বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে ২০২২–২৩ অর্থবছরের জন্য আগামী ৯ জুন দেশের জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করা হবে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যে জানা গেছে, ‘প্রস্তাবিত বাজেটের আকার হবে ৬ লাখ ৭৯ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। আসন্ন বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে প্রায় ২.৫ লাখ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৫.৫ শতাংশ। এটি হবে স্বাধীন বাংলাদেশের ৫২তম বাজেট, বর্তমান সরকারের টানা ১৪তম বাজেট এবং অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের চতুর্থ বাজেট। আগামী ২০২২–২৩ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ২ শতাংশ। অন্যদিকে, আগামী অর্থবছরে মূল্যম্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৫ দশমিক ৩ শতাংশ।’
দেশের শিক্ষা খাতের বাজেট নিয়ে এরই মধ্যে নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। বরাবরের মতো এবারও বাজেটে জাতির মেরুদণ্ড হিসেবে খ্যাত এই খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জোরদার হয়েছে বিভিন্ন মহল থেকে। করোনাকালের ব্যাপক ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা এবং প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রের মান উন্নয়ন, নতুন নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু, বিভিন্ন স্কুল–কলেজ ও মাদ্রাসা জাতীয়করণ, শিক্ষকদের সুযোগ–সুবিধা বাড়ানো, মানসম্মত শিক্ষক ও শিক্ষা নিশ্চিতের জন্য শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন অনেকে। কেউ কেউ আবার জাতীয় বাজেটের ২০ শতাংশ শিক্ষায় বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন। তবে শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, শিক্ষার মান বাড়াতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়নের চেয়ে গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রম জোরদার করতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দিতে হবে। তাঁরা বলেন, পাসের হার দিয়ে শিক্ষায় আমাদের অগ্রগতি হলেও মানের দিক থেকে আরও অনেক এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়ে গেছে। তাই খাতগত বরাদ্দের দিক থেকে শিক্ষায় উচ্চ বরাদ্দ প্রয়োজন।
প্রতিটি বাজেটে শিক্ষায় বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়। গত অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষা খাতে ৫ হাজার ৫৫১ কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছিল। বরাদ্দ বাড়ালেও শিক্ষাবিদরা শিক্ষা খাতের জন্য এ বরাদ্দকেও অপ্রতুল বলেছেন। তাঁরা বলেন, ‘এ বৃদ্ধিকে অত্যন্ত সামান্যই বলা যায়। বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দের ক্ষেত্রে একটা উল্লম্ফন ঘটানো দরকার। কিন্তু সেটি হচ্ছে না। এটা দুর্ভাগ্যজনক। বঙ্গবন্ধু সেই কবে ঘোষণা করেছিলেন, তিনি শিক্ষা খাতে জিডিপির ৪ শতাংশ বরাদ্দ চান। তার সময়ে তৈরি কুদরাত–ই–খুদা শিক্ষা কমিশন তাদের রিপোর্টে বলছে, শিক্ষা খাতে মোট বাজেটের ৫ থেকে ৭ শতাংশ দরকার। বঙ্গবন্ধুর দলটিই এখন ক্ষমতায়, কিন্তু তারা শিক্ষা খাতে মোট বাজেটের ২ শতাংশের বেশি কিছুতেই বরাদ্দ বাড়ায় না।’ বলা জরুরি যে, এই মহামারিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষা খাত। যদি সত্যিকার অর্থে এই ক্ষতি আমরা মোকাবিলা করতে চাই এবং শিক্ষাকে সক্ষমতার পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই, তাহলে সেখানেই তো কয়েক হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া উচিত।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, শিক্ষা সব জায়গায় একটা প্রায়োরিটি সেক্টর হিসেবে রাখা হয়েছে। তবে বাজেটের খরচের দিকে তাকালে দেখা যায় তা সাংঘর্ষিক। বাজেট যদি বাড়ানো না হয় তাহলে শিক্ষায় উন্নয়ন হবে কীভাবে। আমরা গত বছরগুলো থেকে যদি দেখি তাহলে দিনদিন শিক্ষায় বাজেট বাড়ার চেয়ে কমছে।
তাঁরা বলেন, অনেক বছর ধরে শিক্ষা আইনের খসড়া ঝুলে আছে। এই আইন কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষা খাতে যেসব সমস্যা আছে তা সমাধান করা যাবে না। যখন জাতীয় শিক্ষানীতি করা হয়, তখন শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ছিল জিডিপির আড়াই শতাংশ। বলা হয়েছিল, এই বরাদ্দ ক্রমান্বয়ে বাড়িয়ে জিডিপির সাড়ে ৪ শতাংশে উন্নীত করা হবে। বর্তমানে সেটা উল্টো কমে দাঁড়িয়েছে দেড় শতাংশে। পৃথিবীর অনেক দেশ, এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় বাজেটে শিক্ষায় বরাদ্দ ও ব্যয় আমাদের তুলনায় অনেক বেশি। ভারতে বাজেটে শিক্ষায় বরাদ্দ সে দেশের জিডিপির পৌনে ৪ শতাংশ, নেপালে সাড়ে ৪ শতাংশ, পাকিস্তানে আড়াই শতাংশ, ব্রাজিলে ৬ শতাংশ ও আফ্রিকার দেশ ঘানায় ৪ শতাংশ।
আসলে বাজেটে শিক্ষায় যে বরাদ্দ দেয়া হয়ে থাকে, তা অপর্যাপ্ত। শিক্ষা খাতে যথাযথ গুরুত্ব দেয়া হয় না। মোট কথা, বাজেটে ইতোপূর্বে যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। আমরা সরকারের কাছে জোর দাবি জানাই এ বরাদ্দ বৃদ্ধির জন্য।