কাপ্তাই উপজেলার বাদশা মাঝির টিলায় গত ৮ জানুয়ারি বিস্ফোরণে নিহত হন ছোট্ট ফারিয়ার বাবা ইসমাইল মিয়া (৪৫) ও তার ভাই রিফাত হোসেন (৭)। মাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ফারিয়া স্থানীয় দারুল আরকাম মাদরাসায় ২য় শ্রেণীতে পড়ে। ওই দুর্ঘটনার কিছুক্ষণ আগে সে পাশের ঘরে প্রাইভেট পড়তে যায়। ফারিয়া ঘর থেকে বের হওয়ার ৫ মিনিটের মাথায় দুর্ঘটনা ঘটে। গতকাল বিকালে ফারিয়ার বাবা এবং ভাইকে দাফন করা হয়।ছোট্ট ফারিয়া (৮) বাবা, মা ও ভাইকে খুঁজছে। তার বাবা আর ভাই যে আর কখনো ফিরে আসবে না এই সত্যটা সে বুঝতে পারছে না। কিন্তু কিসের বিস্ফোরণ ঘটেছে সেটা এখনো জানা যায়নি। পুলিশের ধারণা, এটা গ্রেনেডের বিস্ফোরণ।
কাপ্তাই সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) রওশন আরা রব বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে গ্রেনেড বিস্ফোরণে এই ঘটনা ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বোমা বিশেষজ্ঞ ঘটনাস্থলে এসে আলামত সংগ্রহ করে নিয়ে গেছেন। রিপোর্ট এখনো পাওয়া যায়নি। রিপোর্ট পাওয়ার পর দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
কাপ্তাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আবদুল লতিফ জানান, ফারিয়ার বাবা ইসমাইল মিয়া দিনমজুর। পুরাতন লোহালক্কড় ও অন্যান্য জিনিসপত্র সংগ্রহ করে ভাঙারির দোকানে বিক্রি করে। ধারণা করা হচ্ছে, কোনো স্থান থেকে পরিত্যক্ত গ্রেনেড বা এ জাতীয় কিছু খুঁজে পায় ইসমাইল। আর লোহা বা এ জাতীয় কিছু ভেবে সেটি ঘরে এনে চুলার কাছে রাখে। চুলার আগুনের তাপে গ্রেনেডটি বিস্ফোরিত হয়।
এদিকে পরিবারে অভাব থাকলেও সবাই মোটামুটি ভালোই ছিল। কিন্তু ৮ জানুয়ারি থেকে ঘরে কেউ নেই। ফারিয়া একা। চোখে ঘুম নেই। বাবা ও ভাই চিরনিদ্রায় কবরে শায়িত। মা সখিনা বেগম চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন।
বাদশা মাঝির টিলায় সরেজমিনে দেখা গেছে, ফারিয়াদের ঘর তছনছ অবস্থায় আছে। বাইরে বিপুল সংখ্যক লোক। এত লোকজন থাকলেও ফারিয়া আপনজন কাউকে দেখছে না। প্রতিবেশীরা কেউ সান্ত্বনা দিচ্ছেন, কেউ খেতে দিচ্ছেন। কিন্তু কিছুতেই ফারিয়ার মন বসছে না।