সমুদ্রে পাওয়া মূল্যবান সি-উইড আসলে কী?

| শুক্রবার , ৭ জানুয়ারি, ২০২২ at ৫:০২ পূর্বাহ্ণ

সরকার সম্প্রতি জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের একান্ত সমুদ্র এলাকায় বিভিন্ন প্রজাতির বেশ কিছু মূল্যবান উদ্ভিদজাত এবং প্রাণীজ সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। প্রায় দু বছর ধরে গবেষণা চালিয়ে ২২০ প্রজাতির সি-উইড চিহ্নিত করা হয়েছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ৫ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছে। কর্মকর্তারা বলেছেন, যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারলে সি-উইড বাংলাদেশের জন্য ব্যাপক বাণিজ্যিক সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে।
সি-উইড আসলে কী : সি-উইড এর আক্ষরিক অর্থ সামুদ্রিক আগাছা। এটি একধরনের শৈবাল। এটি সালোক-সংশ্লেষণকারী ফুলবিহীন উদ্ভিদ এবং সাধারণত সাগর বা নদীর তলদেশে জন্মায়। এর কোনো শেকড়, ডালপালা ও পাতা থাকে না। এটি সাধারণত উপকূলীয় সামুদ্রিক এলাকার পাথর, বালি, কাদা, খোলস বা অন্যান্য শক্ত অবকাঠামোর সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। মূলত তিন ধরনের সামুদ্রিক শৈবাল দেখা যায়- লাল, বাদামি এবং সবুজ।
কী কাজে লাগে : সরকারের কৃষি তথ্য সার্ভিস বলছে, সি-উইড বিশ্বব্যাপী একটি গুরুত্বপূর্ণ জলজ সম্পদ। পুষ্টিগুণের বিচারে বিভিন্ন দেশে খাদ্য ও শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে এটি। তিন ধরনের সি-উইডের মধ্যে সবুজটি সাধারণত খাবার হিসেবে খাওয়া হয়। আর লালটি হাইড্রোকলয়েড উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। বাদামি সি-উইড খাবার ও হাইড্রোকলয়েড উৎপাদন দুই কাজেই ব্যবহার হয়। হাইড্রোকলয়েড উৎপাদন সাধারণত শিল্প উৎপাদনে জলীয় কাঁচামাল হিসেবে কাজে লাগে। খাবার হিসেবে ছাড়াও ডেইরি, ওষুধ, টেক্সটাইল, কাগজ শিল্প এবং জেল জাতীয় খাবারে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় সি-উইড।
বাণিজ্যিক সম্ভাবনা : বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গবেষণায় একান্ত সমুদ্র এলাকায় ২২০ প্রজাতির সি-উইড পাওয়ার কথা জানানো হয়েছে। তবে বাংলাদেশ সরকারের আরেকটি প্রতিষ্ঠান মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট বলছে বঙ্গোপসাগরের উপকূল ধরে চার বছরের গবেষণায় এ পর্যন্ত ১৪৩ প্রজাতির সি-উইড চিহ্নিত ও সংরক্ষণ করা হয়েছে। বাংলাদেশে উপকূলে সি-উইড চাষ এবং সি-উইডজাত পণ্য উৎপাদন গবেষণা সরকারি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. মহিদুল ইসলাম বলেছেন, এর মধ্যে ২৩ প্রজাতির সি-উইডকে বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে গবেষণায় দেখা গেছে। এই ২৩ প্রজাতির মধ্যে ১৮টি রপ্তানিযোগ্য ও বাণিজ্যিকভিত্তিতে লাভজনক। আর আমরা ৬টি প্রজাতি চাষ করে সফল হয়েছি, যা স্থানীয় কৃষকেরা বাণিজ্যিকভাবে চাষ করতে পারবেন। তিনি বলেন, একদিকে খাবার হিসেবে, আর সেই সাথে শিল্প উৎপাদনের কাঁচামাল হিসেবে সি-উইড রপ্তানির ব্যাপক বাণিজ্যিক সম্ভাবনা রয়েছে বাংলাদেশের। সরকারি উদ্যোগে বর্তমানে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, কুয়াকাটাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে চাষ হচ্ছে এই সামুদ্রিক শৈবাল। দেশে বর্তমানে পাঁচ হাজার টন সামুদ্রিক শৈবাল উৎপাদন হচ্ছে। ইতিমধ্যে পটুয়াখালীতে একটি গবেষণা ল্যাবও বসানো হয়েছে।
বাংলাদেশে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে সি-উইড চাষ করেছিলেন কঙবাজারের বাসিন্দা জাহানারা ইসলাম। নিজের আগ্রহে সি-উইড পরিচিতি, চাষ পদ্ধতি আর বিভিন্ন প্রজাতি সম্পর্কে নিরন্তর জানার চেষ্টা করছিলেন তিনি। এখন তিনি সি-উইড ব্যবহার করে নানা রকম খাবার তৈরি করেন। তিনি বলেছেন, সি-উইড ব্যবহার করে আমি ১২৮ রকমের খাবার তৈরি করেছি। সেগুলো দেশের ভেতরে বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হয়, উদ্যোক্তা ও সৃজনশীল মেলায় সেসব প্রদর্শিত হয় এবং বিক্রি হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাউজানে ফার্নিচারের দোকানে আগুন শিশুসহ দগ্ধ ২
পরবর্তী নিবন্ধভোজ্যতেলের দাম নিয়ে সিদ্ধান্ত মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি ঠিক করে