এখন কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন আইনজীবীরা। জোর লড়াই লাগতে চলেছে দিয়েগো ম্যারাডোনার সম্পত্তির ভাগাভাগি নিয়ে। আদালতে দাবি উঠেছে, প্রমাণ সংগ্রহের জন্য দরকার হলে ম্যারাডোনার কবর খোঁড়া হোক।
মনে করা হচ্ছে প্রয়াত ম্যারাডোনার সম্পত্তির পরিমাণ ১ থেকে ৪ কোটি ডলার। আর এই বিপুল সম্পত্তির নতুন মালিক কে হবেন, তা নিয়ে আসরে শুধু ম্যারাডোনার ছেলে-মেয়েরা বা প্রাক্তন স্ত্রী-বান্ধবীরা রয়েছেন, তা নয়। লড়াইয়ে নামতে চলেছেন সাংবাদিক, চিত্রগ্রাহকরাও। খবর আনন্দবাজারের।
সমস্যা আরও বেড়েছে ম্যারাডোনা কোনও উইল করে না যাওয়ায়। আর্জেন্টিনার আইন অনুযায়ী একজন তার উইলে সম্পত্তির এক তৃতীয়াংশ স্ত্রী-সন্তান ছাড়া বাকিদের মধ্যে ইচ্ছেমতো ভাগ করে দিতে পারেন। কিন্তু দুই তৃতীয়াংশ স্ত্রী-সন্তানদের জন্য রাখতেই হবে। যেহেতু ম্যারাডোনার কোনও উইল নেই, সম্পত্তির লড়াইটা আরও কঠিন হবে। যারা নিজেকে ম্যারাডোনার সন্তান বলে দাবি করছেন, কিন্তু ম্যারাডোনা তাদের কখনও স্বীকৃতি দেননি, তাদের মামলা আদালতে উঠলে ডিএনএ পরীক্ষা হবে। ইতিমধ্যেই দাবি উঠেছে, সেক্ষেত্রে ম্যারাডোনার কবর খোঁড়া হোক। লড়াইটা শুরু হয়েছে ম্যারাডোনা যেদিন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হয়েছিলেন, সেই ২৫ নভেম্বর থেকে। গত কয়েক বছর ধরে ম্যারাডোনার আইনজীবী হিসেবে থাকা মরিসিও দালেসান্দ্রো বলেছেন, জানি না কারা কারা সম্পত্তির ভাগ চাইবেন, কিন্তু তালিকাটা লম্বা হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
যদিও ম্যারাডোনার সম্পত্তির সঠিক পরিমাণ জানা যায়নি, ফোর্বস পত্রিকার বিচারে সেটা ১ থেকে ৪ কোটি ডলার। এর মধ্যে রয়েছে জমি, বাড়ি, বিলাসবহুল গাড়ি, গয়না। যেসব দেশে তিনি খেলেছেন, বা কোচিং করিয়েছেন, বা অন্য কোনওভাবে যুক্ত ছিলেন, সেই আর্জেন্টিনা, স্পেন, ইটালি, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, বেলারুশ, মেক্সিকোয় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এইসব সম্পত্তি।
এর দাবি যারা জানাতে পারেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন স্বীকৃত পাঁচ সন্তান। এদের চারজন আর্জেন্টিনায়, একজন ইটালিতে। এছাড়াও আছেন আরও ছয়জন, যারা নানা সময়ে নিজেদের ম্যারাডোনার সন্তান বলে দাবি করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে ম্যারাডোনা বলে এসেছেন জিয়ানিনা (৩১) এবং দলমা (৩৩) ছাড়া তার আর কোনও সন্তান নেই। এই দুজনই ম্যারাডোনার প্রাক্তন স্ত্রী ক্লদিয়া ভিলাফেনের সন্তান। দীর্ঘ ২০ বছরের বিবাহিত জীবন কাটানোর পর ক্লদিয়ার সঙ্গে ম্যারাডোনর বিচ্ছেদ হয়ে যায় ২০০৩ সালে।
এরপর ম্যারাডোনা তার আরও ছয় সন্তানের কথা স্বীকার করেন। এই ছয়জনের মধ্যে চারজন কিউবায়, দুজন আর্জেন্টিনায়। রয়েছেন প্রাক্তন স্ত্রী-বান্ধবীরাও। ম্যারাডোনার মৃত্যুর পর তার সম্পত্তির দাবি জানিয়ে আসরে নামেন আরও দুই সন্তান সান্তিয়াগো লারা (১৯) এবং মাগালি গিল (২৩)। দুজনেই বলেছেন, তারা নিজেদের দাবি প্রতিষ্ঠা করার জন্য আইনি পথে নামবেন। বাদ নেই ব্যবসায়ী, মহাজন, এমনকী সাংবাদিক, চিত্রগ্রাহকরাও।
দালেসান্দ্রো জানিয়েছেন, যারা দাবি করবেন, তাদের দ্রুত আদালতের দ্বারস্থ হতে হবে। মনে হচ্ছে দিয়েগো ম্যারাডোনাকে নিয়ে মোট ৬০টি মামলা উঠবে আদালতে। এর অধিকাংশই অবশ্য মানহানির মামলা, যেগুলো এতদিন ধরে ঝুলে রয়েছে। বিভিন্ন সাংবাদিক, ফটোগ্রাফাররা বিভিন্ন সময়ে ঠোঁটকাটা ম্যারাডোনার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেছিলেন। এবার তারাও ম্যারাডোনার সম্পত্তির ভাগ চাইবেন। বহু ব্যবসায়ী, মহাজনের থেকে টাকা ধার নিয়েছেন ম্যারাডোন। তারাও চুপ করে বসে থাকবেন না। কারণ, এই টাকার অঙ্কটা কম নয়।
কেউ প্রয়াত হলে তার আত্মার শান্তি কামনা করে বলা হয়, রেস্ট ইন পিস। কিন্তু ম্যারাডোনা বোধহয় শান্তিতে ঘুমোতে পারবেন না। হয়ত কবর খুঁড়ে ফের বার করা হতে পারে ফুটবলের রাজপুত্রকে।