৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে সমরের মামলা

অস্ত্র ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা,ওসি হিমাংশুসহ আসামি ১১

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১ ডিসেম্বর, ২০২০ at ৬:২২ পূর্বাহ্ণ

অস্ত্র ও ইয়াবা দিয়ে শিক্ষানবিশ আইনজীবীকে ফাঁসানোর চেষ্টায় জড়িত নয় পুলিশসহ এগারোজনের বিরুদ্ধে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের মামলা করেছেন ভুক্তভোগী সমর কৃষ্ণ চৌধুরী। গতকাল সোমবার যুগ্ম জেলা জজ আবদুল কাদেরের পটিয়া আদালতে তিনি এ ক্ষতিপূরণের মামলা দায়ের করেন। বিদ্বেষপূর্ণ ও মিথ্যা মামলার মাধ্যমে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিকভাবে লাঞ্ছিত করায় এই ক্ষতিপূরণের মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাদী সমর কৃষ্ণ চৌধুরী। মামলায় আসামি করা হয়েছে, সাময়িক বরখাস্তকৃত বোয়ালখালী থানার এসআই আতিক উল্ল্যা, তৎকালীন ওসি হিমাংশু কুমার দাস, এসআই আরিফুর রহমান, থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মাহবুব আলম আখন্দ, এসআই আবু বকর সিদ্দিকী, এএসআই রিপন চাকমা, এএসআই আলাউদ্দীন, এসআই দেলোয়ার হোসেন, পিএসআই মাহবুবুল আলম, লন্ডন প্রবাসী সঞ্জয় দাশ ও পুলিশের সোর্স বলে পরিচিত সজল দাশগুপ্ত। মামলার আরজিতে বাদী শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক ক্ষতিপূরণ হিসেবে আড়াইকোটি টাকা ও আর্থিক ক্ষতিপূরণ হিসেবে আরও আড়াই কোটি টাকা দাবি করেছেন।
জানা গেছে, এই ক্ষতিপূরণ মামলায় নতুন করে আসামি করা হয়েছে পুলিশের পিএসআই মাজবুবুল আলমকে। এর আগে গত ৪ নভেম্বর দায়রা জজ স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-১’এ বোয়ালখালী থানার পুলিশের আটজনসহ এগারো জনের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করেন সমর কৃষ্ণ চৌধুরী। তবে আদালত এখনো এই মামলার কোনো শুনানি করেননি বলে জানা গেছে। একই আসামিদের বিরুদ্ধে গত ১৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আবু সালেম মো. নোমানের আদালতে একই আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন সমর কৃষ্ণ চৌধুরী। এ সময় আদালত মামলাটি তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে নির্দেশন দেন।
সমর চৌধুরী জানান, ২০১৮ সালের ২৭ মে আমি পেশাগত কাজ সেরে আদালত থেকে নামছিলাম। আমার সঙ্গে তিনজন আইনজীবী ছিলেন। তাদের সামনেই আমাকে জোরপূর্বক সাদা পোশাকে একদল লোক মাইক্রোবাসে তুলে নেন। তখন আইনজীবীরা তাদের পরিচয় জানতে চাইলে কয়েকজন পুলিশের আইডি কার্ড দেখান। তাদের সঙ্গে সঞ্জয় দাশ এবং তাদের কেয়ারটেকার সজল দাশ গুপ্ত ঘটনাস্থলে ছিলেন। তারাই আমাকে দেখিয়ে দেন। পুলিশ আমাকে নিয়ে বোয়ালখালী থানায় যায়। সেখানে হাজতে রেখে আমাকে নির্যাতন করে। রাতে অস্ত্র উদ্ধারের নামে আমাকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে নদীর ধারে একটি নির্জন এলাকায় নিয়ে পুলিশ আমাকে ক্রসফায়ারে হত্যার চেষ্টা করে। এরপর গাড়ি থেকে নামিয়ে হাত ও চোখ খুলে দিয়ে বলে, প্রাণে বাঁচতে চাইলে ১০ লক্ষ টাকা দিতে হবে। অন্যথায় ক্রসফায়ারে হত্যা করা হবে। কিন্তু পরে তারা একটি ফোন পেয়ে আমাকে আবার গাড়িতে তুলে থানায় ফিরিয়ে নেয়। পরদিন আমার হেফাজত থেকে ইয়াবা ও অস্ত্র উদ্ধারের মিথ্যা অভিযোগ এনে আদালতে চালান দেওয়া হয়।
সমর চৌধুরী জানান, মিথ্যা অভিযোগে তাকে দেড়মাস জেল খাটতে হয়েছে। এর আগে ২০১৮ সালে ওই ঘটনায় পকেটে কলম নিয়ে সমরের গ্রেপ্তারের ঘটনার ছবি গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশে আলোচনা হয়। একপর্যায়ে তৎকালীন ডিআইজি এস-এম-মনিরুজ্জামানের সাথে ঘটনার ইন্ধনদাতা সঞ্জয় দাশের ঘনিষ্টতার তথ্য উঠে আসে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। বদলি করা হয় ডিআইজিকে। তদন্তের মাধ্যমে বোয়ালখালী থানার অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের সাময়িক বরখাস্ত ও বদলি করা হয়। গত ১২ জুলাই জামিনে মুক্তি পান সমর কৃষ্ণ চৌধুরী।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদেশে ১২ সপ্তাহের মধ্যে সর্বাধিক শনাক্ত
পরবর্তী নিবন্ধকে কোন পদ পেলেন