১৩ বছর পর ফাইনালে পাকিস্তান

বাবর-রিজওয়ানের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে হার কিউদের

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার , ১০ নভেম্বর, ২০২২ at ৫:৪৮ পূর্বাহ্ণ

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হওয়ার আগে পাকিস্তানের সবচাইতে বড় দুশ্চিন্তার নাম ছিল বাবর আজম। কারণ পুরো টুর্নামেন্টেই ঘুমিয়ে আছে তার ব্যাট। তাই পাকিস্তানের জন্য ম্যাচটা জেতা যতটা না গুরুত্বপূর্ণ ছিল তার চাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল বাবরের ছন্দে ফেরা। ম্যাচের আগেরদিন পাকিস্তানের ব্যাটিং পরামর্শক ম্যাথু হেইডেন বলেছিলেন, সেমিফাইনালেই রানে ফিরবেন বাবর আজম। তার কথাই ঠিক হলো। যদিও অনেকটা ভাগ্যের জোরেই টুর্নামেন্টে প্রথম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন বাবর আজম। রানের খাতা খোলার আগেই ফিরতে পারতেন পাকিস্তানের অধিনায়ক।

কিন্তু এরপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাননি বাবর। আর তার দলকেও পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের গত আসরের রানার্স আপ নিউজিল্যান্ডকে বিদায় করে ১৩ বছর পর ফাইনালে জায়গা করে নিল পাকিস্তান। ইনজুরি কাটিয়ে ফেরার পর থেকে সেরা ছন্দ খুঁজে পাওয়া শাহিন শাহ আফ্রিদি আবারো বল হাতে আলো ছড়ালেন। আর ব্যাটিংয়ে জয়ের পথ সহজ করে দিলেন রান খরায় ভুগতে থাকা অধিনায়ক বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান।
আর তাতেই নিউজিল্যান্ডকে অনায়াসে ৭ উইকেটে হারিয়ে তৃতীয়বার ফাইনালে উঠল পাকিস্তান। এর আগে ২০০৭ ও ২০০৯ আসরে শিরোপা ফাইনালে খেলেছিল পাকিস্তান। ২০০৭ আসরে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েই ফাইনালের টিকেট পেয়েছিল পাকিস্তান। পরের বার ফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল তারা। পাকিস্তান ছাড়া শ্রীলংকা তিনবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছে। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দুর্দান্ত খেলা নিউজিল্যান্ড থেমে গেল শেষ চারে এসে।

অপরদিকে অনেকটা ভাগ্যর জোরে সেমিতে আসা পাকিস্তান যেন আরো উজ্জীবীত হয়ে খেলছে। আর সে সুবাধে ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে।
টসে জিতে ব্যাট করতে নামা নিউজিল্যান্ডের ওপেনার ফিন অ্যালেন আফ্রিদির করা ম্যাচের প্রথম বলে চার মেরে শুরু করেন। কিন্তু এক বল পরই ফিরেন এলবিডব্লিউ হয়ে। শুরুর সে ধাক্কা এতটাই পড়েছিল যে, পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে মাত্র ৩৮ রান করতে পারে কিউইরা। ষষ্ঠ ওভারের শেষ বলে ডেভন কনওয়ের রান আউট হয়ে ফিরলে ভাঙ্গে ৩২ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি। ২০ বলে ২১ রান করে ফিরেন কনওয়ে। অষ্টম ওভারে মোহাম্মদ নাওয়াজের বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে গ্লেন ফিলিপস ফিরলে বিপদ বাড়ে নিউজিল্যান্ডের। এরপর দলের হাল ধরেন অধিনায়ক উইলিয়ামসন ও ড্যারিল মিচেল। দুজন মিলে চতুর্থ উইকেটে ৫০ বলে ৬৮ রানের জুটি গড়েন। ১৭তম ওভারে গিয়ে ভাঙ্গে এ জুটি। ৪২ বলে ৪৬ রান করা কিউই অধিনায়ককে ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙ্গেন শাহীন শাহ আফ্রিদি। এরপর মিচেল ও জেমস নিশাম মিলে দলকে ১৫২ রানে নিয়ে যান। ৩৫ বলে ৫৩ রান করে অপরাজিত থাকেন মিচেল। আর ১২ বলে ১৬ রান করে অপরাজিত থাকেন নিশাম। পাকিস্তানের পক্ষে ৪ ওভারে ২৪ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন আফ্রিদি।

ফাইনালে যেতে হলে পাকিস্তানের চাই ১৫৩ রান। আর সে রান তাড়া করতে নেমে দারুণ এক চার মেরে শুরু করেছিলেন রিজওয়ান। ওভারের চতুর্থ বলে স্ট্রাইক পেয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছিলেন বাবর। ডান দিকে ঝাঁপিয়ে নাগালে পেয়েও গ্লাভসে রাখতে পারেননি ডেভন কনওয়ে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাননি বাবর আজম। শূন্য রানে জীবন পেয়ে সেটাকে দারুণভাবে কাজে লাগান পাকিস্তান অধিনায়ক। আগের পাঁচ ম্যাচে সাকুল্যে ৩৯ রান করা বাবর এবার তুলে নেন নিজের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি। পাওয়ার প্লেতে ৬ ওভারে ৫৫ রান যোগ করে নিউজিল্যান্ডকে একপ্রকার ম্যাচ থেকে ছিটকে দেন বাবর ও রিজওয়ান। ইনিংসের ১৩তম ওভারে ভাঙ্গে এ জুটি। তার আগে রিজওয়ানের সঙ্গে মিলে যোগ করেন ১০৫ রান। বিশ্বকাপ ইতিহাসে প্রথম জুটি হিসেবে তিনবার শতরান পার করলেন এ দুজন।

গত আসরে ভারত ও নামিবিয়ার বিপক্ষে একশ ছাড়ানো জুটি গড়েছিলেন তারা। ৪২ বলে ৭টি চারের সাহায্যে ৫৩ রান করে ফিরেন বাবর আজম। সঠিক সময়ে দুর্দান্তভাবে রানে ফিরলেন পাকিস্তান অধিনায়ক। এরপর নতুন সেনসেশন মোহাম্মদ হারিসকে নিয়ে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি রিজওয়ান। ফিরেছেন ৪৩ বলে ৫৭ রান করে। ততক্ষণে দলকে পৌঁছে দিয়ে এসেছেন জয়ের কিনারায়। মোহাম্মদ হারিসের ২৬ বলে ৩০ রানের ঝড়ে ৫ বল বাকি থাকতে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে ফাইনালে উঠার উল্লাসে মাতে পাকিস্তান। তিনবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠা পাকিস্তান এখন অপেক্ষায় দ্বিতীয় শিরোপা জেতার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধফাইনালে ভারত নাকি ইংল্যান্ড