টানা পাঁচ মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর বাসায় ফিরছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বৃহস্পতিবার এভারকেয়ার হাসপাতাল থেকে ‘সাময়িকভাবে’ গুলশানের বাসায় তিনি ফিরতে পারেন বলে জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও মেডিকেল বোর্ডের সদস্য অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন। মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে বিএনপি চেয়ারপারসন বাসায় যাওয়ার ছাড়পত্র পেয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ম্যাডামকে বৃহস্পতিবার বিকালে বাসায় নিয়ে যাওয়া হবে। বোর্ড এও সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, গুলশানের বাসায় ম্যাডামের চিকিৎসা দেবেন মেডিকেল বোর্ড। সেখানে সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’
গত ৯ অগাস্ট শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে মেডিকেল বোডের্র সিদ্ধান্তে এভারকেয়ার হাসপাতাল ভর্তি হন খালেদা জিয়া। এতদিন ধরে তিনি এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। খবর বিডিনিউজের।
৭৮ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী আথ্রাইটিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, লিভার, কিডনি, ডায়াবেটিসহ প্রভৃতি রোগে ভুগছেন। গত অক্টোবরে মেডিকেল বোর্ড সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত খালেদা জিয়ার লিভারের চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়। দ্রুত বিদেশে উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে তার লিভার প্রতিস্থাপন জরুরি হয়ে পড়েছে।
এরপর সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে আবারও বিদেশ নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয় তার পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে। তবে আইনে সে সুযোগ না থাকায় এ অনুমোদন দেয়নি সরকার। এ চেষ্টার মধ্যে তার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসার পাশাপাশি বিদেশ থেকেও চিকিৎসক এসে তার চিকিৎসা দেন।
গত ২৫ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেডিসিনের লিভার ও কিডনি প্রতিস্থাপন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক হামিদ আহমাদ আবদুর রব, ইন্টারভেনশনাল অনকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ক্রিসটোস স্যাভাস জর্জিয়াডেস এবং হেপাটোলজির অধ্যাপক জেমস পিটার হ্যামিলটন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ঢাকায় এসে পর দিন জরুরিভাবে তার লিভারে রক্তক্ষরণ বন্ধে ট্রান্সজুগলার ইন্ট্রাহেপাটিক পোরটোসিসটেমিক সান্ট (টিপস) সম্পন্ন করেন।
দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে নিজের বাসায় থেকে চিকিৎসা নেওয়া এবং দেশের বাইরে না যাওয়ার শর্তে ২০২০ সালের মার্চে সরকারের নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়।
খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করে সপ্তমবার বর্ধিত মুক্তির মেয়াদ শেষ হয় গত ২৪ সেপ্টেম্বর। এর আগেই তার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আবেদন করা হয়। এর প্রেক্ষিতে সমপ্রতি অষ্টমবারের মতো বিএনপি চেয়ারপারসনের সাজা স্থগিত করে আগের দুটি শর্তেই মুক্তির মেয়াদ আরও ৬ মাস বাড়ানো হয়।
মুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী শর্ত দুটি হলো : খালেদা জিয়া আগের মতোই ঢাকার নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করবেন এবং এই সময় তিনি দেশের বাইরে যেতে পারবেন না।
২০০৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারিতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজার পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি হন। গত বছর ২৫ মার্চ সরকারের নির্বাহী আদেশে তার সাজা স্থগিত করে তাকে মুক্তি দেয়া হয়। কারাগার থেকে অসুস্থতা নিয়ে মুক্তির পর এই পর্যন্ত খালেদা জিয়া পাঁচ দফা এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।