করোনাভাইরাসের থাবায় দেশের অর্থনীতি যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে, তা পুনরুদ্ধারের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়াবে বলে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো আশাবাদের কথা উঠেছে এসেছে এক জরিপে। কোভিড-১৯ উত্তরণে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের আত্মবিশ্বাস যাচাইয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) ওই জরিপটি পরিচালনা করে। খবর বিডিনিউজের।
তৃতীয় পর্যায়ের এই জরিপের যে ফলাফল মঙ্গলবার তুলে ধরা হয়, তাতে জরিপের আওতায় থাকা ৭১ শতাংশ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে বলে মনে করেন, যেগুলোর অর্ধেকের বেশির এবিষয়ে জোরালো আশাবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এক ওয়েবিনারে গবেষণা জরিপের ফল তুলে ধরে সানেমের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, আমরা দেখেছি, জরিপে অংশ নেওয়া ৫০২টি উৎপাদন ও সেবা খাতের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের ৭১ শতাংশই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ব্যাপারে আশাবাদী। ৭১ শতাংশের মধ্যে ৪০ ভাগ মনে করছে, এই পুনরুদ্ধার হবে মধ্যম পর্যায়ের। ১৬ শতাংশ মনে করছে, অর্থনীতির শক্তিশালী পুনরুদ্ধার হবে এবং বাকি ১৫ শতাংশ মনে করছে দুর্বল পুনরুদ্ধার হবে।
অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ যারা পেয়েছে, তারা ভাল অবস্থায় আছে জানিয়ে তিনি বলেন, যারা এই প্রণোদনা পাননি, তারা কিন্তু পিছিয়ে রয়েছেন। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা মাঝারি ও বৃহৎ পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের তুলনায় বেশি পিছিয়ে আছে। সরকার ১৯টি খাতে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করলেও প্রকৃত অর্থে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে প্রণোদনা পৌঁছে দেওয়া ও প্যাকেজের সঠিক বাস্তবায়নকেই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে তুলে ধরেন সেলিম রায়হান।তিনি বলেন, পাশাপাশি সরকারের কিছু জটিল খাত রয়েছে যেমন ট্যাঙ, ট্রেড লজিস্টিক- এগুলোতে বাড়তি নজর দিতে হবে। বিভিন্ন পলিসি ইস্যু ও বিভিন্ন খাতের দুর্নীতি চিহ্নিত করতে হবে। তাহলে ব্যবসায়িক উন্নতি ও আত্মবিশ্বাস ফিরে আসবে এবং প্রতিষ্ঠানগুলো কোভিডের আগের অবস্থায় পৌঁছাতে পারবে।
বাংলাদেশের উৎপাদন ও সেবা খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের বর্তমান অবস্থা ও তাদের সেক্টর নিয়ে কী ভাবছে তা তুলে ধরতে সানেম ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে তিন মাস পর পর ‘বিজনেস কনফিডেন্স সার্ভে’ পরিচালনা করেছে। প্রথম পর্বে ৩০০টি এবং দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্বে ৫০০টির মত ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান নিয়ে জরিপ পরিচালনার কথা জানান সানেমের নির্বাহী পরিচালক।
তিনি বলেন, অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের অবস্থা বোঝার জন্য আমরা এ বছরের জানুয়ারি মাসে জরিপ করেছি। তাতে দেখতে পেরেছি, ফার্মগুলো মনে করছে, তাদের বিজনেস স্ট্যাটাস কিছুটা হলেও উন্নতি হয়েছে। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরে দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে অর্থনৈতিক উন্নতি কিছুটা ধীরগতির ছিল বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ওয়েবিনারে পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহ-সভাপতি আরশাদ জামাল দিপু বলেন, সরকারের দেওয়া প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণের সুদ পরিশোধের জন্য বাড়তি সময় আমরা চেয়েছিলাম, কিন্তু এখনও সেটা হয়নি। আমি মনে করি, এটা এখন সময়েরও দাবি। তৈরি পোশাক শিল্পের বড় ও ছোট ফ্যাক্টরিগুলোর তুলনায় মাঝারি ফ্যাক্টরিগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। তৈরি পোশাক কারখানার ৫৯ শতাংশ প্রণোদনা প্যাকেজ পেয়েছে বলে সানেম বলেছে। আমরা এটা একটু বেশি পেয়েছি। ডেটাবেইজ হালনাগাদ থাকার কারণে আমাদের ৬৫ ভাগ তৈরি পোশাক কারখানা প্রণোদনা নিতে পেরেছে। তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের ৯৮ শতাংশই বাংলাদেশি হওয়ায় যে কোনো সংকটময় সময়ে এখাত তা সহজে মোকাবেলা করতে পেরেছে বলে তিনি মনে করেন।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) একটি গবেষণার বরাত দিয়ে চট্টগ্রাম স্টক এঙচেঞ্জের চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম বলেন, আমি খুবই উদ্বিগ্ন যে, এই মহামারীতে অনেক মানুষ কর্মসংস্থান হারিয়েছে। ১৩ শতাংশ মানুষ চাকরিচ্যুত হয়েছে এবং তাদের আয় কমে গেছে। সরকারের দেওয়া প্রণোদনা প্যাকেজের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়েছে তৈরি পোশাক শিল্পে।