প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জল, স্থল ও আকাশ পথে দায়িত্ব পালনে সক্ষমতা অর্জন করে বিজিবি এখন ত্রিমাত্রিক বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। স্মার্ট বর্ডার ম্যানেজমেন্টের অংশ হিসেবে সীমান্তে নতুন নতুন বিওপি, বিএসপি নির্মাণসহ অত্যাধুনিক সার্ভেইলেন্স ইকুইপমেন্ট স্থাপন, এটিভি, এপিসি, ভেহিকেল স্ক্যানার ও দ্রুতগামী জলযান সংযোজনের পাশাপাশি বাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামোতে ১৫ হাজার জনবল বৃদ্ধির পরিকল্পনা করা হয়েছে; যা তিন ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে।
গতকাল শনিবার সকালে সাতকানিয়ার বায়তুল ইজ্জতে অবস্থিত বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজের (বিজিটিসিঅ্যান্ডসি) ৯৫তম রিক্রুট ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে অভিবাদন ও সালাম গ্রহণ শেষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নবীন সৈনিকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শৃঙ্খলা হচ্ছে সৈনিকদের মূল পরিচিতি। আদেশ ও কর্তব্য পালনে যে কখনো পিছপা হয় না, সেই প্রকৃত সৈনিক। সততা, বুদ্ধিমত্তা, নির্ভয়, যোগ্যতা, আনুগত্য, তেজ ও উদ্দীপনা একটি বাহিনীর শৃক্সখলা ও পেশাগত দক্ষতার মাপকাটি। পেশাগত দায়িত্ব পালনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে সৈনিকদের বিজিবির মূলনীতির প্রতি গুরুত্বারোপের নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, মনোবল, ভ্রাতৃত্ববোধ, শৃক্সখলা ও দক্ষতা হলো বিজিবির মূলনীতি। মূলনীতির প্রতি অবিচল থেকে নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সৎ ও নিষ্ঠার সাথে পালন করতে হবে। সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে সীমান্ত সুরক্ষিত রেখে সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। দায়িত্ব পালনে পুরুষদের পাশাপাশি নারী সৈনিকদের নির্ভয়ে সীমান্তে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শীতের প্রকোপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে নতুনভাবে আক্রান্তের সংখ্যা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন। ঘরের বাইরে গেলে মাস্ক পরবেন। নিজে সুরক্ষিত থাকবেন। পরিবার পরিজনকেও সুরক্ষিত রাখবেন। বন্ধু-বান্ধবদেরকেও সুরক্ষিত থাকতে বলবেন।
তিনি বলেন, করোনার দ্বিতীয় ওয়েব মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত। করোনার ভ্যাকসিন অনুমোদন পাওয়ার সাথে সাথে দেশে নিয়ে আসব। এজন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে সবাইকে আরো বেশি সচেতন হতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। একই সাথে তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামে জীবন উৎসর্গকারী বিজিবির ৮১৭ জন বীর, বিশেষ করে শহিদ ৩ জন বীরশ্রেষ্ঠ, ৮ জন বীরউত্তম, ৩২ জন বীরবিক্রম ও ৭৭জন বীর প্রতীককে স্মরণ করেন।
কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে যুক্ত হয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন বক্তব্য রাখেন।
গতকাল সকালে বায়তুল ইজ্জত বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার অ্যান্ড কলেজের বীর উত্তম মজিবুর রহমান প্যারেড গ্রাউন্ডে উপস্থিত থেকে নবীন সৈনিকদের উদ্দেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. সাফিনুল ইসলাম। কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সর্ব বিষয়ে সেরা নবীন সৈনিক মো. খোকন মোল্লা ও ফায়ারিংয়ে সেরা নারী সৈনিক হাসিনা আক্তার বিথিকে ক্রেস্ট প্রদান করেন তিনি।
৯৫তম রিক্রুট ব্যাচে ৫৯০ জন পুরুষ ও ২০১ জন নারী রিক্রুট মৌলিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন। এছাড়া বিজিটিসিঅ্যান্ডসির ৬টি প্রশিক্ষণ ভেনুতে এই রিক্রুট ব্যাচের ১,৭৩৩ জন রিক্রুটসহ ২,৫২৪ জন রিক্রুট মৌলিক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন।
সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক ড. আবু রেজা নদভী ও জাফর আলম, বান্দরবান বোমাং সার্কেলের চিফ উ চ প্রু চৌধুরী, সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসানুজ্জামান মোল্লা, সাতকানিয়া থানা ওসি আনোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন।