বিশ্বের বড় বড় দলে বিশেষ করে ফুটবলে মেসি, নেইমার, রোনালদোর মত ফুটবলারদের গায়ে এক ধরনের বিশেষ পোশাক দেখা যায়। শরীরের উপরের অংশে খেলোয়াড়রা পরিধান করে থাকে এই পোশাক। যাকে বলা হয় জিপিএস ভেস্ট। তবে ক্রিকেটে তেমন একটা দেখা যায়না এই পোশাক। ভারত, অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডের ক্রিকেটারদের এই পোশাক পরতে দেখা যায়। এবার বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের গায়ে যুক্ত হয়েছে এই জিপিএস ট্র্যাকিং কিট। যা এখন থেকে নিয়মিতই দেখা যাবে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের গায়ে। এশিয়া কাপের আগে আনুষ্ঠানিক অনুশীলন শুরুর দিন পরীক্ষামূলকভাবে শুধু তাসকিন ও হাসানই পরেন কাঁধ থেকে বুক পর্যন্ত নেমে আসা এই জিপিএস কিট। এর ব্যবহারবিধি বুঝিয়ে দিতে একজন বিশেষজ্ঞকেও দেখা যায় মাঠে। বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচ চান্দিকা হাথুরুসিংহে ও বিসিবির হেড অব প্রোগ্রাম ডেভিড মুরের চাওয়ায় বাংলাদেশের ক্রিকেটও এবার ঝুঁকল জিপিএস প্রযুক্তির দিকে। অনুশীলন ও ম্যাচ মিলিয়ে কোনো ক্রীড়াবিদ কতটা ধকল নিতে পারবেন সেটি ঠিক করার পদ্ধতিই মূলত ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্ট। আর এই কাজটি নিখুঁতভাবে করবে জিপিএস। জিপিএসের কাজটা খুবই সাধারণ। একজন সারা দিনে কতটুকু কাজ করল, আরও কতটুকু করা সম্ভব, কতটুকু করলে তার জন্য ক্ষতি হতে পারে, অথবা অল্প কাজ করেই কেউ যদি বলে যে অনেক কাজ করে ফেলেছি এই সব কিছুই জিপিএস দিয়ে হিসেব করা যাবে। এটি মূলত একজন খেলোয়াড় মাঠে কতটা দৌড়েছে, তার গতি কেমন ছিল, কতটা হেঁটেছে, হৃৎস্পন্দনের হার কেমন, রক্ত চলাচল কেমন, শরীরে স্ট্রেস কতটা পড়েছে এরকম আরও নানা তথ্য সরবরাহ করবে ট্রেনার ও ফিজিওকে। সেগুলো পর্যালোচনা করে যে কোনো ক্রিকেটারের অনুশীলনের পরিকল্পনা সাজানো যাবে। এটি দিয়ে নির্দিষ্টভাবে একজন খেলোয়াড়ের ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টটা বোঝা যায়।
বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের জন্য আনা এই ভেস্ট জিপিএসের সঙ্গে আরও কিছু সেন্সরের সমন্বয়ে ফিটনেসের সামগ্রিক অবস্থা বোঝার জন্য নানান তথ্য সরবরাহ করবে। প্রত্যেক ক্রিকেটারের জন্য আলাদা আলাদা প্রোফাইল থাকছে এই জিপিএসের সিস্টেমে। যার তত্ত্বাবধানে থাকবেন মূলত ফিজিও ও ট্রেনার। তবে কোচ ও ক্রিকেটাররাও সহজেই নিজেদের যে কোনো তথ্য পেয়ে যাবেন এই সিস্টেম থেকে। নামের পাশে থাকা সবুজ, হলুদ ও লাল চিহ্ন দেখে বোঝা যাবে খেলোয়াড়দের সার্বিক অবস্থা। সে অনুযায়ী ট্রেনার ও ফিজিওরা অনুশীলনের জন্য পরিকল্পনা সাজাতে সাহায্য করবেন। দেশের ক্রিকেটে এর আগেও হয়েছে জিপিএস ট্র্যাকারের ব্যবহার।
২০০৮–০৯ সালের দিকে তখনকার ট্রেনার গ্র্যান্ট লুডেনের পরামর্শে আনা হয়েছিল সেটি। এখন উন্নত প্রযুক্তিতে বন্ধনীর মতো কিট ব্যবহার করা হলেও, তখন একটি ব্যান্ড লাগিয়ে দেওয়া হতো ক্রিকেটারদের বুকে। যে কোনো ক্রীড়াবিদের জন্য ফিটনেস অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ফিটনেস ভালো থাকলে পারফরম্যান্সও স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়। এই কিট ব্যবহার করলে ফিটনেস লেভেলটা বাড়ানো সহজ হয়। আপাতত জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে এই জিপিএস ট্র্যাকারের ব্যবহার। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা বুঝে বাংলাদেশ টাইগার্স, হাই পারফরম্যান্স ইউনিটেও এটি ব্যবহার করা হবে।