খালাসি নিয়োগে দুর্নীতি অনিয়মের অভিযোগে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সাবেক জিএম সৈয়দ ফারুক আহমদ (৬০)সহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বুধবার দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ মামলাটি করেন জেলা কার্যালয়-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন। পাশাপাশি অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ১৩ জনের সম্পদ অনুসন্ধানও শুরু করেছে দুদক।
৮৬৩ জন খালাসি নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগ কমিটির ৫ জন সদস্যের মধ্যে দুই সদস্যের ইনডিভিজুয়াল মার্কসিট না থাকা, কম্বাইন্ড মার্কসিটে একজনের মূল্যায়ন মার্কসিট বানিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ১৯জনকে নিয়োগ দেয়া, দুইজন প্রার্থীকে চার জেলার প্রার্থী হিসেবে নিয়োগ, বয়স্ক ও জাল সনদধারী লোকদের চাকরি দেয়ার নামে লাভবান হওয়া এবং ক্ষমতার অপব্যবহার ও ঘুষ দুর্নীতির মাধ্যমে এক কোটি দুই লাখ ৪৪ হাজার টাকা এসএ পরিবহন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাচারের জন্য মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে। মামলায় অন্য আসামিরা হলো, খালাসি নিয়োগ কমিটির আহবায়ক ও মহাব্যবস্থাপক (প্রকল্প) মো. মিজানুর রহমান, সদস্য সচিব ও সহকারী মহাব্যবস্থাপক (পূর্ব) জোবেদা আক্তার (৪২), নিয়োগ কমিটির সদস্য ও ট্রেক সাপ্লাইয়ার অফিসার (টিএসও) রফিকুল ইসলাম (৪০), এমএলএসএস কাম মহাব্যবস্থাপকের গাড়ি চালক হারাধন দত্ত (৩৪), রাজধানীর শাহজাহানপুর রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক সুরাইয়া সুলতানা (৬৩), নিয়োগ হওয়া খালাসি আবুল বাশার খান (৩৪), রেলওয়ে শ্রমিক লীগের যুগ্ম সম্পাাদক ও প্রধান সহকারী (সিপিও) খোন্দকার সাইফুল ইসলাম মামুন, নগরীর টিকেট প্রিন্টিং প্রেস কলোনি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মৃণাল কান্তি দাশ (৫৫), শাহজাহানপুর রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী আক্তার হোসেন (৫৭), ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ফাতেমা এন্টারপ্রাইজের মালিক আমিরুজ্জামান আশীষ (৪৯) ও প্রান্তশান্ত এন্টারপ্রাইজের মালিক পারভীন আক্তার (৪৪)। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে অভিযোগ করা হয়।
সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ৪ জুলাই ৮৬৩ জন খালাসি নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল। নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য পাঁচ সদস্যের কমিটি করা হয়। কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী মিজানুর রহমান ও সদস্য সচিব ছিলেন আরটিএ’র সিনিয়র ট্রেনিং অফিসার জোবেদা আক্তার। সদস্য রাখা হয় রেল কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম, এমএ জিন্নাহ ও শেখ খলিলুর রহমানকে। প্রায় ২ বছর পর ২০১৫ সালে নিয়োগ পরীক্ষা নেয়া হয়। পরীক্ষার পর পরই নিয়োগ কমিটির সদস্য এম এ জিন্নাহ মারা যান এবং শেখ খলিলুর রহমান অন্য মন্ত্রণালয়ে বদলি হন। এই দু’জনের স্থলে কমিটিতে অন্য কাউকে সংযুক্ত না করেই ২০১৯ সালের ১১ মে ফলাফল ঘোষণা করেন কমিটির তিন সদস্য। এরপর থেকেই এ নিয়োগ নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠে। এরপর দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে খালাসি নিয়োগে দুর্নীতির প্রমাণ পেয়ে কমিশনে প্রতিবেদন দেন অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন। কমিশনের অনুমোদনের পর বুধবার জড়িত ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। মামলার আসামিদের মধ্যে রেল শ্রমিক লীগের যুগ্ম সম্পাাদক খোন্দকার সাইফুল ইসলাম মামুন ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার নিজের বয়স্ক ভগ্নিপতিকে চাকরি পেতে সহযোগিতা করেন। তাছাড়া ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিক আমিরুজ্জামান আশীষ ১৩জন প্রার্থীর কাছ থেকে ৫৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং পারভীন আকতার ১০ জন প্রার্থীর কাছ থেকে ৪১ লাখ ৯৪ হাজার টাকা নিয়ে ঘুষ আদান-প্রদান ও জাল জালিয়াতির আশ্রয় নেন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় ১৩ জনের সম্পদ অনুসন্ধানের অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। কমিশনের অনুমোদন নিয়ে ইতোমধ্যে সম্পদ বিবরণী জারির পদক্ষেপ শুরু করেছে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২। এরমধ্যে মামলার আসামি সাবেক জিএম ফারুক ও তার স্ত্রী, সহকারী মহাব্যবস্থাপক (পূর্ব) জোবেদা আক্তার, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের টিএসও রফিকুল ইসলাম ও তার স্ত্রী, প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তার কার্যালয়ের সহকারী দাবি পরিদর্শক মমিনুল ইসলাম মামুন ও তার স্ত্রী, খোন্দকার সাইফুল ইসলাম মামুন, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ঐশী এন্টাপ্রাইজের মালিক কাউসার আলম ও তার শ্যালক ফজলুর রহমান মুকুটের নাম রয়েছে।