বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারকে টেনে নামাতে গিয়ে তারা (বিএনপি) নিজেরাই রশি ছিঁড়ে নিচে পড়ে গেছেন।
গতকাল আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ আয়োজিত বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন। বিএনপির কয়েকজন নেতার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তথ্যমন্ত্রী এর আগে বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের মাসখানিক পর থেকেই উনারা আমাদেরকে টেনে নামানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, উনাদের টেনে নামানোর হুমকির মধ্যে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এক যুগ ধরে প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় আছেন।
এসময় তথ্যমন্ত্রী বিএনপি নেতৃবৃন্দকে অনুরোধ করে বলেন, এ ধরনের হাস্যকর বক্তব্য ঢালাওভাবে না দিয়ে বরং আপনারা দলটিকে গোছান, নিজেদের দলটিকে সংগঠিত করুন আর জনগণের কাছে যান। বিএনপি সভানেত্রী খালেদা জিয়ার পুরনো একটি বক্তব্য নিজের মুঠোফোনে রেকর্ড আছে জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘এই সরকার কখনো পদ্মা সেতু করতে পারবে না। পারবে না।’
খালেদা জিয়ার উদ্দেশে তিনি বলেন, এখন পদ্মার পাড়ে গিয়ে পদ্মা সেতু দেখে আসুন, পদ্মা সেতু হয়ে গেছে। ঢাকায় মেট্রোরেল হচ্ছে, চট্টগ্রামেও হবে।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, উন্নয়নে বদলে গেছে বাংলাদেশ। আজ দেশে ছেঁড়া কাপড় পড়া মানুষ দেখা যায় না। খালি পায়ে মানুষকে হাটতে দেখা যায় না। আকাশ থেকে চট্টগ্রাম শহর চেনা যায় না। এই হচ্ছে বাস্তবতা।
তিনি বলেন, যে ছেলে ১০/১২ বছর আগে বিদেশে গেছে সে যখন দেশে আসে, যখন সে গ্রামে যায় তখন তারা গ্রামকে চিনতে পারে না। সেই মেঠো পথ নেই, সেটা এখন পিচঢালা পথ। আগের মতো কুঁড়ে ঘর নেই। এটা বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। তিনি বলেন- এটাই শেখ হাসিনার জাদুকরী নেতৃত্ব ।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মানুষ এখন সঠিক ইতিহাস জানতে পারছে। কিন্তু উনারা বছরের পর বছর ধরে স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতি করার অপচেষ্টায় লিপ্ত আছেন। তারা ইতিহাসের খলনায়ককে নায়ক বানানোর চেষ্টা করেছেন। একজন স্কুলের দপ্তরীকে তারা প্রধান শিক্ষক বানানোর চেষ্টা করেছেন।
ড. হাসান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ সংবিধান অনুযায়ী হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ সব বিভাগে হওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সার্কিট বেঞ্চ স্থাপনের জন্য চট্টগ্রামের আইনজীবী সমাজ যেভাবে সোচ্চার হওয়া উচিত, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গায় আইনজীবীরা সেভাবে সোচ্চার হচ্ছেন না। তিনি বলেন, আমি মনে করি আপনারা যদি এ নিয়ে দাবি তুলেন, সোচ্চার হন তাহলে সার্কিট বেঞ্চ স্থাপন অবশ্যই বাস্তবায়ন হবে।
জেলা জজের আর্থিক ক্ষমতা বাড়ানো নিয়ে মন্ত্রীসভায় আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী জানান,আইনমন্ত্রীর সাথেও কয়েকবার আলোচনা করেছি। উনি ব্যক্তিগতভাবে আমাকে বলেছেন, এটা নিয়ে চলমান রিট খারিজ করে জেলা জজের আর্থিক ক্ষমতা যাতে বাড়ানো যায় সে ব্যবস্থা যেকোনো মূল্যে করবেন।
তবে আমাদের একটা বিষয় মনে রাখতে হবে আইনমন্ত্রীর ওপর ঢাকার আইনজীবীদেরও একটি চাপ আছে। এই চাপের বিপরীতে যদি বিপরীতমুখী কোনো চাপ না থাকে তাহলে আইনমন্ত্রীর সদিচ্ছা সত্ত্বে এ দাবি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। এজন্য আইনজীবীদের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার আহবান জানান তথ্যমন্ত্রী।
এর আগে বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেন
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নুর তাপস।
এক ভার্চুয়াল বক্তব্য শেষে তিনি অনুষ্ঠানটির উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সৈয়দ মোক্তার আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির ভার্চুয়াল বক্তব্য রাখেন বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক অ্যাডভোকেট আবদুল বাসেত মজুমদার। বিশেষ অতিথির আরো বক্তব্য রাখেন চসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ এইচ এম জিয়াউদ্দীন। অনুষ্ঠানে কেক কেটে বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উদযাপন করা হয়।