গেল বছর ২ সেপ্টেম্বর রাত ১২টার দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক নম্বর গেট হয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে ক্যাম্পাসে ফিরছিলেন প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আফতাব হোসেন। এসময় মাইক্রোবাসের সাথে ধাক্কা লেগে গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন এই শিক্ষক। শিক্ষক মৃত্যুর পর ক্যাম্পাসজুড়ে তোলপাড় হলে সেখানে ফুটওভার ব্রিজের দেওয়ার কথা দেন স্থানীয় ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু একবছর পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেইট এলাকায় ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ হয়নি। ফলে মৃত্যুঝুঁকি নিয়েই প্রতিনিয়ত রাস্তা পারাপার হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
চবির ১নং গেট এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত, এমনকি মৃত্যুর ঘটনা নতুন কিছু নয়। এই সড়কটি চট্টগ্রামের তিন পার্বত্য জেলাকে সংযোগকারী একটি মহাসড়ক। এই মহাসড়কে প্রতিদিন ৩২টি রুটের যানবাহন চলাচল করে। সর্বশেষ ২০২১ সালের ২০ অক্টোবর বাসের ধাক্কায় নাসির উদ্দীন (৫২) ও রুবেল হোসেন (২৬) নামের দুইজন শ্রমিক নিহত হন। সেই সাথে আহত হন দিলীপ কুমার চৌধুরী (৪৪) নামের আরো একজন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মারা যান। শিক্ষকের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীরা ১ নম্বর গেট এলাকায় সড়ক অবরোধ করে ফুটওভার ব্রিজ ও স্পিড ব্রেকার নির্মাণের দাবি জানান। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে ১ নম্বর গেট এলাকায় জেব্রা ক্রসিং, স্পিড ব্রেকার তৈরি করলেও ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ এখনো হয়নি। এছাড়া জেব্রা ক্রসিংও অনেকটা মিশে গেছে কংক্রিটের সঙ্গে। স্পিড ব্রেকারও দেবে প্রায়।
হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেট এলাকায় আঁকা হয় জেব্রা ক্রসিং, স্থাপন করা হয় রাম্বল স্ট্রিপ ও স্পিড ব্রেকার। ফলে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এতে রয়েছে প্রাণ শঙ্কা। চবি শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, এই রাস্তায় প্রতিদিন অনেক যান চলাচল করে। এসময় রাস্তা পারাপার হওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। রাস্তায় জেব্রা ক্রসিং এবং স্পিড ব্রেকার নির্মাণ করা হলেও সেটা নিরাপদ সড়কের জন্য পর্যাপ্ত না। ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণে শিক্ষার্থীদের দাবি থাকলেও প্রশাসন সেটা পূরণ করেনি।
তৎকালীন হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিদুল আলম জানান, দুর্ঘটনা এড়াতে জেব্রা ক্রসিং ও স্পিড ব্রেকার নির্মাণ করা। এখানে একটি ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণের চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, শিক্ষক মৃত্যুর পর ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ একটি চূড়ান্ত দাবিতে পরিণত হয়। পরে ফুট ওভারব্রিজ তৈরির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাজেট বরাদ্দ দেওয়া হয়। উপজেলার সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর ওভার ব্রিজের নকশা তৈরি করে চূড়ান্তের জন্য ঢাকায় পাঠায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের জন্য এবছরের ফেব্রুয়ারি মাসে টেন্ডার আহ্বান করা হয়। উপজেলার সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর এটার ওয়ার্ক আউট করে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়। কিন্তু অধিদপ্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি বলে জানান চবির প্রধান প্রকৌশলী ছৈয়দ জাহাঙ্গীর ফজল। তিনি বলেন, সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের বিষয়ে আমাদের সাথে আর কোনো যোগাযোগ করেনি। গত সপ্তাহতেও যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। অধিদপ্তরের যে কোনো সাহায্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রস্তুত আছে বলে জানান তিনি।
জানতে চাইলে চবি প্রক্টর ড. নূরুল আজিম সিকদার বলেন, ১নং গেইট এলাকায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হয়। ওভারব্রিজ নির্মাণের কার্যপ্রণালী শুরু হলেও আমার মনে হয় সেটা কোথাও এসে থেমে গেছে। আমরা চেষ্টা করবো দ্রুত সময়ে এটা নির্মাণ কাজ শেষ করতে।