বন্যায় রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া একটি শিক্ষা : প্রকল্প পরিচালক

দোহাজারী-কক্সবাজার

| মঙ্গলবার , ১৫ আগস্ট, ২০২৩ at ৮:১৯ পূর্বাহ্ণ

সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের একটি চট্টগ্রামকঙবাজার রেললাইনের কাজ শেষ হয়েছে ৮৭ শতাংশ। আগামী সেপ্টেম্বরে এপথে ট্রেন চলাচল শুরুর আশা করলেও সামপ্রতিক বন্যায় কয়েকটি স্থানে মাটি ও পাথর সরে উঁচুনিচু হয়ে গেছে লাইনটি। তাতে সংশয় দেখা দিলেও প্রকল্প পরিচালক মো. মফিজুর রহমান বলছেন, নির্ধারিত সময়েই পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলাচল করবে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারে। তবে বন্যায় লাইনের এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়টি ভবিষ্যতে এই ধরনের প্রকল্পের ক্ষেত্রে একটি ‘শিক্ষা’ হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করেন তিনি। গত সপ্তাহে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে যায় দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, চন্দনাইশ, লোহাগাড়া উপজেলা। তার মধ্যে সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া ইউনিয়নের তেমুহুনি এলাকায় রেললাইনের পাথর ও মাটি সরে বসে গেছে রেললাইন।

রেলওয়ে কর্মকর্তারা বলছেন, এডিবির অর্থায়নে তৈরি করা এ রেললাইন নির্মাণের আগে আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে সমীক্ষা করানো হয়েছিল। তারা যেভাবে বলেছে, সেভাবেই রেল লাইন বসানো হয়েছে। বৈরী আবহাওয়ার কারণেই সমস্যা দেখা দিয়েছে। দোহাজারিকঙবাজার রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক মফিজুর রহমান জানান, পানিতে রেললাইনের মাটি ও পাথর সরে গিয়ে ৪৫০ মিটার লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই ক্ষতিগ্রস্ত লাইন সংস্কার করবে। বৈরী আবহাওয়ায় এটা অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা বলে মনে করেন না তিনি। খবর বিডিনিউজের।

এটা নতুন কিছু নয়। শুধু কঙবাজার রেললাইন নয়, চট্টগ্রামঢাকাসিলেটসহ বিভিন্ন অঞ্চলের রেল লাইনে এ ধরনের ঘটনা ঘটে। আগের জায়গা মতো পাথর ও মাটি দিলেই এটা ঠিক হয়ে যাবে। প্রতিকূল আবহাওয়ার সম্ভাব্যতা মাথায় রেখেই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে জানিয়ে প্রকল্প পরিচালক বলেন, বিগত ১০০ বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড হিসেব করেই এ ফিজিবিলিটি করা হয়েছে, যার কারণে এ রেললাইন ২০ ফুট উচুঁ। প্রকৃতি যে কখন বিরূপ আচরণ করে, সেটা বলা মুশকিল। আমাদের আবহাওয়া অধিদপ্তর ও পানি উন্নয়ন বোর্ডও বলছে, বিগত ১০০ বছরে এ ধরনের বৃষ্টিপাত হয়নি। তাই এই ধরনের বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট বন্যা ‘একটি শিক্ষা’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, শুধু এখানে নয়, অন্যান্য রেললাইন এবং নতুন করে যেসব রেল লাইন তৈরি হবে, সেগুলোর জন্য একটি প্রস্তুতি আমাদের নিতে হবে।

বর্তমানে চট্টগ্রামের দোহাজারী পর্যন্ত রেললাইন রয়েছে। সেখান থেকে রামু হয়ে কঙবাজার পর্যন্ত প্রায় ১০১ কিলোমিটার নতুন সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ করা হচ্ছে। তাতে দেশের প্রধান পর্যটন নগরী কঙবাজারের সঙ্গে সারাদেশের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপন হবে। আগামী বছরের জুনে শেষ হতে যাওয়া এ প্রকল্পে খরচ হচ্ছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকার বেশি। আগামী সেপ্টেম্বরে এ লাইনে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু করতে চায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। প্রকল্প পরিচালক মফিজুর রহমান জানান, দোহাজারি থেকে কঙবাজার পর্যন্ত প্রায় ৯০ কিলোমিটার নতুন রেললাইন স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ১২ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ কাজও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ হবে।

বন্যার জন্য রেললাইনের দায় কতটা?

স্থানীয়দের অভিযোগ, যেখানে রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলো ছিল ফসলি বিল। প্রতিবছর পাহাড়ি অঞ্চল থেকে ভাটি এলাকা সাতকানিয়া, দোহাজারি, চন্দনাইশ উপজেলায় পানির ঢল নামে, যে পানি বিল দিয়ে প্রবাহিত হয়। কিন্তু নতুন বসানো রেললাইনে পানি চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত কালভার্ট তৈরি না করায় বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। চট্টগ্রামকঙবাজার মহাসড়কের সাতকানিয়ার নয়াখালের মুখ থেকে রেললাইন ধরে উত্তর দিকে দুই কিলোমিটার গেলেই কেঁওচিয়া ইউনিয়নের তেমুহুনি এলাকা। রোববার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, রেললাইনের দুই পাশেই জমে আছে পানি। কিছু কিছু স্থানে রেল লাইনের উপরে ঝুপড়ি ঘর করে আশ্রয় নিয়েছে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা। তারা বলছেন, গত কয়েক দশকে এ বছরের মতো বন্যার মুখোমুখি তারা হয়নি। এর আগে ১৯৯৭, ২০১৯ সালে বন্যা হলেও এবছর পানি তাও ছাড়িয়ে গেছে।

এ মাসের শুরুতে চট্টগ্রাম ও বান্দরবান এলাকায় হয় প্রবল বৃষ্টিপাত। আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব বলছে, চট্টগ্রাম বিভাগে অগাস্ট মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৫৩০ মিলিমিটার। কিন্তু চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে এর কয়েক গুণ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। সেই বৃষ্টির পানি নামতে না পারায়ই এই দুর্ভোগ বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। কেঁওচিয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা দুর্জয় রায়হান বলেন, বান্দরবানের পাহাড়ি ঢল পূর্ব দিক থেকে পশ্চিম দিকে আসে। যে পরিমাণ পানি এসেছে, রেললাইনের কারণে তা যেতে পারছে না। এ কারণে পূর্ব দিকে পানি জমে আছে। এই ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের তেমুহুনি এলাকার বাসিন্দা সাদেক হোসেন বলেন, ২০১৯ সালেও বন্যা হয়েছিল। সেবার আমার ঘরের উঠানে পানি হলেও ঘরে ঢোকেনি। কিন্তু এবছর ঘরে কোমর সমান পানি। বন্যার পানি নামে পূর্ব দিক থেকে। ওই দিকেই আমাদের বাড়ি। কিন্তু এবার পানি রেললাইনের কারণে পানি নামতে পারেনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ‘ইচ্ছেমতো’ দাম বসিয়ে ডিম বিক্রি
পরবর্তী নিবন্ধরোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বিশ্ববাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান