দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় চট্টগ্রামে হৃদরোগের প্রকোপ বেশি। হৃদরোগের চিকিৎসায় উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ প্রতিবেশি দেশ ভারত, সিঙ্গাপুর–ব্যাংককসহ বিশ্বের উন্নত দেশে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। তবে এক্ষেত্রে গরীব ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষের একমাত্র ভরসা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল। চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলা এবং বৃহত্তর চট্টগ্রামের কয়েক কোটি মানুষ এই হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল। তাই হাসপাতালে প্রায় সময় শয্যার ধারণক্ষমতার তিনগুণ বেশি রোগী ভর্তি থাকে। এর মধ্যে গত প্রায় দুই বছর ধরে চমেক হাসপাতাল হৃদরোগ বিভাগের দুটি এনজিওগ্রাম মেশিনেরর মধ্যে একটি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। ফলে একটি মাত্র মেশিন দিয়ে ক্যাথল্যাব (এনজিওগ্রাম) ও রিং লাগানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম সারতে হচ্ছে। সেটিতেও মাঝে মাঝে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিচ্ছে। এতে রোগীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
জানা গেছে, ক্যাথল্যাব বা কার্ডিয়াক ক্যাথেটারাইজেশনের মাধ্যমে হৃদযন্ত্রের মাংসপেশি, ভাল্ব (কপাটিকা), ধমনির পরিস্থিতি জানতে এবং হৃদযন্ত্রের রক্তের চাপ বুঝতে রোগীকে ক্যাথল্যাবে পরীক্ষা করে দেখা হয়। ত্রুটি ধরা পড়লে প্রয়োজনমতো রক্তনালিতে স্টেন্ট বা রিং পরানো, পেসমেকার বসানো, সংকুচিত ভাল্বকে ফোলানোসহ বিভিন্ন অস্ত্রোপাচার করা হয়। চমেক হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৭ থেকে চলতি ২০২৩ সালের ৪ অক্টোবর পর্যন্ত ক্যাথল্যাবে করোনারি এনজিওগ্রাম সম্পন্ন হয়েছে ১১ হাজার ৮৫৮ জন রোগীর, পেরিফেরাল এনজিওগ্রাম হয়েছে ১১ রোগীর, পিটিসিএ (হার্টের রিং) হয়েছে ২ হাজার ৬৮৯ জনের, টেম্পোরারি পেসমেকার লাগানো হয়েছে ৯৬৫ জনের এবং পারমানেন্ট পেসমেকার লাগানো হয়েছে ৬২৫ জনের, পিডিএ হয়েছে ১ জনের, এএসডি হয়েছে ১ জনের এবং ভিএসডি হয়েছে ১ জনের। এর মধ্যে ২০১৭ সালে করোনারি এনজিওগ্রাম সম্পন্ন হয়েছে ১ হাজার ১৫৬ জন রোগীর, পিটিসিএ (হার্টের রিং) হয়েছে ১৫৬ জনের, টেম্পোরারি পেসমেকার লাগানো হয়েছে ১৬৮ জনের এবং পারমানেন্ট পেসমেকার লাগানো হয়েছে ৯৯ জনের। ২০১৮ সালে করোনারি এনজিওগ্রাম সম্পন্ন হয়েছে ১ হাজার ৪০৩ জন রোগীর, পিটিসিএ (হার্টের রিং) হয়েছে ২০১ জনের, টেম্পোরারি পেসমেকার লাগানো হয়েছে ১৭৫ জনের এবং পারমানেন্ট পেসমেকার লাগানো হয়েছে ৯৫ জনের।
