দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ – বিশিষ্ট দার্শনিক, শিক্ষাবিদ, সমাজ চিন্তাবিদ, লেখক ও সম্পাদক। ভাষা আন্দোলনের একজন সক্রিয় ও দৃঢ় সমর্থক হিসেবে তিনি সমকালে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন।
দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফের জন্ম ১৯০৮ সালের ১ জানুয়ারি সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলার তেঘরিয়া গ্রামে। প্রাথমিক শিক্ষাজীবন দুহালিয়ার মধ্য ইংরেজি স্কুলে। ১৯৩০ সালে সিলেটের মুরারি চাঁদ কলেজ থেকে ডিস্টিংকশন সহ বি.এ এবং ১৯৩২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। ছাত্রজীবনে বরাবরই কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। পেশাগত জীবনে সুনামগঞ্জ কলেজ, আবুজর গিফারি কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। আবুজর গিফারি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ছিলেন তিনি। রাজনৈতিক জীবনে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সমর্থক ছিলেন। মুসলিম লীগের আসাম প্রাদেশিক কমিটির সদস্য হিসেবে আসামে বহিরাগত মুসলমানদের ওপর অত্যাচারের প্রতিবাদ ও ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার অপরাধে গ্রেফতার হয়ে শিলচরে দশ মাস কারাভোগ করেন। ১৯৪৯ সাল থেকে আজীবন তমদ্দুন মজলিসের সভাপতি ছিলেন। ‘নও বেলাল’, ‘যুগভেরী’ প্রভৃতি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন মোহাম্মদ আজরফ। ‘নও বেলাল’-এ ভাষা আন্দোলনের সমর্থনে লেখা ছাপালে সুনামগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষের পদ থেকে তাঁকে অপসারণ করা হয়। শিক্ষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য ও দর্শনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁর উদার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির ছাপ সুস্পষ্ট। এসব বিষয়ে তিনি লিখেছেন শতাধিক গ্রন্থ। যার মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে প্রায় ষাটটি। তাঁর রচনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য: ‘তমদ্দুনের বিকাশ’, ‘ইতিহাসের ধারা’, ‘সত্যের সৈনিক আবুজর’, ‘ধর্ম ও দর্শন’, ‘বিজ্ঞান ও দর্শন’, ‘মরমী কবি হাসন রাজা’, ‘গল্প সংকলন’ ইত্যাদি। কর্মকৃতীর জন্য পেয়েছেন স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার, একুশে পদক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন পুরস্কার, শ্রীজ্ঞান অতীশ দীপঙ্কর পুরস্কার প্রভৃতি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে জাতীয় অধ্যাপক মনোনীত করে। ১৯৯৯ সালের ১ নভেম্বর প্রয়াত হন দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ।