৪০ সেকেন্ডেই চুরি মোটর সাইকেল

মূলহোতাসহ গ্রেপ্তার ৯

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ২৮ মার্চ, ২০২১ at ৮:২৪ পূর্বাহ্ণ

তালা ভেঙে মোটর সাইকেল চুরি করেন তারা। সময় লাগে মাত্র ৩০ থেকে ৪০ সেকেন্ড। সম্প্রতি এমনই এক চক্রের মূল হোতাসহ ৯ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরী ও বিভিন্ন উপজেলায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নম্বরবিহীন একটি মোটর সাইকেল তল্লাশির সূত্র ধরে পাওয়া গেছে এই চোর চক্রের সন্ধান, যা সিএমপিতে এ যাবৎকালে প্রথম। অভিযানে উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় ২০টি মোটর সাইকেল।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন আজাদীকে বলেন, মূলত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, ব্যাংকসহ বিভিন্ন সামাজিক স্পট টার্গেটে রাখে এ ধরনের চক্র। এসব স্থানে কেউ মোটর সাইকেল রেখে গেলে সিন্ডিকেটের একজন মালিকের পিছু নেয়। অন্যজন মাস্টার কি দিয়ে গাড়িটি চুরি করে নিয়ে যান। তারা ৩০ থেকে ৪০ সেকেন্ডের মধ্যে মোটর সাইকেল চুরি করতে সক্ষম।
ওসি জানান, গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে কদমতলী মোড় এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন মিল্টন ও মেহেদী হাসান। একটি নম্বরবিহীন মোটর সাইকেলসহ ধরা পড়েন তারা। পরে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, মোটর সাইকেল চুরি করে সেগুলো তারা বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করেন। তাদের দেয়া তথ্যে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে চোর চক্রের আরও সাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।
অভিযান পরিচালনাকারী টিমের সদস্য এসআই মোমিনুল আজাদীকে জানান, চোর চক্রের মূলহোতা মিল্টন সরকার ওরফে মিল্টন কুমার সাহা (৪৪)। তিনি পতেঙ্গার ফুলছড়ি পাড়া এলাকায় ভাড়ায় থাকেন। তার অন্যতম সহযোগী কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার মো. জালালের ছেলে মেহেদী হাসান (১৯)। তিনি মূলত মোটর সাইকেলের ম্যাকানিক। কদমতলী এলাকার একটি গ্যারেজে কাজ করেন।
এসআই মোমিনুল বলেন, অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে দেখা যায়, খাগড়াছড়ি, ভূজপুর, মীরসরাই, কুমিল্লা, ভৈরব, বরিশাল, কঙবাজারসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই চক্রের সিন্ডিকেট রয়েছে। এই চক্রের সাথে সম্পৃক্ত আসামিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় চুরিসহ একাধিক মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার অন্য সদস্যরা হলেন মাহমুদুল হাসান (২৪), আনোয়ারুল ইসলাম (৩৭), রফিকুল ইসলাম রিপন (৩৮), মো. ওবায়দুল কাদের (৪২), শাখাওয়াত হোসেন প্রকাশ ওরফে রুবেল হোসেন (২৫), শাহাদাত হোসেন সাজ্জাদ (২৭) ও মো. রিয়াজ (৩২)।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযানে দুটি হাঙ্ক মোটর সাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি নম্বরবিহীন। অন্যটি কঙবাজার-ল-১১-২৩৪১ রেজিস্ট্রশনের। একটি পালসার (চট্টমেট্রো-ল-১৩-২২৭৫) ও ছয়টি গ্ল্যামার মোটর সাইকেল উদ্ধার করা হয়, যেগুলোর রেজিস্ট্রেশন নম্বর যথাক্রমে চট্টমেট্রো-হ-১৪-৬৩৩৮, চট্টমেট্রো-হ-১০-৪৫৪৭, চট্টমেট্রো-হ-১৩-৫৪৩১, চট্টমেট্রো-হ-১৫-১৯৪৮ ও চট্টমেট্রো-হ-১৩-১১৭১। নম্বরবিহীন ছয়টি ডিসকভার মোটর সাইকেল উদ্ধারের কথা জানান এসআই মোমিনুল। এছাড়া একটি করে ওয়াল্টন মোটর সাইকেল, হিরো হোন্ডা ও ইয়ামাহা (ভোলা-হ-১১-০০২২) উদ্ধার করা হয়। পাওয়া যায় ১৮টি মোটর সাইকেলের ডিজিটাল নম্বর প্লেট। অপরদিকে আটটি ইঞ্জিন লক, ১৯টি গ্ল্যামার গাড়ির সিটলক, অন্যান্য কোম্পানির সিটলক সাতটি, অয়েল ট্যাংক লক চারটি, একটি হাইড্রোলিক লক ও ৪৫টি ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের তালার চাবি পাওয়ার কথা জানা গেছে।
কোতোয়ালী থানার এএসআই অনুপ কুমার বিশ্বাস আজাদীকে জানান, মিল্টন ও মেহেদীকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কদমতলী থেকে আরও একটি মোটর সাইকেল উদ্ধার করা হয়। পরে সীতাকু-ের বড় দারোগাহাটে ওবায়দুল কাদেরের গ্যারেজে অভিযান চালানো হয়। এ সময় আটটি মোটর সাইকেলসহ গ্রেপ্তার হন আনোয়ার ও ওবায়দুল। পরে চার জনকে থানায় নিয়ে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ফটিকছড়ি উপজেলার ভূজপুর, কুমিল্লার লাঙ্গলকোট, চৌদ্দগ্রাম, খাগড়াছড়ির রামগড় এবং নগরীর ডবলমুরিংয়ে অভিযান চালিয়ে বাকিদের গ্রেপ্তার এবং আরও মোটর সাইকেল উদ্ধার করা হয়।
এএসআই অনুপ কুমার বিশ্বাস জানান, মিল্টন, রফিক ও রিয়াজ মূলত মোটর সাইকেল চোর। মেহেদী ও ওবায়দুল মোটর সাইকেলের কারিগর। আনোয়ারসহ অন্যরা চোরাই মোটর সাইকেলের ক্রেতা-বিক্রেতা। বিভিন্ন জেলায় ঘুরে ঘুরে মোটর সাইকেল চুরি করে আনেন মিল্টন, রফিক ও রিয়াজ। সীতাকু-ের আনোয়ারের কাছে সেগুলো ৮ থেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। মেহেদী ও ওবায়দুল নম্বরপ্লেট খুলে সেগুলো বিক্রির উপযোগী করেন। চোরাই মোটর সাইকেল উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের করেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিপ্লব উদ্যানে ফুল দিতে বিএনপিকে বাধা
পরবর্তী নিবন্ধপুলিশকে গলা কেটে হত্যাচেষ্টা