মানবজীবন আজ মহামারীর আঘাতে বিধ্বস্ত । এখন যোগ হয়েছে ওমিক্রন আতঙ্ক। সমাজে যখন বৈষম্য, মানুষে মানুষে এবং মানুষ-প্রকৃতির মধ্যকার সহ-সম্পর্কে অসমতা চরম রূপ ধারণ করে তখন নানা স্থানে প্রাকৃতিক বিপর্যয়সহ রোগব্যাধির প্রাদুর্ভাব ঘটে। তাই যে সকল অসমতা করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উৎস, মহামারী পরিস্থিতিতে সেগুলো আরও ঘনীভূত হয়। এমতাবস্থায় মহামারী থেকে মুক্তি কিংবা মহামারী-পূর্বাবস্থায় ফিরে যাওয়াই যথেষ্ট নয়। তা হলে কেবল বিদ্যমান অসম অবস্থাতেই ফিরে যাওয়া হবে; ভবিষ্যৎ মহামারী প্রতিরোধের ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে না। অর্থাৎ ‘নরমাল অবস্থায় ফিরে গেলে মহামারীর সম্ভাবনা থেকেই যাবে। মহামারী পরিস্থিতির মোকাবেলার জন্য দরকার‘নিউ নরমাল, যেখানে মহামারীর অব্যবহিত পূর্বাবস্থার সকল অসমতা ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পকের্র পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। মানুষে মানুষে এবং মানুষ-প্রকৃতির মাঝে আসঞ্জনশীল সম্পর্কই কেবল মহামারী পরিস্থিতি থেকে বিশ্বকে মুক্তি দিতে সক্ষম। এমতাবস্থায় কেবল বিকল্প জীবনবিধান নয়, মানুষ-প্রাণী-প্রকৃতির মধ্যকার সহজাত ও সামঞ্জস্যপূর্ণ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা ব্যতীত মহামারী পরিস্থিতি প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। তাই মহামারীর প্রস্তুতি বলতে সমাজে মহামারী পরিস্থিতি নিবারক পরিস্থিতিকে বুঝায়।
এ বিষয়ে বিশ্ববাসীকে সচেতন করার লক্ষ্যে, মহামারী পরিস্থিতি প্রতিরোধ ও মোকাবেলার জন্য রাজনৈতিক ইচ্ছা ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ এবং মানবিক গুণাবলি অর্জন করার জন্যজাতিসংঘ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০২০ সালের ২৭ ডিসেম্বর মহামারী প্রস্তুতির প্রথম আন্তর্জাতিক দিবস (International Day of Epidemic Preparedness) পালন করেছে। বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যসেবা খাতের অসঙ্গতি এবং করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সৃষ্ট বর্ধিত চাপ রোধ করার লক্ষ্যে মহামারীর জন্য প্রস্তুতি গুরুত্বপূর্ণ, যা দু’বছর ধরে পালিত হয়ে আসছে, মূলত করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের বাস্তবতায়। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের আহ্বানের ভিত্তিতে ২০২০ সালে প্রথম আন্তর্জাতিক মহামারী প্রস্তুতি দিবস পালিত হওয়ার পর গত বছর (২০২১) দ্বিতীয় বছর হিসেবে দিবসটি পালিত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, দিনটি মহামারী প্রতিরোধ, প্রস্তুতি এবং অংশীদারিত্বের তাৎপর্যকে চিহ্নিত করে। মহামারীর জন্য প্রস্তুতি সর্বদা বিশ্বজুড় সে্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। অতীতে, জিকা ভাইরাস, সোয়াইন ফ্লু ইত্যাদির মতো রোগের প্রাদুর্ভাব দ্বারা আক্রান্ত দেশগুলোকে সতর্কতা অবলম্বন করতে এবং করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের বাস্তবতায় বৈশ্বিক সতর্কতার জন্য দিবসটির গুরুত্ব অপরিসীম।
বিশ্বব্যাপি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ও মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বিগ্নতা থেকে মহামারী প্রস্তুতির আন্তর্জাতিক দিবস পালন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। করোনাভাইরাস অদ্যাবধি ২৯০ মিলিয়নের অধিক মানুষ আক্রান্ত করেছে, এবং ৫.৪ মিলিয়নেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে; বিশ্ব অর্থনীতিকে চরমভাবে বিধ্বস্ত করেছে, সমাজে-সমাজে, দেশে-দেশে বিদ্যমান আর্থ-সামাজিক ও স্বাস্থ্যখাতের দুর্বলতাগুলো উন্মোচন করেছে। এমতাবস্থায় ভবিষ্যতে এরূপ মহামারীর জন্য অপেক্ষা না করে বর্তমান ও অতীত মহামারী থেকে লব্ধ শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে জরুরীভিত্তিতে পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্যসেবার উপর (জনস্বাস্থ্য, জীবিকা ও সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে) মনোনিবেশ করার মাঝে এই দিবস পালনের গুরুত্ব নিহিত। বর্তমান মহামারী নিয়ন্ত্রণ ও পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি পূর্ববর্তী মহামারীর শিক্ষা থেকে পরবর্তীতে সম্ভাব্য মহামারী সম্পর্কে ভাবনা ও প্রস্তুতির সুযোগ রয়েছে। আগে থেকে যথাযথভাবে প্রস্তুতি না থাকলে মহামারী বা জরুরি পরিস্থিতিতে তা মোকাবেলা করা ভীষণ কঠিন, যার প্রমাণ ইতোমধ্যে বিশ্ববাসী করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে উপলব্ধি করেছে। এই উপলব্ধি থেকেই ভবিষ্যৎ মহামারী প্রতিরোধ বা প্রস্তুতির তাগিদ। এ প্রসঙ্গে জাতীসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসর বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য: ‘বর্তমান ও বিগত মহামারীর অভিজ্ঞতা অনেক কিছু শিক্ষালাভ ও প্রস্তুতির সুযোগ রয়েছে। ফলে, প্রস্তুতি একটি ভালো বিনিয়োগ, যার খরচ বা মূল্য জরুরি বা তাৎক্ষণিক সময়ের তুলনায় অনেক কম।’
সমাজের সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবাসহ শক্তিশালী স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলা এর মধ্যে অন্যতম। করোনা পরিস্থিতি এড়ানো এবং প্রতিরোধের জন্য সবার জন্য সামাজিক সুরক্ষা আরও বেগবান ও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। সামনের সারিতে অবস্থানরত তথা সামর্থ্যবান দেশ, সংস্থা ও জনগণের আর্থিক সমর্থন এক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রয়োজন। সকল দেশের জন্য প্রয়োজন আরও কার্যকর প্রযুক্তিগত সহযোগিতা। বিশ্ববাসীকে বিজ্ঞানভিত্তিক জীবন বিধানে অভ্যস্ত করতে হবে, এবং মানুষ-প্রকৃতি-প্রাণীর মধ্যকার সম্পর্ক সহজাত হওয়া আবশ্যক। পুরাতন ও বর্তমান সংক্রামক রোগের বেশিরভাগই (প্রায় ৭৫শতাংশ) প্রাণী উদ্ভূত; তাই, প্রাণীর প্রতি সদয় ও স্বাভাবিক আচরণ প্রত্যাশিত।বিজ্ঞানের সাথে সামাজিক জ্ঞানকাণ্ড ও সামাজিক সম্পর্ককে সমন্বিত মডেলে প্রয়োগ ঘটাতে হবে। প্রাত্যহিক জীবন স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে অভ্যস্ত হতে হবে। একইসাথে করোনাভাইরাস মহামারী এই শিক্ষা দিয়েছে যে সমাজের সবাই নিরাপদ নাহলে কেউই নিরাপদ থাকতে পারবে না; এমনকি সারা পৃথিবীর ক্ষেত্রেও তা সমভাবে প্রযোজ্য।
কোভিড-১৯ একটি মানবিক ট্র্যাজেডি। তবে এটি বিশ্ববাসীর জন্য প্রভূত সুযোগ সৃষ্টির পথও দেখিয়েছে। বিদ্যমান অসঙ্গতিসমূহ দূরকরত ভবিষ্যতের মহামারী বা মানবিক দুর্যোগ প্রতিরোধের পথ দেখিয়েছে। লক্ষ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে এটি একটি টেকসই ও সমতাভিত্তিক সমাজ নির্মাণের তাগিদ সৃষ্টি করেছে। নির্দেশিত সামাজিক চুক্তি বা সম্পর্ককে মানুষ কতটা কাজে লাগাতে সক্ষম হবে তার উপর নিভর্র করছে ভবিষ্যৎ মহামারীর সম্ভাবনা, পরিস্থিতি ও তার মোকাবেলা। যদি বিশ্ববাসী এই শিক্ষা ও সুযোগকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারে তাহলে একদিকে ভবিষ্যতের মহামারী প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে; অন্যদিকে বিদ্যমান সামাজিক অসমতা থেকে মানুষ মুক্তি পাবে। এক্ষেত্রে শিক্ষা, গবেষণা, সংহতি ও স্বাস্থ্যসেবা অনিবার্য অনুষঙ্গ।
২০২০-২১ এর করোনা পরিস্থিতি থেকে সঠিক শিক্ষালাভে ব্যর্থ হলে গত দুই দশক ধরে বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে তা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পাশাপাশি অন্যান্য স্বাস্থ্য পরিসেবাগুলো নিশ্চিত করতে হবে: যেমন টিকা, নারী ও শিশুস্বাস্থ্য, ডায়াবেটিস, এইচআইভি এইডস, ম্যালেরিয়া ইত্যাদি। অতীত ও বিদ্যমান মহামারী থেকে ভবিষ্যৎ মহামারীর প্রস্তুতি হিসেবে নিন্মোক্ত বিশেষ উপায়সমূহ অবলম্বন কার্যকর হতে পারে। (১) বৈশ্বিক সংহতি: করোনাভাইরাস মহামারী আমাদের শিক্ষা দিয়েছে যে সবাই নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত কেউ নিরাপদ নয় এবং তা নিশ্চিত করার জন্য, সকলকে স্বাস্থ্য ও জীবিকা-সহ সকল প্রকার সেবার আওতায় আনা আবশ্যক। টিকা থেকে শুরু করে সোনসাস্থ্যের সকল ক্ষেত্রে সুষম বন্টন নিশ্চিত না হলে তথা বিশ্বব্যাপী সংহতি বিধান না হলে মহামারী প্রতিরোধ বা মোকাবেলা আরও দুরহ হয়ে পড়বে। (২) পরীক্ষা ও ওষুধ সরবরাহ: প্রয়োজনীয় পরীক্ষা, ওষুধ ও টিকার ক্ষেত্রে সহজলভ্যতা ও ন্যায্যতার উপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। (৩) অগ্রিম স্বাস্থ্যসেবা: বিদ্যমান স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার জন্য স্বাস্থ্য ও পরিচর্যা কর্মীর স্বার্থ নিশ্চিত করার উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে, যাতে তারা মহামারী প্রতি প্রয়োজনীয় সাড়া দিতে পারে এবং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করতে পারে। তাদের আর্থিক অবস্থা ও জীবিকার উপর সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। (৪) বিদ্যমান বৈষম্য নিরসন: করোনাক্রান্ত দেশগুলোর মধ্যে করোনা পরিস্থিতিতে যে সকল বৈষম্যসমূহ উন্মোচিত হয়েছে, মানুষের আয়, লিঙ্গ, জাতিসত্তা, প্রত্যন্ত গ্রামীণ মানুষ বাঅনগ্রসর মানুষের বসবাস, শিক্ষা, পেশা, জীবিকা, কর্মসংস্থান, ইত্যাদি প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। (৫) বিজ্ঞানভিত্তিক জীবনাচার : মহামারী-সহ স্বাস্থ্য জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলা ও প্রতিরোধ করার জন্য দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানভিত্তিক জীবনবিধান ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা আবশ্যক। (৬) সংক্রমণ মোকাবেলা: লকডাউনের মত জরুরি পরিস্থিতিতে হাম ও হলুদ জ্বরের মতো অন্যান্য রোগব্যাধি প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় টিকা ও ওষুধ সরবরাহ অব্যাহত রাখা অত্যাবশ্যক। (৭) প্রতিরোধক্ষম স্বাস্থ্যব্যবস্থা: প্রতিরোধী স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালীকরণ ও স্বাস্থ্যসংক্রান্ত জরুরি প্রস্তুতির পরিকল্পনা গ্রহণকরতে হবে। সংক্রামক রোগের অবসানের জন্য বিশ্বব্যাপী প্রচেষ্টা সফল করার জন্য চিকিৎস্যর জন্য কার্যকর ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। (৮) এনসিডি ও মানসিক স্বাস্থ্য প্রতিরোধ ওচিকিৎস্য: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বৈশ্বিক স্বাস্থ্য অনুমান থেকে দেখা যায় ২০১৯ সালে মৃত্যুর শীর্ষ ১০টি কারণের মধ্যে ৭টি অসংক্রামক রোগ (এনসিডি)। এনসিডি আক্রান্ত ব্যক্তিরা বিশেষভাবে কোভিড-১৯এর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। তাই কেবল মহামারী আক্রান্ত রোগীরা নয়, অন্যান্য রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। (৯) স্বাস্থ্যব্যবস্থার সুসংহতকরণ: একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি থেকে সকল ক্ষেত্রে শিক্ষা