খাগড়াছড়িতে নির্বিচারে উজাড় হচ্ছে অশ্রেণীভুক্ত বনের গাছ। পার্বত্য এলাকায় সংরক্ষিত বন, রক্ষিত বন, ব্যক্তিমালিকাধীন বন ও অশ্রেণীভুক্তসহ চার ধরনের বন রয়েছে। তবে বেশিরভাগই অশ্রেণীভুক্ত বনের আওতাভুক্ত। গত কয়েক দশকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও অশ্রেণীভুক্ত বনাঞ্চল ব্যাপক হারে উজাড় হয়েছে। বনখেকোদের দৌরাত্ম্যে এসব বনের কাঠ নির্বিচারে কাটা হচ্ছে। পাহাড় থেকে পরিবহন করে সেসব কাঠ নেয়া হয় ইটভাটা, স’মিলসহ বিভিন্ন জায়গা। দুর্গম এলাকা হওয়ায় এখানে তেমন নজরদারি নেই।
সাম্প্রতিককালে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বন বিভাগের নজরদারি বাড়লেও অরক্ষিত অশ্রেণীভুক্ত বনাঞ্চলে নজর কম। এসব বনাঞ্চল নিয়ে এখনো কোনো জরিপ হয়নি। সাধারণত খাস পাহাড়ে প্রাকৃতিকভাবে যে বন গড়ে ওঠে তা অশ্রেণীভুক্ত বনাঞ্চলের আওতাভুক্ত। এসব বন থেকে নির্বিচারে গাছ কেটে নিচ্ছে বনখেকোরা।
পার্বত্য এলাকায় গাছ কাটতে হলে সরকারি অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু নজরদারি ও তদারকির অভাবে বিনা অনুমতিতে বন থেকে গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে বনখেকোরা। অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে বনাঞ্চল উজাড়ের তথ্য। প্রতিদিন খাগড়াছড়িতে বিভিন্ন অশ্রেণিভুক্ত বন থেকে উজাড় হচ্ছে ১৬ হাজার ৫শ মণ গাছ। ইটভাটার জ্বালানি হিসেবে তা ব্যবহার করা হচ্ছে। অভিযোগ আছে, এভাবে বন ধ্বংসের পেছনে ইটভাটা মালিকদের ইন্ধন রয়েছে। এক শ্রেণির দালাল চক্রের মাধ্যমে তারা বন উজাড় করছে।
খাগড়াছড়ির দীঘিনালা ও পানছড়ি উপজেলার সীমান্তবর্তী সীমানাপাড়া এলাকা। পাড়া থেকে প্রায় এক ঘণ্টা হাঁটার পর বনখেকোদের দেখা মিলল। বনের গাছ পরিবহন করার জন্য পাহাড় কেটে রাস্তা করা হয়েছে। আসন্ন বর্ষায় পাহাড়ের রাস্তা ধসে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।
গাছ কাটায় নিয়োজিত আলোক বিকাশ চাকমা, রতন বিকাশ চাকমাসহ একাধিক শ্রমিক জানান, এসব পাহাড় খাস হলেও স্থানীয়রা এর মালিকানা ভোগ করে। তারা পাহাড়ের গাছ চুক্তিভিত্তিক বিক্রি করে। ইটভাটায় গাছ সরবরাহকারী দালালরা (মাঝি) স্থানীয়দের কাছ থেকে পাহাড়ের গাছ কিনে নেয়। তারপর সেসব গাছ নির্বিচারে কাটে। গাছ কাটার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকের মজুরি ৩শ টাকা।
শ্রমিকেরা আরো জানান, বিকল্প আয়ের উৎস না থাকায় তাদের বাধ্য হয়ে এই কাজ করতে হয়। শুষ্ক মৌসুমে এ কাজ করেন। সীমানা পাড়া এলাকায় একসাথে গাছ কাটার সাথে নিয়োজিত রয়েছেন ২০ জন শ্রমিক। গাছ কর্তন থেকে পরিবহন করেন তারা। সারা দিনে অন্তত ৫শ মণ গাছ কর্তন করেন। শ্রুতিরঞ্জন নামে একজন দালাল ৫০ হাজার টাকায় এই পাহাড়ের সব গাছ কিনেছেন। তার নির্দেশে এসব গাছ কাটা হচ্ছে।
যে পাহাড় থেকে গাছ কাটা হচ্ছে সেখানে পাওয়া যায় শ্রুতিরঞ্জন ত্রিপুরাকে। তবে গাছ কাটার সাথে নিজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করেন তিনি।
পরিবেশকর্মীরা বলছেন, বন ধ্বংস হওয়ায় বিপন্ন হচ্ছে পশু-পাখির আশ্রয়স্থল। গাছ কাটা রোধে কঠোর পদক্ষেপ চান তারা।
পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী বলেন, অনুমতি ছাড়া অশ্রেণীভুক্ত বনের গাছ কাটার নিয়ম নেই। কিন্তু খাগড়াছড়িতে নির্বিচারে বন কর্তন হয়। এভাবে চলতে থাকলে একসময় সবুজ পাহাড় বলতে কিছু থাকবে না।
বনের গাছ কাটা বন্ধে টাস্কফোর্স করে অভিযান জোরদার করার দাবি জানান খাগড়াছড়ির বিভাগীয় বন কর্মকর্তা সরোয়ার জামান। তিনি বলেন, অশ্রেনীভুক্ত বনাঞ্চল মূলত জেলা প্রশাসকের আওতাধীন। বিনা অনুমতিতে এসব বন থেকে গাছ কাটার সুযোগ নেই। তবে অবৈধভাবে কেউ বনজ দ্রব্য পরিবহন করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার এখতিয়ার বন বিভাগের রয়েছে। বনবিভাগ অভিযান জোরদার করবে।