২০১৯ সালে করোনারি এনজিওগ্রাম সম্পন্ন হয়েছে ২ হাজার ৮৪ জন রোগীর, পিটিসিএ (হার্টের রিং) হয়েছে ২৬০ জনের, টেম্পোরারি পেসমেকার লাগানো হয়েছে ১৯১ জনের এবং পারমানেন্ট পেসমেকার লাগানো হয়েছে ১০৫ জনের। ২০২০ সালে করোনারি এনজিওগ্রাম সম্পন্ন হয়েছে ১ হাজার ১২৮ জন রোগীর, পিটিসিএ (হার্টের রিং) হয়েছে ২৩৬ জনের, টেম্পোরারি পেসমেকার লাগানো হয়েছে ১৩৪ জনের এবং পারমানেন্ট পেসমেকার লাগানো হয়েছে ৬৯ জনের। ২০২১ সালে করোনারি এনজিওগ্রাম সম্পন্ন হয়েছে ১ হাজার ৫৩৫ জন রোগীর, পিটিসিএ (হার্টের রিং) হয়েছে ৪৮৬ জনের, টেম্পোরারি পেসমেকার লাগানো হয়েছে ৮৯ জনের এবং পারমানেন্ট পেসমেকার লাগানো হয়েছে ৯০ জনের। ২০২২ সালে করোনারি এনজিওগ্রাম সম্পন্ন হয়েছে ২ হাজার ৬৮৮ জন রোগীর, পেরিপ্যারাইরাল এনজিওগ্রাম হয়েছে ২ রোগী, পিটিসিএ (হার্টের রিং) হয়েছে ৭৩৭ জনের, টেম্পোরারি পেসমেকার লাগানো হয়েছে ১২৫ জনের এবং পারমানেন্ট পেসমেকার লাগানো হয়েছে ৯৭ জনের, পিডিএ হয়েছে ১ জনের, এএসডি হয়েছে ১ জনের এবং ভিএসডি হয়েছে ১ জনের। ২০২৩ সালের ৪ অক্টোবর পর্যন্ত করোনারি এনজিওগ্রাম সম্পন্ন হয়েছে ১ হাজার ৮৬৮ জন রোগীর, পিটিসিএ (হার্টের রিং) হয়েছে ৫৯৫ জনের, টেম্পোরারি পেসমেকার লাগানো হয়েছে ৭৯ জনের এবং পারমানেন্ট পেসমেকার লাগানো হয়েছে ৬৫ জনের।
চমেক হাসপাতাল হৃদরোগ বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. রিজোয়ান রেহান বলেন, জাপানের শিমার্জু ব্র্যান্ডের এনজিওগ্রাম মেশিনটি হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগে স্থাপন করা হয় ২০১৬ সালে। ২০২১ সালের শেষের দিকে এঙ–রে টিউব নষ্টের পর থেকে পড়ে আছে।
জানতে চাইলে চমেক হাসপাতাল হৃদরোগ বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. আশীষ দে দৈনিক আজাদীকে বলেন, চমেক হাসপাতাল হৃদরোগ বিভাগের সক্ষমতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। তবে হৃদরোগীর হার যেহেতু বাড়ছে, তাই সক্ষমতা আরো বাড়ানো উচিত। আমাদের দুটি ক্যাথল্যাবের মধ্যে একটি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এ বিষয়ে আমরা চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে চিঠি এবং মৌখিকভাবে একাধিকবার জানিয়েছি। আমাদের এখন একটি এনজিওগ্রাম মেশিন দিয়ে কাজ চালাতে হচ্ছে। এ মেশিনটিতে মাঝে মাঝে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিচ্ছে। আমাদেরকে মেশিনের টেকনেশিয়ান জানিয়েছেন–এই মেশিনের যা সেল্ফ টাইম সে পরিমাণ কাজ ইতো মধ্যেই হয়ে গেছে। তাই এই মেশিন নষ্ট হলে কাজ একেবারে বন্ধ হয়ে যাবে। আমাদের বর্তমানে যে কাজের চাপ, এখন অন্তত তিনটি এনজিওগ্রাম মেশিন দরকার।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান দৈনিক আজাদীকে বলেন, হৃদরোগ বিভাগের নষ্ট এনজিওগ্রাম মেশিন মেরামতের জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি।