ডিএনএ পরীক্ষায় শনাক্ত আরও ৩ জনের মরদেহ হস্তান্তর

ট্রলারে ১০ লাশ

কক্সবাজার প্রতিনিধি | সোমবার , ১০ জুলাই, ২০২৩ at ৫:৪৬ পূর্বাহ্ণ

কক্সবাজারের নাজিরারটেক উপকূলে ট্রলার থেকে ১০ জনের মরদেহ উদ্ধারের আড়াইমাস পর ডিএনএ পরীক্ষায় আরও ৩ জনের পরিচয় নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ। গতকাল রোববার বিকালে ওই ৩ মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। অবশিষ্ট একটি মরদেহের কোনো দাবিদার না থাকায় আদালতের অনুমতির প্রেক্ষিতে সেটি কক্সবাজার পৌরসভার মাধ্যমে বেওয়ারিশ লাশ হিসাবে দাফনের প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মামলাটির তদন্তকারি কর্মকর্তা কক্সবাজার সদর থানার পরিদর্শক দুর্জয় বিশ্বাস।

শনাক্ত হওয়া ৩ জন হলেনকক্সবাজার সদর উপজেলার ভারুয়াখালী ইউনিয়নের বড় চৌধুরী পাড়া এলাকার মৃত আবদুল আজিজের ছেলে শাহ আলম (৫৪), মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়ার ঝাপুয়া এলাকার তাজুল মুল্লুকের ছেলে মো. ইকবাল (২৭) ও কুতুবদিয়া উপজেলার বড়ঘোপ ইউনিয়নের রোমাইপাড়ার মৃত আবু সৈয়দের ছেলে মেজবাহ উদ্দিন (৫০)

গতকাল রোববার বিকাল ৪টায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মরদেহ ৩টি স্বজনদের হস্তান্তর করা হয়। এ সময় মামলাটির তদন্তকারি কর্মকর্তা ছাড়াও কক্সবাজার সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো, মিজানুর রহমান, কক্সবাজার সদর থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম, কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডা. আশেকুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

পরিদর্শক দুর্জয় বিশ্বাস জানান, শাহ আলমের মরদেহটি তার ছেলে মামুনুর রশিদ, মো. ইকবালের মরদেহটি তার ভাই তারেক ও মেজবাহ উদ্দিনের মরদেহটি ছেলে আবু সাইদ মো. জিসান গ্রহণ করেছেন।

তিনি জানান, গত ২৩ এপ্রিল ট্রলার থেকে ১০টি মরদেহ উদ্ধারের পর ৬ জনের মরদেহ শনাক্ত হয়। এরপর লাশগুলো তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু অপর ৪টি মরদেহ পঁচেগলে যাওয়ায় তাদের পরিচয় নিশ্চিত হতে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। একই সঙ্গে নিখোঁজ থাকা স্বজনদের অনেকের ডিএনএ নমুনাও সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৩ জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেলেও স্বজনদের সাথে ডিএনএ না মেলায় অপরজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ ঘটনায় এখনও ৪ জন নিখোঁজ হিসেবে ধরা হচ্ছে। এ ৪ জন হলেনমহেশখালীর শাপলাপুর ইউনিয়নের মিঠাছড়ি গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (১৮), সাহাব মিয়ার ছেলে সাইফুল্লাহ (২৩), মোহাম্মদ আলীর ছেলে পারভেজ মোশাররফ (১৪) ও চকরিয়া উপজেলার কোনাখালী ইউনিয়নের কবির হোসাইনের ছেলে সাইফুল ইসলাম (৩৪)

মরদেহ হস্তান্তরের সময় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এই ৪ জনের স্বজনদের মধ্যে ৩ জন না আসলেও শাপলাপুর ইউনিয়নের মিঠাছড়ি গ্রামের সাহাব মিয়া উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান, পুলিশ তার এবং স্ত্রীর নমুনা নিয়েছিল। এখন তাদের সাথে ডিএনএ মিলেনি বলে দাবি করা হচ্ছে। যে মরদেহটি পৌরসভার মাধ্যমে দাফনের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে সেটি তার ছেলে সাইফুল্লাহর। পুলিশের কাছে তিনি মরদেহটি তাকে দেয়ার অনুরোধও জানান। পরিদর্শক দুর্জয় বিশ্বাস জানান, আদালতের সিদ্ধান্ত মতে মরদেহটি অন্য কাউকে হস্তান্তর করা যাচ্ছে না। ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফল হাতে আসার পর এখন নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে যে, যে ট্রলারটি থেকে ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে সেই ট্রলারটিতে মোট ১৩ জন লোক ছিলেন।

তিনি বলেন, এখন পরিচয় শনাক্ত না হওয়া মরদেহটি কার এমন প্রশ্ন যেমন রয়েছে, তেমনি এ ঘটনায় নিখোঁজ ৪ জন নিয়েও অনেক বিভ্রান্তি রয়েছে। প্রশ্ন ওঠেছে, এই ৪ জন এখন কোথায়? তারা জীবিত না মৃত? আর এই রহস্য উদঘাটনে অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে।

নতুন শনাক্ত ৩ মরদেহ গ্রহণ করতে আসা শাহ আলমের ছেলে মামুনুর রশিদ জানান, তার বাবা একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে চকরিয়া গিয়ে ছিলেন। পরে জানতে পারেন ওখান থেকে তিনি একটি ট্রলারে সাগরে গেছেন। কেন সাগরে গেছেন, কার সাথে গেছেন এটা জানা ছিল না। এরপর থেকে নিখোঁজ ছিলেন তার বাবা। তাই ১০ মরদেহ উদ্ধারের পর এর একটি তার বাবা হতে পারে এমন ভেবে তিনি নিজেই ডিএনএ নমুনা দিয়েছিলেন।

মেজবাহ উদ্দিনের ছেলে আবু সাইদ মো. জিসানও বলেছেন একই কথা। তিনি বলেন, সাগরে গিয়ে তার বাবা নিখোঁজ থাকার কারণে তিনি এসে ডিএনএ নমুনা দিয়েছিলেন।

তদন্তকারী কর্মকর্তা দুর্জয় বিশ্বাস বলেন, ঘটনাটির শুরু থেকেই ট্রলারটিতে ১৩ জন লোক ছিলেন বলে এক পক্ষ দাবি করে আসছিলেন। একই কথা বলেছিলেন এই ঘটনার মামলার বাদিও। ডিএনএ পরীক্ষার পর এটা অনেকটা সত্য বলে ধরে নেয়া হচ্ছে।

ইতোমধ্যে এ ঘটনায় পুলিশ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। যার মধ্যে এর মধ্যে ৬ জন ১৬৪ ধারার জবানবন্দি প্রদান করেন। এরা হলেন, মামলার এজাহারের প্রধান আসামি বাইট্টা কামাল, বাঁশখালীর বাসিন্দা ফজল কাদের মাঝি ও আবু তৈয়ুব মাঝি, মহেশখালী পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর খায়ের হোসেন, চকরিয়ার বদরখালী এলাকার মো. নুর নবীর ছেলে গিয়াস উদ্দিন মুনির, মাতারবাড়ী ইউনিয়নের সাইরার ডেইল এলাকার এস্তেফাজুল হকের ছেলে দেলোয়ার হোসেন। তবে গ্রেপ্তারের মধ্যে মামলার ৪ নম্বর আসামি করিম সিকদার ও বাইট্টা কামালের ভাই ইমাম হোসেন জবানবন্দি প্রদান করেননি।

গত ২৩ এপ্রিল স্থানীয় জেলেরা সাগরে ভাসমান একটি ট্রলার শহরের নাজিরারটেক উপকূলে নিয়ে আসার পর ওই ট্রলারের হিমঘরে হাতপা বাঁধা ১০ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ২৫ এপ্রিল নামবিহীন ট্রলারটির মালিক নিহত সামশুল আলম প্রকাশ সামশু মাঝির স্ত্রী রোকেয়া বেগম বাদি হয়ে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৬০ জনের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধতারেক-জোবায়দার বিরুদ্ধে দুজন সাব রেজিস্ট্রারের সাক্ষ্য
পরবর্তী নিবন্ধবিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাবে চসিক