১০ ডিসেম্বর সমাবেশ হবেই : ফখরুল

আইডিয়ালের সড়ক চায় বিএনপি, পুলিশের না

| বুধবার , ৭ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৬:৩১ পূর্বাহ্ণ

সমাবেশের স্থান নিয়ে জটিলতা এখনও না কাটলেও ১০ ডিসেম্বরের কর্মসূচি নিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের কোনো দ্বিধা না রাখার পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার গুলশানে দলের এক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ১০ ডিসেম্বর নিয়ে কোনো দ্বিধা রাখবেন না মনে। ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশ হবেই। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা বিএনপি ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিভাগীয় সমাবেশ ডেকেছে। সেই সমাবেশ থেকে সরকারের পতন আন্দোলন শুরুর ঘোষণা আসবে বলে দলটির নেতারা জানিয়ে আসছেন। খবর বিডিনিউজের।

বিএনপি নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশটি করতে চাইলেও পুলিশ সেখানে তাদের অনুমতি দিচ্ছে না। পুলিশ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের কথা বললেও বিএনপি সেখানে যেতে নারাজ। ফলে অনিশ্চিত একটি পরিস্থিতি তৈরি হলেও নেতাকর্মীদের দ্বিধাহীন থাকার আহ্বান জানালেন বিএনপি মহাসচিব। সেই সঙ্গে এই সমাবেশ ঘিরে ষড়যন্ত্রের আশঙ্কার কথাও জানিয়েছেন তিনি। ফখরুল বলেন, সরকার হীন চক্রান্ত আবার শুরু করেছে। আমরা ইতিমধ্যে পত্র-পত্রিকায় দেখেছি, বিভিন্নভাবে খবরও পেয়েছি যে, প্রায় ২শটা না কি বাস রেডি করা হয়েছে পুড়িয়ে দেওয়ার জন্য। আমরা শুনেছি, ইতিমধ্যে কিছু আলামতও আমরা পেয়েছি যে, ছাত্রলীগ নামধারী, যুবলীগ নামধারী কিছু সন্ত্রাসীকে প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে, থানায় থানায় নামিয়ে দিয়েছে। সে কারণে আজকে এই সেমিনারটি করা হয়েছে। আমাদের সুধী সমাজকে, সুশীল সমাজকে, রাজনৈতিক দলগুলো এবং কুটনৈতিক মিশনের সদস্যবৃন্দকে জানাতে চাই যে সরকার আবার সেই পুরনো খেলা, সেই উদোর পিন্ডি বুঁদোর ঘাড়ে চাপানোর জন্য কাজ শুরু করেছে।

গুলশানে হোটেল লেইক শোরে বিএনপির উদ্যোগে ‘ভালোলেন্স অ্যান্ড পলিটিঙ অব ব্লেমিং’ শীর্ষক এই গোলটেবিল আলোচনা হয়। এতে মূল প্রবন্ধ পড়েন সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্থ। অনুষ্ঠানে বর্তমান সরকারের আমলে সন্ত্রাসের বিভিন্ন ঘটনার উপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, ইরান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘ মিশনের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।

১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ ঘিরে দলে উদ্দীপনা সৃষ্টির দিকটি দেখিয়ে ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের মানুষ এখন জেগে উঠেছে। এই সমাবেশ থেকে নতুন স্বপ্ন দেখবে মানুষ, এই সমাবেশ থেকে মানুষ নতুন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আরও তীব্রভাবে নামবে এবং আমাদের ওপর ভয়াবহ যে দানব চেপে বসে আছে, তাকে পরাজিত করে জনগণের সরকার যেন প্রতিষ্ঠিত হয়, সেই কাজ তারা করবে। বিএনপির দাবির বিষয়টি নিয়ে বলেন, আমরা খুব পরিষ্কার করে বলেছি যে, আমরা এই সরকারের পতন চাই, আমরা সংসদ বিলুপ্ত চাই, আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর চাই, আমরা নতুন একটি নির্বাচন কমিশনের মধ্য দিয়ে একটা অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই, যা জাতীয়-আন্তর্জাতিকভাবে সকলে গ্রহণ করবে সেই নির্বাচন আমরা চাই। আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব তিনি আগেই বলেছেন, আমরা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী সকল দলগুলোকে নিয়ে আমরা জাতীয় সরকার গঠন করব যে জাতীয় সরকার আমাদের রাষ্ট্রকে নতুন করে সমস্যা চিহ্নিত করে সাজাবে। আমরা আজকে সফলতার আশা নিয়ে শেষ করতে চাই।

