আইইডিসিআরের টিম চট্টগ্রামে, নমুনা সংগ্রহে মাঠে নামছে আজ

ইপিজেড পতেঙ্গা হালিশহরে পানিবাহিত রোগ

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২০ আগস্ট, ২০২২ at ৬:৫৬ পূর্বাহ্ণ

নগরীর প্রি-পোর্ট, ইপিজেড, পতেঙ্গা-হালিশহর, উত্তর আগ্রাবাদসহ সমূদ্রবর্তী এলাকাগুলোতে পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাবের কারণ অনুসন্ধানে ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) একটি রিসার্চ টিম এখন চট্টগ্রামে। ৬ সদস্যের ওই টিম গতকাল শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রামে এসে পৌঁছে। পরে সন্ধ্যা ৬টার দিকে তারা ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি (বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল ইনফেকসিয়াস এন্ড ডিজিজেস) ও সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে যান। সেখানে তারা পানিবাহিত (ডায়রিয়া-কলেরা) রোগে আক্রান্ত চিকিৎসাধীন রোগীদের সাথে কথা বলেন এবং খোঁজ-খবর নেন। রোগীদের বাসা-বাড়ির ঠিকানাও সংগ্রহ করেন। আজ (শনিবার) সকালে রোগীদের বাসা-বাড়ি গিয়ে খাওয়ার ও ব্যবহারের পানিসহ বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহের কথা রয়েছে এ টিমের। আইইডিসিআর’র রিসার্চ টিমের চট্টগ্রাম পৌঁছার তথ্য নিশ্চিত করে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী আজাদীকে বলেন, আইইডিসিআর’র ৬ জনের টিম শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রামে পৌঁছেছে। সন্ধ্যায় বিআইটিআইডিতে গিয়ে রোগীদের সাথে কথা বলেছেন। বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেছেন। শনিবার রোগীদের বাসা-বাড়িতে গিয়ে ব্যবহারের ও খাওয়ার পানিসহ বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করার কথা রয়েছে। যা ঢাকায় নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে।
প্রসঙ্গত, নগরীর প্রি-পোর্ট, ইপিজেড, পতেঙ্গা-হালিশহর, উত্তর আগ্রাবাদসহ সমুদ্রবর্তী এলাকাগুলোতে ফের দেখা দিয়েছে পানিবাহিত রোগের (ডায়রিয়া-কলেরা) প্রকোপ। গতকাল পর্যন্ত এ সব এলাকার দুই শতাধিক রোগী এই ডায়রিয়া-কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। আক্রান্ত বেশির ভাগ রোগী ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি (বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল ইনফেকসিয়াস এন্ড ডিজিজেস) ও সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এর আগে ২০১৮ সালের এপ্রিল-মে মাসে জন্ডিসের প্রকোপ দেখা দেয় নগরীর হালিশহরের বিভিন্ন এলাকায়। মৃত্যু হয় ৩ জনের। বছর পেরুতেই (২০১৯ সালের জুলাই মাসে) পানিবাহিত ডায়ারিয়া-কলেরা ছড়িয়ে পড়ে ঘরে-ঘরে। দুই বছর ব্যবধানে গত মে মাসে (চলতি বছরের) পুনরায় পানিবাহিত ডায়রিয়া ও কলেরা রোগের কবলে পড়েন ওই এলাকার বাসিন্দারা। তবে ওই সময় হালিশহর ছাড়াও বন্দরসহ সমুদ্রবর্তী এলাকাগুলোতে পানিবাহিত এ রোগ ছড়িয়ে পড়ে। এবার তৃতীয় দফায় পানিবাহিত এই (ডায়রিয়া-কলেরা) রোগের কবলে পড়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। গত ৫ দিনে উল্লিখিত এলাকার দুই শতাধিক রোগী ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি ও সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। যদিও অধিকাংশ রোগী সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরে গেছেন। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৪৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন বলে জানান বিআইটিআইডি’র ট্রপিক্যাল মেডিসিন এন্ড ইনফেকসিয়াস ডিজিসের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. মামুনুর রশীদ।
চিকিৎসকরা বলছেন, ডায়রিয়া ও কলেরা মূলত পানিবাহিত (ব্যাকটেরিয়াজনিত) রোগ। পানির কারণেই এ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। অর্থাৎ জীবাণুযুক্ত বা দূষিত পানি যে কোনো ভাবে শরীরে প্রবেশ করায় এ সব এলাকার বাসিন্দারা ডায়রিয়া-কলেরায় আক্রান্ত হচ্ছেন। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের অধিকাংশই (৯০ ভাগ) সমুদ্রবর্তী (প্রি-পোর্ট, ইপিজেড, পতেঙ্গা-হালিশহর, উত্তর আগ্রাবাদ) এলাকার বলে জানিয়ে ডা. মামুনুর রশীদ বলছেন, দূষিত পানি হয়তো ফুটিয়ে পান করছেন। কিন্তু যে কোনো ভাবে দূষিত ও জীবাণুযুক্ত পানি শরীরে প্রবেশ করছে। হয়তো গোসল করার সময়, মুখ ধোঁয়ার সময়, ওজু করার সময়, নয়তো থালা-বাসন ধোঁয়ার সময় কিংবা রান্না-বান্না বা শাক-সবজি কাটার সময় দূষিত পানি শরীরে প্রবেশ করতে পারে।
মোটকথা, যেকোনো ভাবে ওই দূষিত পানি মানুষের শরীরে প্রবেশ করেছে বা করছে। যার কারণে পানিবাহিত এই রোগ ছড়িয়ে পড়ছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজাতির পিতার আদর্শ ও মূল্যবোধ নিজেদের মধ্যে ধারণ করতে হবে : নওফেল
পরবর্তী নিবন্ধ‘বিনা শুল্কে চীনে যাবে সব পোশাক পণ্য’