হে কুমোর
মাটি ছানো, মাটি মাখো
করতল অঙ্গুলি ছোঁয়ায় গড়ে তোলো নিমেষেই
‘স্তন জঙ্ঘা উরু— ডমরুর উথাল পাথাল’
কিন্তু তাতে প্রাণ কই, হে কুমোর, সে–ই
ভাবি বসে আকাশ পাতাল
কী যে রাখো
চিরায়ুষ্মানের খাতায়
কাল প্রাতে বিসর্জন হয়ে গেলে মাটির প্রতিমা
হে কুমোর, তোমার দুঃখের সীমা পরিসীমা
মিলবে কোথায়
তোমার আঙুলে সেই জাদু যদি না–ই থাকে
যাতে হয় মৃৎকর্মে প্রাণের সঞ্চার
তোমার কিসের অহংকার
কোন্ বৃথা পদচিহ্ন রেখে যাও
জীবনের বাঁকে বাঁকে
বুলবুল যেভাবে বুকের রক্ত দিয়ে
রঙ আনে তুষার গোলাপে
সেভাবেই ফোটে প্রাণ কখনোবা
অসংলগ্ন কবির প্রলাপে
হে কুমোর, তোমার আঙুলে করো
প্রাণদ বিদ্যুৎ সঞ্চারিত
অহল্যা মৃত্তিকা হোক তোমার স্পর্শে শিহরিত
তোমার প্রতিমা হোক অবারিত প্রাণের প্রতীম
ত্বকে তার সবুজের আভা, চুলে হিম
চোখ তুলে একবার তাকালে
সে চাওয়া মুদ্রিত হয়ে যাবে মহাকালে
যা বলতে চাও
যা বলতে চাও তুমি, কিচ্ছু তার প্রয়োজন নেই
যাবতীয় কথা হয়ে গেছে বহুব্যবহারদুষ্ট পাছু–
পথ, আর যত শব্দ ক্রমাগত অর্থহীন বাছু
আসে যায়, বলে কয়, কারো শ্রবণের মন নেই
যা বুঝেছ, বুঝেছ ঠিকই, কিন্তু জগতের তাতে
কিবা আসে যায় তুমি বলো কি না বলো খোলাখুলি
অথচ শমন এসে ভালোবেসে করে কোলাকুলি
যদি বলে ফেল মুখ ফুটে, পড়ে ছাই বাড়া ভাতে
যা বলেছ, যা বলতে চাও, সব ব্যর্থ বাচালতা
নিতান্ত স্বভাবদোষে করে যাও চর্বিত চর্বণ
শব্দের কারণে কবে কে করেছে সর্বসমর্পণ
কথা কবে ফুলে ফুলে ভরিয়ে দিয়েছে আশালতা
যা বলেছ তার কিছু স্তবস্তুতি স্তোকবাক্য চেনা
আখের গুছাতে কিছু বাক্যব্যয় আস্তাকুঁড়গামী
লিবিডো তাড়িত কিছু শব্দোচ্ছ্বাস ছিল কমদামি
কিছু কিছু অন্য কারো বাকশিল্প থেকে ধারদেনা
এখন ক্ষেপে না গিয়ে চেপে যাও যা বলার ছিল
কারণ তুমি না বললেও জেনো যা হওয়ার হবে
যা বোঝার বুঝে নাও ভালো করে, জেনে নাও, তবে
অকথিত থেকে যাক কিসে জিত, কিসে হার ছিল
আহত শব্দের কান্না এবার থামাও, অনাহত
শব্দে পাতো ত্রিভুবন বিস্মরিত আত্মমগ্ন কান
এবং বাক্যেরা হলে অনাদরে বাইরে ব্যাহত
অনির্বচনীয়ে তবে খুঁজে নাও বাচ্যের সম্মান