আওয়ামী লীগের শাসনে দেশের মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে আছে দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা মানুষকে সঙ্গে নিয়ে দাঁড়িয়েছি। মানুষ আমাদের দিকে চেয়ে আছে। আমরা বিশ্বাস করি মানুষ যেভাবে জেগে উঠেছে অবশ্যই তারা সফল হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশ্যে ফখরুল বলেন, আসুন এদেশের স্বার্থে পরিবর্তন নিয়ে এসে এই রাষ্ট্রকে সত্যিকার অর্থেই আমরা একটা বাসযোগ্য রাষ্ট্র তৈরি করতে পারি, সেজন্য ঐক্যবদ্ধ হই।

বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে ও দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির সদস্য ফারজানা শারমিন পুতুলের যৌথ সঞ্চালনায় এই গোলটেবিল আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, শাহজাহান ওমর, জয়নাল আবেদীন, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, গণফোরামের আবু সাইয়িদ, সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী, অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দার, অধ্যাপক তাজমেরী এস ইসলাম এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন আইডিয়ালের সড়ক চায় বিএনপি, পুলিশের না : ঢাকায় ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশের জন্য নয়া পল্টনের বিকল্প হিসেবে বিএনপি মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুলের সামনের সড়কটি চাইলেও তাতে সায় দেয়নি পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (মিডিয়া) ফারুক হোসেন গতকাল বলেন, কোনোভাবেই তারা রাস্তায় বা আবাসিক এলাকায় সমাবেশের অনুমতি দেবেন না।

বিএনপিকে সমাবেশ করতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে সেখানে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও সাজিয়েছি আমরা। পুলিশ কখনও কাউকে রাস্তায় সমাবেশ, অবস্থান করতে দেবে না। কেউ সেই চেষ্টাও যেন না করে। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার কথা ভেবে পুলিশ সব ব্যবস্থা নেবে।
বিএনপি তাদের ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ করতে চায় নয়া পল্টনে, কিন্তু সরকার বলছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করতে। এ নিয়ে টানাপড়েনের মধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে রোববার জানানো হয়েছিল, গ্রহণযোগ্য বিকল্প পেলে তারা তা বিবেচনা করতে পারে। ঢাকার পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক এরপর বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি এবং মতিঝিল বিভাগের উপ কমিশনার হায়াতুল ইসলামকে এলাকা ঘুরে বিকল্প স্থান খুঁজে বের করার দায়িত্ব দেন।

বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও বিভাগীয় সমাবেশ প্রস্তুতি কমিটির সদস্য শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, আমরা বলেছি যে ১০ ডিসেম্বর বিভাগীয় সমাবেশ করতে চাই। আমরা সোহরাওয়ার্দীতে সমাবেশ করব না। বিকল্প হিসেবে আমরা আইডিয়াল স্কুলের সামনের সড়কটি চেয়েছি। আমরা স্থান দেখেও এসেছি। ডিএমপিও স্থানটি দেখেছে। আমরা বলেছি, বিকল্প স্থানটি ডেড সড়ক। শনিবার এমনিতে এ সড়কে যান চলাচল করে না। আমরা আমাদের বিকল্প স্থানের কথা পুলিশকে জানিয়ে দিয়েছি। অন্যদিকে পুলিশ উপ কমিশনার হায়াতুল ইসলাম খান বলেন, তারা আইডিয়ালের কথা মৌখিকভাবে বলেছিলেন। কিন্তু রাস্তায় বা আবাসিক এলাকায় সমাবেশ করা যাবে না।

বিএনপি এখন কী করবে জানতে চাইলে অ্যানি বলেন, আমরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান চাইনি, আবেদনও করেনি। এটা আমরা মনে করি অনিরাপদ। সেখানে আমরা কোনো প্রোগ্রাম করব না- এটা আমাদের স্ট্যান্ড। আমরা আশাবাদী, যে বিকল্প জায়গাটির কথা বলেছি, সেখানে সমাবেশ করার বিষয়ে আমাদের পুলিশ সহযোগিতা করবেন। বিকল্প স্থানে না দিলে নয়া পল্টনের সড়কেই হবে। আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চাই। যদি না দেওয়া হয়, তার দায় তাদের ওপর বর্তাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসিপিডিএল-দৈনিক আজাদী বিশ্বকাপ কুইজ
পরবর্তী নিবন্ধসমাবেশস্থল নিয়ে সমঝোতায় আসবে বিএনপি