বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় ঝরনা দেখতে গিয়ে নিচে পড়ে আতাহার ইসরাক রাফি (৩৪) নামে এক ট্যুরিস্ট গাইডের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রোববার সকালে সেনাবাহিনী তার লাশ উদ্ধার করে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয়রা জানায়, আলীকদম উপজেলার কুরুকপাতা ইউনিয়নের স্যামসাং পাড়ার অদূরে সাইমপ্রা এলাকায় ঝিরি–ঝরনা দেখতে পর্যটকের একটা গ্রুপ নিয়ে যান গাইড রাফি। গত শনিবার বৃষ্টিতে পাহাড়ি পথ ধরে হেঁটে ঝরনায় যান তারা। সেখানে পা পিছলে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত লাগলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় রাফির। স্থানীয়দের মাধ্যমে পর্যটকরা বিষয়টি প্রশাসনকে জানায়। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ যৌথভাবে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করেছে। পাশাপাশি আটকা পড়া ১৯ জন পর্যটককে উদ্ধার করা হয়। পর্যটক দলে নিহত রাফির স্ত্রী বর্ষা ইসলামও ছিলেন বলে জানা যায়।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে আলীকদম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খন্দকার তবিদুর রহমান বলেন, পর্যটকদের ২০ জনের একটা গ্রুপ আলীকদম থেকে কুরুকপাতা ইউনিয়নে বেড়াতে যায়। সেখান থেকে ঝরনা দেখতে গিয়েছিল পর্যটকরা। তাদের সাথেই ছিলো নিহত ট্যুরিস্ট গাইড। ফেরার সময় পাহাড় থেকে পড়ে তার মৃত্যু হয়। সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।
এদিকে চকরিয়া প্রতিনিধি জানান, চকরিয়ার উপকূলীয় ইউনিয়ন বদরখালীর বাজার পাড়ার শওকত আলী ও তছলিমা জন্নাত দম্পতির প্রথম সন্তান রাফি মা–বাবার সাথে চট্টগ্রামে থাকতেন। মা তছলিমা জন্নাত কর্মরত আছেন বাকলিয়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে। আর বাবা শওকত আলী চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করে চট্টগ্রামের বাড়িতেই অবস্থান করছেন। প্রিয় সন্তানের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর গতকাল রোববার সকালেই ছুটে যান বান্দরবানের আলীকদমে।
জানা যায়, এমবিএ শেষ করে সম্প্রতি বিয়ের পিঁড়িতে বসেন আতাহার ইশরাক রাফি ও বর্ষা ইসলাম। কথা ছিল দুজনই আর কয়েকদিন পর পাড়ি দিবেন কানাডায়। প্রায় সব ধরনের প্রস্তুতিও শেষ হয়েছিল। কিন্তু কানাডা যাত্রা আর হয়ে ওঠেনি তাদের। আলীকদমের দুর্গম ও বিপদসংকুল ঝিরি–ঝরনা দেখতে যাওয়াটাই যেন কাল হয়ে এসেছে রাফি–বর্ষার জীবনে।
গতকাল সন্ধ্যায় নিহত রাফির চাচা সিরাজুল করিম জানান, তখনো পর্যন্ত রাফির মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। যদি অল্প সময়ের মধ্যে লাশ হস্তান্তর করা হয় তাহলে হয়তো রাতের (রোববার) মধ্যেই জানাজা শেষে লাশ দাফনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে লাশ যদি হস্তান্তরে দেরি করা হয় তাহলে সোমবার (আজ) বদরখালী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের কবরস্থানে দাফন করা হবে রাফিকে।