোকেনের দাম আনুমানিক ১০০ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৪ সালে সাড়ে তিন কেজি কোকেন উদ্ধার হয়েছিল কঠিন অবস্থায়। এছাড়া ২০১৫ সালে ১০৭টি ড্রামে সূর্যমুখী তেলের সঙ্গে মিশিয়ে আনা কোকেনের একটি চালান ধরা পড়ে চট্টগ্রাম বন্দরে। এর মধ্যে একটি ড্রাম পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছিল, ১৮৫ কেজি সানফ্লাওয়ার তেলের এক–তৃতীয়াংশই তরল কোকেন।
শাহজালাল বিমানবন্দরে কোকেনের চালান জব্দের খবর জানাতে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে আসেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক তানভীর মমতাজ। তিনি বলেন, মাদকের একটি বড় চালান আসছে বলে খবর ছিল তাদের কাছে। সেজন্য তাদের গোয়েন্দা দল গত দুইদিন ধরে কাজ করছিল বিমানবন্দরে। এর অংশ হিসেবে বুধবার রাতে আফ্রিকা থেকে আসা কাতার এয়ারওয়েজের ফ্লাইটের যাত্রীদের ওপর নজর রাখা হয়। মালাউই’র ওই নাগরিককে সন্দেহ হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে তার হাতে থাকা একটি ফোল্ডারে ১ কেজি কোকেন পাওয়া যায়। এরপর তার লাগেজ তল্লাশি করা হয়, কিন্তু ভেতরে কিছু ছিল না। স্ক্যানেও কিছু ধরা পড়ছিল না। কিন্তু লাগেজের ওজন দেখে সন্দেহ হওয়ায় পরীক্ষা করে দেখা যায়, লাগেজের তলায় বিশেষ ব্যবস্থায় কার্বন পেপার দিয়ে মোড়ানো আছে সাত কেজি ৩০০ গ্রাম কোকেন।
নোমথানডাজো তোয়েরা সোকো এর আগেও জুতা ও পোশাক পণ্যের ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন। এবারও তিনি শুরুতে ব্যবসার কাজে ঢাকায় আসার কথা বলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এই কোকেন চোরাচালানের সঙ্গে বাংলাদেশের একজন এবং বিদেশি কয়েকজনের তথ্য পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে আরো তদন্ত চলছে। অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, ওই নারীর সাথে বাংলাদেশের একজন যোগাযোগ রক্ষা করছিলেন। ঢাকায় নেমে উত্তরায় একটি আবাসিক হোটেলে ওঠার কথা ছিল ওই নারীর। বাংলাদেশে একজন ওই হোটেল কক্ষ বুক করেছিলেন। ওই নারী গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে সেই ব্যক্তির ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
বাংলাদেশে মাদক হিসেবে কোকেনের ব্যবহার তুলনামূলকভাবে কম। বিভিন্ন সময়ে কোকেনের যেসব চালান বাংলাদেশে ধরা পড়েছে, সেগুলোর চালান অন্য কোনো দেশ ছিল বলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ধারণা। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, একটি আন্তর্জাতিক সিন্ডিকেটের দেশি ও বিদেশি কয়েকজন সদস্য বাংলাদেশকে ‘ট্রানজিট’ হিসেবে ব্যবহার করে কোকেন চোরাচালানের চেষ্টা করছে। গ্রেপ্তার নারীর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়েছে।