রাজশাহীর তানোরে গভীর নলকূপের জন্য খনন করা গর্তে পড়ে যাওয়া দুই বছর বয়সী শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানোর পর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাঈমা খান শিশুটিকে উদ্ধার করার খবর নিশ্চিত করেন। শিশুটিকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয় বলে তখন জানান তিনি। প্রায় ৩২ ঘণ্টা পর অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস এবং তার অবস্থা জানতে তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসকরা পরীক্ষা–নিরীক্ষা করার পর মৃত ঘোষণা করে। খবর বিবিসি বাংলার।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৭ মিনিটের দিকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন ফায়ার সার্ভিসের অপারেশন ডিরেক্টর লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি জানান, শিশুটিকে ৬০ ফুট নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. বার্নাবাস হাসদাক মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, শিশু সাজিদকে হাসপাতালে ৯টা ২০ মিনিটের দিকে নিয়ে আসা হয়, রাত ৯টা ৪০ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে।
এর আগে, শিশুটির স্বাভাবিক শ্বাস–প্রশ্বাসের (ভেন্টিলেশন) জন্য যে পাইপটি গর্তের ভেতরে ঢুকানো হয়েছিল সেটি সরিয়ে ফেলার তথ্য বিবিসি বাংলাকে জানান তানোর ফায়ার সার্ভিসের কর্মী মেহেদী হাসান। গতকাল বিকেল পৌনে চারটার দিকে তিনি জানিয়েছিলেন, বুধবার বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত শিশুটির আওয়াজ পেয়েছিল ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। বিকেলের পরে সারারাত তার আর কোনো আওয়াজ পাওয়া যায়নি। তবে বুধবার সারারাত এবং সকালেও ভেন্টিলেশন পাইপ চালু ছিল এবং বৃহস্পতিবার সকালের পর সেটি বন্ধ করা হয় বলে জানান হাসান।
গত বুধবার দুপুরে কোয়েল হাট পূর্বপাড়া গ্রামের মো. রাকিবের ছেলে শিশু সাজিদ, মায়ের সাথে হেঁটে ওই স্থান দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ গর্তে পড়ে যায় বলে জানা যায়। শিশুটির মা রুনা খাতুন ঘটনা সম্পর্কে সাংবাদিকদের বলেছেন, দুই ছেলেকে কোলে নিয়ে তিনি সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন, এক পর্যায়ে একজনকে কোল থেকে নামিয়ে দিয়েছিলেন। যে শিশুটিকে মা কোল থেকে নামিয়ে দিয়েছিলেন সেই শিশুটিই গর্তে পড়ে গিয়েছে।
স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, তানোরের পাঁচন্দর ইউনিয়ন উচ্চ খরাপ্রবণ এলাকা। সেখানে মাটির ১২০ থেকে ১৩০ ফুট গভীরেও ভূ–গর্ভস্থ পানির সন্ধান মেলে না। তবে, এই এলাকায় গভীর নলকূপ বসানো যাবে না বলে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
যেখানে শিশুটি পড়ে গিয়েছিল সেই জমির মালিক একটি গভীর নলকূপ বসানোর জন্য বছর খানেক আগে আট ফুট ব্যাসার্ধের একটি কূপ খনন করিয়েছিলেন। কিন্তু পানি না পেয়ে গভীর নলকূপ বসানোর কাজটি আর এগোয়নি, অর্থাৎ খনন কাজে ফল মেলেনি, কিন্তু গর্তটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। এবার বর্ষায় মাটি দেবে গিয়ে সেখানে নতুন করে গর্ত সৃষ্টি হয়। আর সে গর্তেই শিশুটি পড়ে যায় বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন।












