দলের কর্মকৌশল ঠিক করতে জ্যেষ্ঠ নেতাদের পর এবার কেন্দ্রীয় ও মাঠ পর্যায়ের নেতাদের নিয়েও বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া বৈঠক টানা তিন দিন চলবে বলে গতকাল রোববার বিকেলে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তিনি বলেন, গত ১৪, ১৫ ও ১৬ তারিখে দলের জাতীয় কার্যানির্বাহী কমিটির ধারাবাহিক সভায় মতবিনিময় হয়েছে। অবশিষ্ট সদস্যদের সঙ্গে আগামী ২১, ২২ ও ২৩ সেপ্টেম্বর মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে গত কালকের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে। কেন্দ্রীয় কমিটির বাইরে মাঠ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গ মতবিনিময় হবে কিনা প্রশ্ন করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, এই তিনদিনের সভায় তারাও থাকবেন। কারণ জেলার সভাপতি ‘এঙ অফিসিও’ হিসেবে পদাধিকার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য; তারা অবশ্যই আসবেন।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে টানা তিন দিন দলের ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিল, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক, সম্পাদকমণ্ডলী এবং অঙ্গসংগঠনের নেতাদের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়। এসব বৈঠকে দেশের বর্তমান অবস্থা ও দলের করণীয় কি হওয়া উচিত তার নিয়ে নেতাদের মতামত শুনেছেন দলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, যখন ধারাবাহিক সভাগুলো শেষ হবে তখন আমরা সময়মতো আমাদের মতামতগুলো আপনারা জানতে পারবেন। আমাদের পরবর্তী কর্মপন্থাও জানতে পারবেন। এসব মতবিনিময় সভায় রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক বিষয় আলোচনা হয়েছে। পুরো রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বর্তমান পরিস্থিতি, এক দলীয় শাসন প্রবর্তন করবার যে একটা প্রচেষ্টা, বিরোধী দলের ওপরে যে নির্যাতন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দেওয়া, মিথ্যা মামলা-গায়েবি মামলা ইত্যাদি বিষয় আলোচনা হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের বেশির ভাগ কমিটি তাদের পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেছে, কাজ চলছে। অঙ্গসংগঠনগুলোরও কাজ শুরু হয়েছে বেশি কিছুদিন ধরে। থানা পর্যায়ে, মাঠ পর্য়ায়ে হয়ে গেছে, ইউনিয়ন পর্যায়ে হয়েছে। এখন জেলা পর্যায়ের হয়ে যাবে, হতে যাচ্ছে। যেহেতু করোনা মহামারী সেই কারণে সম্মেলনগুলো করা সম্ভব হয়নি। বেশিরভাগ জায়গায় সম্মেলনের জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। ঠিক একইভাবে বিএনপিরও যেসব মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি আছে সেসব মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো নতুন করে আহবায়ক কমিটি গঠন করা হচ্ছে। তারা ওয়ার্ড পর্য়ায় থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়ে একেবারে মাঠ পর্যায়ে এবং একেবারে জেলা পর্যায়ে কাজ শুরু করেছে। কয়েকটি জেলায় সম্মেলন অতি দ্রুত শেষ হবে।
খালেদাকে ভয়, তাই…
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের অভিযোগ, সরকার ভয় পায় বলেই খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দিচ্ছে না। গতকাল রোববার বিকেলে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়ানোর বিষয়ে প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, আপনারা সবাই জানেন, উনি তো অসুস্থ ছিলেন। তখন তার পরিবারের পক্ষ থেকে বিদেশ যাওয়ার জন্য আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু তখন যেটা সরকার দেয়নি। আমরা খুব আশ্চর্য হয়নি যে, এখনও সরকার এই কয় মাসের মধ্যে বিদেশ যেতে পারবেন না-এই একটা শর্ত জুড়ে দিয়েছে।
মির্জা ফখরুলের অভিযোগ, মূল বিষয়টা হচ্ছে যে, তারা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এত বেশি ভয় পান যে, তাকে কোনো মতেই তারা দেশের বাইরে যাওয়া বা মুক্ত করার বিষয়টা তারা ভাবতেই পারে না। এজন্য তার এত অসুস্থতার পরও চিকিৎসার জন্য যখন তার ডাক্তাররা বলছেন, হাসপাতাল বলছে, এডভান্স ট্রিটমেন্টের জন্য তাকে এডভান্স সেন্টারে নিয়ে যাওয়া দরকার। তখন দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকার যেটাতে একমত হচ্ছে এবং মতামত দিচ্ছে না, তাকে আটকিয়ে রাখছে।