লাভ করা আবশ্যক। করোনাভাইরাসের অভিজ্ঞতা থেকে বিদ্যমান ও ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সমন্বিত প্রস্তুটি গ্রহণ করতে হবে। এই মহামারীর অভিজ্ঞতা থেকে জলবায়ু পরিবর্তন-সহ বিদ্যমান সকল বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবেলা করা, বায়ু দূষণ কমানো এবং বায়ুরগুণমান উন্নীতকরণ করতে হবে। (১০) সংহতিসূচক কর্মপন্থা: করোনাভাইরাস বিশ্ববাসীকে পারস্পরিক জীবনযাপনে আরও বেশি সংহতি প্রদর্শনের প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট করেছে। তাই নিজেরদের জীবন সংক্রমণমুক্ত রাখতে এবং জীবন বাঁচানোর প্রয়োজনে ব্যক্তি, জাতি, সমপ্রদায় ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রতিরক্ষার ফাটলগুলো বন্ধ করত পারস্পরিক সংহতিবিধান করতে হবে।
বর্তমান চলমান করোনভাইরাস মহামারী থেকে বুঝা যায়, সংক্রামক রোগ ও মহামারীগুলো মানুষের জীবনে চরম ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলে, দীর্ঘমেয়াদী সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বিধ্বস্ত করে। বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংকট ইতোমধ্যে বিদ্যমান স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে ঝুঁকিময় করে তুলেছে, বৈশ্বিক যোগাযোগ ও আন্তঃরাষ্ট্র সম্পর্ককে চরমভাবে ব্যাহত করেছে, এবং নারী ও শিশুসহ মানুষের জীবিকা এবং দরিদ্রতম ও দুর্বল দেশগুলোর অর্থনীতিতে অপূরণীয় ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। সেজন্য যে কোন হুমকি বা ঝুঁকিময় পরিস্থিতি প্রতিরোধ বা মোকাবেলায় একটি স্থিতিস্থাপক ও শক্তিশালী স্বাস্থ্যব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন, যাতে করে দুর্বল বা ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতে তাদের কাছে যথাসময়ে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানো সম্ভব হয়। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক মহল এটি উপলব্ধি করেছে যে বৈশ্বিক সুষম মনোযোগের অনুপস্থিতির কারণে মহামারীর তীব্রতা পূর্ববর্তী প্রাদুর্ভাবকে ছাড়িয়ে গেছে। এমতাবস্থায়, স্থানীয়, জাতীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পর্যায়ে মহামারী প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা হিসেবে সচেতনতা বৃদ্ধি, তথ্যের আদান-প্রদান, বৈজ্ঞানিক জ্ঞান, স্বাস্থ্যবিধির সর্বোত্তম অনুশীলন, মানসম্পন্ন শিক্ষা এবং এডভোকেসি বা প্রচারমূলক কর্মসূচির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
মহামারী ব্যবস্থাপনা এবং কিভাবে মৌলিক পরিসেবাগুলো সচল রেখে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা যায় সে বিষয়ে লব্ধ শিক্ষা যথাযথভাবে প্রয়োগ করে মহামারী প্রতিরোধের প্রস্তুতি গ্রহণ সম্ভব। যে কোন সময়ে মহামারী পরিস্থিতি দেখা দিলে তার জন্য দ্রুততম ও পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যসেবা এবং সংশ্লিষ্ট জীবন-জীবিকার নানা ইস্যুতে প্রয়োজনীয় সাড়া প্রদানের জন্য প্রস্তুতি বৃদ্ধি ও স্বীকৃতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সর্বোপরি একটি সমন্বিত স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে, যা মানবস্বাস্থ্য, প্রাণিস্বাস্থ্য, উদ্ভিদস্বাস্থ্য, এবং সেই সাথে পরিবেশগত ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট খাতগুলোর (জীবিকা, বাসস্থান, সংহতি, নিরাপত্তা, ইত্যাদি) একীকরণকে উৎসাহিত করে মহামারী প্রতিরোধক্ষম পরিবেশ নিশ্চিত করতে সক্ষম।
লেখক: অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।