চমেক হাসপাতাল উন্নীত হচ্ছে ২২শ শয্যায় : প্রশংসনীয় উদ্যোগ

| বৃহস্পতিবার , ২৪ মার্চ, ২০২২ at ৮:৪০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ২০ তলা ভবন নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত ২২ মার্চ দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত ‘চমেক হাসপাতাল উন্নীত হচ্ছে ২২শ শয্যায়’ শীর্ষক সংবাদে জানা যায়, ২০ তলা ভবনে ফ্লোর বিন্যাসসহ (কোন ফ্লোরে কোন ওয়ার্ড) বিস্তারিত প্রস্তাবনা চেয়ে নির্দেশনা দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নির্দেশনা পেয়ে চলতি মাসের শুরুর দিকে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনা প্রস্তুত করে পাঠিয়েছে চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল পরিচালক বলেন, নতুন এই ভবনটি হলে সেখানে এক ফ্লোরে ৩৬টি আইসিইউ এবং অপর এক ফ্লোরে আরো ৩৬টি ক্রিটিক্যাল কেয়ার সেন্টার (আইসিইউর তুলনায় আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন) করার প্রস্তাবনা রয়েছে। তবে প্রতি ফ্লোরে ৩৬টির স্থলে ৫০টি করে আইসিইউ নির্বিঘ্নে স্থাপন করা যাবে বলে আমরা মনে করছি। সে হিসেবে দুই ফ্লোরে একশটি আইসিইউ স্থাপনের প্রস্তাবনা আমরা রাখছি। এদিকে, নতুন ২০ তলা অবকাঠামো নির্মাণ হলে তাতে আরো অন্তত ১ হাজার শয্যার সংস্থান হবে বলে মনে করছে হাসপাতাল প্রশাসন। বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিশাল সংখ্যক দরিদ্র মানুষের চিকিৎসায় একমাত্র ভরসাস্থল হিসেবে পরিচিত এই হাসপাতালের (বিদ্যমান ভবনে) বর্তমানে ১৩১৩ শয্যার প্রশাসনিক অনুমোদন রয়েছে। কিন্তু প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকছে আড়াই হাজারের কিছু কম-বেশি (প্রায় তিন হাজার)। নতুন ভবনে প্রায় ১ হাজার শয্যার সংস্থান ধরে সবমিলিয়ে হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ২২’শ তে উন্নীতকরণের প্রস্তাবনা দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসানের স্বাক্ষরে গত ৯ মার্চ এ সংক্রান্ত চিঠি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবর পাঠানো হয়েছে।
‘চিকিৎসা সেবা সব নাগরিকের মৌলিক অধিকার’- এই বিষয়টা মাথায় রেখে কাজ করছে সরকার। তবু কেন জানি পুরো চট্টগ্রাম জুড়ে চিকিৎসার জন্য হাহাকার। এই হাহাকার শুধুমাত্র জীবন বাঁচানোর জন্য, চিকিৎসা সেবা পাবার অধিকারের জন্য। চট্টগ্রাম দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী ও বৃহত্তম শিল্প-বন্দর নগরী হলেও আধুনিক সরকারি-বেসরকারি কোনো চিকিৎসা সেবা গড়ে ওঠেনি। ফলে করোনা মহামারিকালে দেখা গেছে হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত আইসিএইউ-এইচডিইউ সুবিধা গড়ে ওঠেনি, অক্সিজেন সরবরাহ ও শয্যা সংকট ছিল প্রকট। দেশের সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রামে। এই চট্টগ্রাম তখন মৃত্যপুরীতে পরিণত হয়েছিল। সব দিক বিবেচনা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২২শ শয্যার ২০ তলা ভবন নির্মাণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এটি চট্টগ্রামবাসীর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে নিঃসন্দেহে।
এ কথা বলা বাহুল্য যে, স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়েছে ঈর্ষণীয়। বিশ্বজুড়ে স্বীকৃত মেডিকেল জার্নাল দি ল্যান্ডসেট এ বিষয়ে অনেকগুলো গবেষণা প্রতিবেদন ছাপিয়েছে। এই জার্নালের গবেষণা প্রতিবেদনে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের যুগান্তকারী ও প্রভূত উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে। এই উন্নয়নের সূচক ভারত ও পাকিস্তানকে অতিক্রম করেছে এবং জাপানের সাথে তুলনা করা হয়েছে। গড় আয়ু বেড়ে হয়েছে ৭৩ বছর, মাতৃমৃত্যু কমেছে ৭৫%, শিশু মৃত্যুর হার কমেছে ৭১%। উনিশ শতকে জাপানের পর এমন উন্নয়নের ইতিহাস আর কোন দেশ অর্জন করতে পারেনি। স্বাস্থ্য সেবায় প্রতিটি খাতেই বাংলাদেশ প্রভূত উন্নয়ন করেছে ঐ সাময়িকীর গবেষণা প্রতিবেদন অনুসারে। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতের এই উন্নয়ন ও বৈপ্লবিক অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে বর্তমান সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও স্বাস্থ্য বিভাগের স্বাস্থ্যকর্মীর পরিশ্রম ও জনগণের সম্মিলিত অংশগ্রহণের মাধ্যমে। এই উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রেখে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে অভীষ্ঠ লক্ষ্যে।
সাধারণ রোগীর চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে সরকারি হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা বাড়ানোসহ সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। সরকারের লক্ষ্য হলো দেশের জনগণের কাছে চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেওয়া। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে স্বাস্থ্য সেবার সাথে জড়িত সকল পক্ষের প্রতিনিধিত্ব ও অংশগ্রহণমূলক স্বাস্থ্য সেবা বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা। সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সবার নিরলস শ্রম চোখে পড়ার মতো। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জন্য এই উদ্যোগ তারই নমুনা বহন করে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে