অবশেষে বায়েজিদ-ফৌজহারহাট লিংক রোডে কাটা ১৬ পাহাড় ঝুঁকিমুক্ত হতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে খাড়া দাঁড়িয়ে থাকা ১৬ পাহাড়কে পরিবেশসম্মতভাবে কাটার ডিজাইন চূড়ান্ত করেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে (সিডিএ) বিশেষজ্ঞ টিম। আগামী সপ্তাহে পরিবেশ অধিদপ্তরে এ প্রস্তাবনা জমা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস। প্রধান প্রকৌশলী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানে কাটা হবে ১৬ পাহাড়। পাহাড়গুলো কাটার পাশাপাশি করা হবে সবুজায়নও।’ ইতোমধ্যে পাহাড় ধসের ঝুঁকি কমে আসায় প্রায় ৭ মাস পর খুলে দেওয়া হলো সড়কটিতে বন্ধ রাখা একপাশ।
জানা যায়, ৬ কিলোমিটারের বায়েজিদ-ফৌজহারহাট লিংক রোড নির্মাণে কাটা হয় ১৬টি পাহাড়। একেবারে নতুন রাস্তাটি নির্মাণের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে আড়াই লাখ ঘনফুট পাহাড় কাটার অনুমোদন নিয়ে সিডিএ ১০ লাখ ৩০ হাজার ঘনফুট পাহাড় কাটে। পরবর্তীতে গত বছরের ২৯ জানুয়ারি পাহাড় কেটে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস, পাহাড়ের উপরিভাগের মাটি এবং ভূমির বাইন্ডিং ক্যাপাসিটি নষ্টসহ পরিবেশ-প্রতিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি সাধন করার দায়ে ১০ কোটি ৩৮ লাখ ২৯ হাজার ৫৫৩ টাকা জরিমানা নির্ধারণ করে পরিবেশ অধিদপ্তর। একইভাবে গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি আরেক শুনানিতে প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডকেও ৫ কোটি ২৩ লাখ ২০ হাজার টাকা জরিমানা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। জরিমানার দুই মামলা আপিল শুনানিতে এখনো নিষ্পত্তি হয়নি বলে জানা গেছে।
পরবর্তীতে প্রকল্পে আগে কাটা ১৬টি পাহাড় ২২.৫ ডিগ্রি এঙ্গেলে কাটার প্রস্তাবনা দিলেও পরিবেশ অধিদপ্তর না করে দেয়। পরে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অনুমোদন চাওয়া হলেও ২২.৫ ডিগ্রি এঙ্গেলে পাহাড় কাটার সম্মতি মেলেনি। এরপর ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলো কাটা ও সংরক্ষণ কিভাবে করা হবে, সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মতামতসহ প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশনা দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। এরপর সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলীর নেতৃত্বে প্রকল্প পরিচালক ও চুয়েটের দুই শিক্ষকের সমন্বয়ে চার সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি করা হয়। ইতোমধ্যে বিশেষজ্ঞ কমিটি তাদের প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে। মূলত চুয়েটের দুই শিক্ষকই পাহাড়গুলোর ব্যবস্থাপনার মূল পরিকল্পনা ও ডিজাইন তৈরি করেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে সরেজমিনে বায়েজিদ-ফৌজদার লিংক রোডে গিয়ে দেখা গেছে, বৃষ্টিতে পাহাড় ধস শুরু হওয়ায় দুর্ঘটনারোধে গত ২১ এপ্রিল থেকে সড়কটির একপাশে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। বর্ষাকালে কয়েকটি পাহাড় ধসে সড়কটিতে মাটির স্তুপ তৈরি হয়। গত সপ্তাহে পাহাড়গুলোর পাদদেশ থেকে ধসে পড়া মাটি সরিয়ে নেয় সিডিএ। এরপর যান চলাচলের জন্য সড়কটিতে আড়াআড়ি দেওয়া আরসিসি ব্লকগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়।
সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘বায়েজিদ লিংক রোডের ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলো থেকে ধসে পড়া মাটি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কয়েকদিন আগে বন্ধ থাকা সড়কের একপাশ যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, রোডটিতে কাটা ১৬টি পাহাড়কে নতুন করে পরিবেশসম্মত উপায়ে কাটার প্রস্তাবনা ও ডিজাইন প্রস্তুত করা হয়েছে। আগামী সপ্তাহে পরিবেশ অধিদপ্তরে প্রস্তাবনা জমা দেওয়া হবে। পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার পর পাহাড়গুলো কাটার কাজে হাত দেওয়া হবে। প্রধান প্রকৌশলী বলেন, উন্নত বিশ্বে যেভাবে পাহাড় ব্যবস্থাপনা করা হয়, সেভাবেই পাহাড়গুলোকে কাটা হবে। কিছু পাহাড়ে রিটেইনিং ওয়াল, কিছুতে জিও টেঙ, জিও ম্যাশ দিয়ে গ্রিন এনভায়রনমেন্ট তৈরি করা হবে বলে জানান তিনি।’