চট্টগ্রামে ফের আসছেন পুরনো মুখ পুলিশ কর্মকর্তা কৃষ্ণপদ রায়। তাও দীর্ঘ পঁচিশ বছর পর। বাড়ি তার হবিগঞ্জ। পুলিশে তার প্রথম পোস্টিং ছিল বগুড়ায়। তবে কিছুদিন সেখানে চাকরি করেই সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) হিসেবে তিনি যোগ দিয়েছিলেন চট্টগ্রামে। এসি ডবলমুরিং হিসেবে ছুটে বেড়িয়েছেন নগরীর আনাচে কানাচে। সেই পুরনো শহরে এবার তিনি আসছেন পুলিশ কমিশনার হিসেবে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) নতুন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। এর আগে সর্বশেষ ২০২০ সালের ৩১ আগস্ট সিএমপি কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন সালেহ মোহাম্মদ তানভীর। নতুন প্রজ্ঞাপনে চট্টগ্রামসহ চার মহানগর পুলিশের কমিশনার হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে নতুন মুখ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারের উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) পদমর্যাদার কৃষ্ণপদ রায়সহ ছয় কর্মকমর্তাকে বিভিন্ন পদে বদলি বা পদায়ন করা হয়েছে। একই প্রজ্ঞাপনে সিএমপির বর্তমান পুলিশ কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীরকে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের পরিচালক হিসেবে বদলি করা হয়েছে।
সিএমপিতে বদলিকৃত পুলিশ কমিশনার হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের হালিতলা গ্রামের গোপাল চন্দ্র রায় এবং রমা রানী রায়ের প্রথম সন্তান কৃষ্ণপদ রায়ের লক্ষ্য ছিল সাংবাদিক হিসেবেই জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবেন। এ কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরুনোর পর একটি ইংরেজি দৈনিকে রিপোর্টার হিসেবে যোগ দেন তিনি। কিন্তু মানুষ ভাবে এক, হয় আর এক। ১৯৯৫ সালে ১৫তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বাংলাদেশ পুলিশে তিনি নিয়োগ পান। ঘুরে যায় তাঁর জীবনের মোড়। সাংবাদিক কৃষ্ণপদ রায় হয়ে যায় পুলিশ কর্মকর্তা।
তার কর্মজীবন শুরু হয় বগুড়ায়। বদলি হয়ে চলে আসেন চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) সহকারী কমিশনার হয়ে। এখানেই কাটে তার দীর্ঘ কর্মজীবন। এরপর পদোন্নতি পেয়ে শেরপুর জেলা এবং চাঁদপুর জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে পরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা জোনের ডেপুটি কমিশনার, ঢাকায় ডিবি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে পদোন্নতি পেয়ে ডিআইজি পদমর্যাদায় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ক্রাইম ও অপারেশন পদে দায়িত্ব পালন করেন। সবশেষ তিনি গত বছরের ৭ নভেম্বর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হিসেবে পূর্ণ দায়িত্ব পান।
পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনকালে চৌকস এই কর্মকর্তা ২০০২ থেকে ২০০৩ সালে কসবো, ২০০৬ থেকে ২০০৭ সালে লাইবেরিয়া এবং ২০১২ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত সুদানে জাতিসংঘের শান্তি মিশনে শান্তিরক্ষা কমিশনে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১২ সালে কৃষ্ণপদ রায়কে প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক পিপিএম এবং ২০১৫ সালে বাংলাদেশ পুলিশ পদক বিপিএম পদক দেওয়া হয়। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ১ ছেলে ও ১ মেয়ে সন্তানের জনক।
