ব্যক্তিগত অনেক ব্যস্ততা -অসুবিধার মধ্যেও আজ কলম হাতে বসতে পেরেছি-এ আমার সান্ত্বনা, এ আমার আনন্দ। তাই হৃদয়ে লালিত ইচ্ছেগাথা: দৈনিক আজাদীর ইতিহাস-ঐতিহ্যের কথামালার ফুলেল বাগানে আমারও কিছু বাক্যের শব্দপুষ্প নিভৃতে জমা হোক। -৬২র পথচলার শুভবোধে প্রার্থনা, শতবর্ষ হয়ে আগামীর পানে আগুয়ান থেকে চিরঞ্জীব হোক এ পত্রিকা। সারাদিন সারারাত যারা এ পত্রিকা প্রকাশ করার কর্মপ্রয়াসে আত্ম নিবেদিত, আজাদী পড়ে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতায় মন ভরে ওঠে। আজাদীর প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে তাদের সবাইকে জানাই, গুচ্ছ গুচ্ছ পুষ্প স্তবকের নির্মল শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আবদুল খালেক পরবর্তী অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ এর সম্পাদনা গুণের ধারাবাহিকতায় বর্তমান সম্পাদক এম. এ. মালেক, পরিচালনা সম্পাদক ওয়াহিদ মালেক এবং সাংবাদিকদের আকাশ ছোঁয়া উদারতার বদান্যতায় আজাদী হয়ে উঠেছে লেখক তৈরীর মহান এক শৈল্পিক কারখানা। তাই পুণ্যভূমি -স্বর্গদুয়ার চট্টগ্রামের পুণ্যার্থী-স্বর্গ প্রত্যাশীর মতো পাঠক আজাদীর প্রতি অনুরক্ত হয়ে পাঠ-জ্ঞানে নিজেকে সমৃদ্ধ করে এবং আত্মিক সন্তুষ্টি অর্জনে লাভবান হয়। এইজন্য এ পত্রিকা আদ্যোপান্ত পাঠ করে বেশিরভাগ মানুষ। আজাদীতে দেশ-বিদেশের ঘটনাবহুল বিবিধ সংবাদ ঠিক গল্পের মত নিপুণভাবে পরিবেশন করা হয়। এগুলো পাঠকের হৃদয় ছুঁয়ে যায়,তাই একটার পর আরেকটা না পড়ে পত্রিকা রেখে দেয়া যায় না। কারণ সুখ দুখের সংবাদ নাড়া দেয় মানুষকে। বিশেষ করে মানুষের বাস্তব জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো জীবন্ত করে চোখের সামনে তুলে ধরে এ দৈনিক। তাই পত্রিকা পাঠ করার সাথে সাথে পাঠক ছবিসহ তা দেখে, উপলব্ধি বা অনুভব করে এবং মানুষের সুখের দুঃখের সাথে একাত্ম হয়ে পড়ে। অর্থাৎ এরূপ ঘটনাবহুল শুভ-অশুভ সংবাদের প্রেক্ষিতে আজাদী পাঠককে সুখী অথবা দুঃখী করে তোলে। আজাদী মানবতার পক্ষে, মঙ্গলের দিকে মানুষকে আকৃষ্ট করে। আবার ভাল-মন্দ বুঝার জ্ঞান দানে এবং মন্দ থেকে নিবৃত্ত করতে এটি মানুষের জন্য আলোর প্রদীপ হয়ে উপকারী বন্ধুর ভূমিকা পালন করে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই আজাদীর, আজাদী সবার। প্রত্যেক ধর্মাবলম্বীর নানান সংবাদ, ধর্ম বিষয়ক লেখা, প্রবন্ধ এই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। আরো প্রকাশ পায় ধর্মতত্ত্ব কুরআন-হাদিসের অনুবাদ-বাণী, উপদেশমূলক স্মরণীয় বাণী এবং তথ্য-কণিকায় মনীষীদের সংক্ষিপ্ত জীবন কর্ম। এগুলো মানুষের জন্য মহাশিক্ষা। যেগুলো পাঠে উপলদ্ধিতে মানস জগত জ্ঞানালোকে সমপ্রসারিত হয়। যার প্রভাব বাস্তবতার জীবন গঠনের সহায়ক , আদর্শ পথ তৈরি করে দেয়।
আজাদীর তথ্য কণিকার উপস্থাপনা দেখলে নিজেকে একান্ত তুচ্ছ মনে হয়। কারণ খ্যাতিমান কবি সাহিত্যিক সাংবাদিক বিজ্ঞানী তথা বহু মনীষীর স্মরণে উপস্থাপনকৃত তাদের কর্মকৃতির উজ্জ্বলতা আমাদের মাঝে বিস্ময় জাগায়! দৈনিক আজাদীর সম্পাদকীয় উপ-সম্পাদকীয় এর পাশাপাশি সুখে দুখে ফেসবুকে, চিঠিপত্র এবং
এই দিনে -এর মধ্যে সালসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ভাবে উল্লেখযোগ্য দিনগুলোর বিশ্ব ইতিহাস পরিক্রমা তুলে ধরা হয়। আজাদীতে প্রকাশিত সুলিখিত রম্য রচনা, কৌতুক কণিকা এর গুরুত্বও কম নয়। এগুলোর উপাদানে রয়েছে আনন্দ ও একরাশ হাসির ঝিলিক। যা পাঠকের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। তবে এগুলোর মাধ্যমে অজানা বহু বিষয়কে বোধগম্য করে তোলে আজাদী। এসব থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে শিক্ষা গ্রহণ করার বাড়তি সুযোগ রয়েছে। এছাড়া আগের আনন্দন, মহিলা মহফিল, আজমিশালীসহ বর্তমানে খোলা হাওয়া, নারী, সৃজনে আনন্দে, আগামীদের আসর ও সাহিত্য পাতার বিভাগীয় সম্পাদকের দূরদর্শিতার কারণে প্রবীণের পাশাপাশি নবীন লেখকের ভালো ভালো লেখা প্রকাশ পাচ্ছে আজাদীতে। তাই সকল বিভাগীয় সম্পাদকের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
একবার এক মহিলা আজাদীতে লিখেন : কঠিন রোগের সময় তিনি এ দৈনিকে প্রকাশিত দোয়া, স্মরণীয় বাণী পড়ে নিয়মিত প্রার্থনা করতেন। তার বিশ্বাস এ আমলের জোরে মহান রব তাকে সুস্থ করে দিয়েছেন। তাই সুস্থ হয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ পূর্বক তিনি তা লিখেছেন। মানুষকে প্রাধান্য দিয়ে লেখা প্রকাশে অকৃপণ হস্ত দৈনিক আজাদীর সম্পাদক এবং সাংবাদিক বৃন্দ। কোন কোন পত্রিকায় লেখা উপেক্ষিত হয় ছাপানো হয় না। তাই অপেক্ষায় থেকে হতাশ হয়ে সেদিকে আর পা মাড়ায়না অনেক কবি লেখক। এমতাবস্থায় দৈনিক আজাদীতে লেখা প্রকাশ হলে হৃদয়ে অনাবিল শান্তি আসে এবং লেখার
আকর্ষণে মনের উৎসাহে এ দৈনিকের প্রতি এক ধরনের ভালোলাগা থেকে ভালোবাসা জন্ম লাভ করে। সেই ভালোবাসা থেকেই লেখালেখির চর্চা করে কবি-লেখকবৃন্দ। সুযোগ পেলে ভাল লেখার জন্য ওরা পরিশ্রমের মাধ্যমে প্রচুর অধ্যয়ন বা পড়াশোনা করে। অবশেষে প্রতিষ্টিত কবি লেখক সাহিত্যিক হওয়ার সাধনায় এগিয়ে যেতে পারে। আজাদী লেখা প্রকাশের মাধ্যমে লিখিয়েদের জন্য এধরনের উদ্যোগ গ্রহণে উদ্দীপনা সৃষ্টি করে।
লেখালেখিতে পুরুষের পাশাপাশি নারীর বিকাশের ক্ষেত্রে দৈনিক আজাদীর ভূমিকা অগ্রগণ্য। তাই যুগে যুগে উপেক্ষিত নারী, সমাজের পারিপার্শ্বিকতার বাধার প্রাচীর ডিঙিয়ে অবরোধের শৃঙ্খল ভেঙ্গে লেখালেখি নিয়ে উঠে আসতে পেরেছেন। এমনকি রক্ষণশীল পরিবারের নারী ও আজাদীতে লেখার ক্ষেত্রে স্বাধীন,প্রগতিশীল। নারীর প্রতি সম্মানবোধে দৈনিক আজাদী প্রকাশ করে নারীর লেখা। তাই বর্তমানে এত এত নারী লেখক আরো লেখালেখি নিয়ে উঠে আসছেন। আজাদী না হলে এত বেশি নারীর লেখা প্রকাশ পেতো কি? অন্য কোনো দৈনিকে এমনটি দেখা যায় কি? শুধু নারী কেন, এ দৈনিক না হলে অন্যান্য কবি-সাহিত্যিক শিশুতোষ লেখকও কি তাদের এতো লেখা প্রকাশ করতে পারতন? সৃজনশীল প্রচুর লেখা প্রকাশের নেপথ্যে কাজ করছেন দৈনিক আজাদীর স্বয়ং কর্তৃপক্ষ এবং উদার দৃষ্টিভঙ্গির বড় মাপের সাংবাদিকবৃন্দ। তাঁদের আন্তরিকতা সহযোগিতা সনিষ্ঠতায় প্রাগ্রসর আধুনিকতায় আজাদীর সুনাম দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। লেখা প্রকাশে সেরা হওয়াতে বিশ্বময় পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করেছে এ দৈনিক। মূল্যবান লেখা প্রকাশ করার সুবাদে দেশ-বিদেশের বহু জ্ঞানীগুণী মনীষী
ব্যক্তিবর্গ লিখে দৈনিক আজাদীকে আরো সমৃদ্ধ করছেন। এভাবে গুণীজনদের সাথে সকল পাঠককে পরিচয় করে দিচ্ছে এ মহান দৈনিক। তাই বলা যায়, মানুষের বিবেকবোধ, বিবেচনা শক্তি জাগ্রত করতে, মনুষ্যত্বের উন্মেষ ঘটাতে দৈনিক আজাদী সকল কালে সকল যুগে বিশেষ ভূমিকা পালন করে চলেছে। তাই দৈনিক আজাদীর এরূপ পথ চলাতে আমাদের আনন্দ, শুভযোগ।
লেখক : কবি-প্রাবন্ধিক; বিভাগীয় প্রধান, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ, মহিলা কলেজ-চট্টগ্রাম।