একসময় এই অঞ্চলে সরিষা চোখেই পড়তো না। এখন দিনে দিনে সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে যাচ্ছে দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ। সরিষা ফুলের হলুদ রাজ্যে মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত যেমন মাঠ, তেমনি বাম্পার ফলনের হাতছানিতে কৃষকের চোখেমুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের হাসি। যেন সরিষার হলুদ হাসিতে স্বপ্ন দেখছে কৃষক।
পর্যায়ক্রমে চলতি মৌসুমে ও মীরসরাই উপজেলায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে উন্নত জাতের সরিষা চাষ হয়েছে। বেড়ে ওঠা গাছ আর ফুল দেখে বেশি ফলনের স্বপ্ন দেখছেন উপজেলার কৃষকরা। গত কয়েক বছর স্থানীয় বাজারে উন্নত জাতের সরিষার দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা এবারও সরিষা চাষে বেশি আগ্রহী হয়ে পড়েছে। বিগত কয়েক বছরে সরিষায় কৃষকরা অভাবনীয় সাফল্যে অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছে। আবার আবহাওয়া অনুকূলে বলে লাভ ও হচ্ছে সকলের।
উপজেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলার জমি সরিষা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। চলতি মৌসুমে ১৬ টি ইউনিয়নে ১৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। যা গতবারের চেয়ে ১শ’ হেক্টর বেশি। গত মৌসুমে চাষ হয়েছিল ১২ হেক্টর জমিতে। কৃষকরা অধিকাংশ জমিতে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) বারি–১৪, বারি–৯, বিনা–৯/১০, সরিষা–১৫, সোনালি সরিষা (এসএস–৭৫) ও স্থানীয় টরি–৭ আবাদ করে। বিশেষ কওে উপজেলার জোরারগঞ্জ, হিঙ্গুলী, ওচমানপুর, হাইতকান্দি, ইছাখালী ও সাহেরখালী ইউনিয়নে বেশী পরিমাণ সরিষা চাষ হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বছরের পর বছর স্থানীয় জাত চাষ করে ফলন কম হওয়া ও উৎপাদনে সময় বেশি লাগার কারণে কৃষকরা সরিষা চাষ অনেকাংশে কমিয়ে দেয়। তবে চলতি মৌসুমের শুরুতে উপজেলা কৃষি বিভাগ ‘বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট’ উদ্ভাবিত বেশি ফলনশীল বারি–১৪ জাতের সরিষা চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে। এ জাতের সরিষা মাত্র ৭৫–৮০ দিনে ঘরে তোলা যায়। প্রতি হেক্টরে ফলন হয় প্রায় দেড় হাজার কেজি। সরিষা কেটে ওই জমিতে আবার বোরো আবাদ করা যায়। এতে কৃষি জমির সর্বাধিক ব্যবহার নিশ্চিত হয়।
উপজেলার হিঙ্গুলী গ্রামের সরিষা চাষি রশিদুল ইসলাম জানান, তিনি এ বছর ১০ কড়া জমিতে বারি–১৪ ও বিনা–৯/১০ জাতের সরিষার আবাদ করেছেন। মাত্র হাজার খানেক টাকা খরচ হয়েছে। সরিষা ভালো হয়েছে। তিনি আশা করছেন ১০ গুন লাভ হবে। উপজেলা কৃষি সুপারভাইজার কাজী নুরুল আলম জানান, কৃষকদের যথাযথ পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। বারি–১৪ সহ অন্যান্য সরিষা বপনের মাত্র ৭৫–৮০ দিনের মধ্যে এর ফলন পাওয়া যায়। এ সরিষা উঠিয়ে আবার বোরো আবাদ করতে পারেন বলে একে কৃষকরা ‘লাভের ফসল’ হিসেবে অভিহিত করে থাকেন।