দেশে এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যু, রেকর্ড শনাক্ত

| মঙ্গলবার , ২৭ জুলাই, ২০২১ at ৬:২২ পূর্বাহ্ণ

ঈদের আগে লকডাউনের বিরতি দেওয়ায় ঝুঁকির কথা বলেছিলেন বিশেষজ্ঞরা, তা ভয়ঙ্করভাবে সত্যি করে একই দিনে পুরনো সব রেকর্ড ভেঙে দিল শনাক্ত কোভিড রোগী আর মৃত্যুর সংখ্যা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল সোমবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে রেকর্ড ৫১ হাজার নমুন পরীক্ষা করে ১৫ হাজার ১৯২ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। আর আক্রান্তদের মধ্যে আরও ২৪৭ জনের প্রাণ গেছে এ ভাইরাসের কারণে।
গত বছর মার্চে দেশে করোনার প্রকোপ শুরুর পর এক দিনে এর চেয়ে বেশি রোগী আর কখনও শনাক্ত হয়নি। এত মৃত্যুও আর কখনও দেখতে হয়নি বাংলাদেশের মানুষকে। নতুন আক্রান্তদের নিয়ে দেশে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৮২৭ জনে। আর আক্রান্তদের মধ্যে মোট ১৯ হাজার ৫২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। সরকারি হিসেবে এক দিনে সেরে উঠেছেন ১১ হাজার ৫২ জন। তাদের নিয়ে এই পর্যন্ত সুস্থ হলেন ১০ লাখ ৯ হাজার ৯৭৫ জন। অর্থাৎ, এখনও সারা দেশে সক্রিয় সংক্রমণ রয়েছে দেড় লাখের বেশি মানুষের দেহে। খবর বিডিনিউজের।
করোনাভাইরাসের দাপটে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা গত ২৭ জুন থেকেই একশর উপরে থাকছিল প্রতিদিন। ৭ জুলাই তা প্রথমবারের মতো ২০০ ছাড়িয়ে যায়। সর্বশেষ ১৯ জুলাই ২৩১ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, এতদিন সেটাই ছিল রেকর্ড।
শনাক্ত ও মৃত্যু হু হু করে বাড়তে থাকায় ১ জুলাই থেকে সারা দেশে লকডাউনের কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা হয়। তবে তাতে সংক্রমণের বিস্তারে তেমন কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যায়নি। বিধিনিষেধের মধ্যেই ৬ জুলাই প্রথমবারের মতো দৈনিক শনাক্ত রোগী ১০ হাজার ছাড়ায়। তারপর ১২ জুলাই ১৩ হাজার ৭৬৮ জন নতুন রোগী শনাক্তের খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এটাই ছিল এতদিন সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড।
এমন পরিস্থিতিতে কোরবানির ঈদ সামনে রেখে ১৫ জুলাই থেকে লকডাউন শিথিল করে বলা হয়, ঈদের ছুটির পর আবার কঠোর বিধিনিষেধ শুরু হবে। অফিস-আদালত, হাট-বাজার, যানবাহন সবই চলেছে এই নয় দিনে, গাদাগাদি করে মানুষ গ্রামে গেছে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে।
কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ তখন বলেছিলেন, দেশে যখন করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি, তখন সব বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ায় সংক্রমণ বাড়ার ঝুঁকি তৈরি হলো। ঈদের ছুটির মধ্যে দৈনিক নমুনা পরীক্ষা কমে যাওয়ায় প্রতিদিন শনাক্ত রোগীর সংখ্যাও কমে গিয়েছিল। নমুনা পরীক্ষা বাড়ায় রোববার শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা ফের ১১ হাজার ছাড়িয়ে যায়। সেই সঙ্গে মৃত্যু হয় সোয়া দুইশ মানুষের। তার পরদিনই রেকর্ড নমুনা পরীক্ষার সঙ্গে রেকর্ড শনাক্ত আর এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ মৃত্যুর খবর এল।
গত এক দিনে শুধু ঢাকা বিভাগেই ৭ হাজার ৯৫৩ জনের মধ্যে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে, যা দিনের মোট আক্রান্তের অর্ধেকের বেশি। আর এই সময়ে যে ২৪৭ জন মারা গেছেন, তাদের ৭২ জনই ছিলেন ঢাকা বিভাগের। চট্টগ্রাম বিভাগে ৬১ জন এবং খুলনা বিভাগে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত এক দিনে সারা দেশে মোট ৫০ হাজার ৯৫২টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৭৫ লাখ ৬ হাজার ২৩৩টি নমুনা। নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় দৈনিক শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৮২ শতাংশে, যা আগের দিন ৩০ দশমিক ০৪ শতাংশ ছিল।
গত এক দিনে চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ৮৪৮ জন, কঙবাজারে ১৭৭ জন, নোয়াখালীতে ১৪৫ জন, চাঁদপুরে ১৫৮ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৫৬ জন ও কুমিল্লায় ৭০১ জন আক্রান্ত হয়েছে।
মৃত ২৪৭ জনের মধ্যে ১৩৭ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। এছাড়া ৫৯ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, ৩০ জনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, ১৬ জনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, ৩ জনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে এবং ২ জনের বয়স ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ছিল। তাদের মধ্যে ১৪১ জন ছিলেন পুরুষ, ১০৬ জন নারী। ১৬৫ জন সরকারি হাসপাতালে, ৫৫ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং ২৬ জন বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ১ জনকে হাসপাতালে মৃত অবস্থায় নিয়ে আসা হয়েছিল।
এদিকে, বিশ্বে করোনায় মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ৪১ লাখ ৬২ হাজার ছাড়িয়েছে। শনাক্ত হয়েছে ১৯ কোটি ৪২ লাখের বেশি রোগী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচলতি মাসে চট্টগ্রামে তিন রেকর্ড
পরবর্তী নিবন্ধসিআরবি : মরুভূমির বুকে এক টুকরো ‘মরুদ্যান’