হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখতে নারীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারে

ডেইজী মউদুদ | শনিবার , ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ at ৫:০২ পূর্বাহ্ণ

একজন বিখ্যাত কবি, ছড়াকার ও সাংবাদিক লিখেছিলেন, ‘হৃৎপিণ্ড, দারুণ এক রক্তজবা।’ আর গানে তো কতভাবেই না এসেছে। ‘যদি কাগজে লিখো নাম, কাগজ ছিঁড়ে যাবে, পাথরে লিখো নাম পাথর ক্ষয়ে যাবে, হৃদয়ে লিখো নাম, সে নাম রয়ে যাবে’ হারানো দিনের গানের এক জনপ্রিয় পঙক্তি এটি। যা প্রতিটি মানুষের হৃদয়কে অন্ততঃ একটু হলেও নাড়া দেবেই। আর সেই হৃদয়টি হলো মাত্র ৩০০ গ্রাম ওজনের একটি হৃৎপিণ্ড যাকে ইংরেজিতে আমরা হার্ট বলি। হার্টটি অনবরত ঘড়ির পেন্ডুলামের মতো আমাদের হৃদয়কে দোলায়িত করছে বলেই তো আমরা বেঁচে আছি এই সুন্দর পৃথিবীতে।

মানবদেহের সেই অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্গানটিকে চালু ও সুস্থ রাখতে নারীরাই পালন করতে পারেন এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা জানালেন নগরীর দুজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ যথাক্রমে ডা. মো. রিজোয়ান রেহান আর ডা. বিপ্লব ভট্টাচার্য্য। এই দুজন বিশেষজ্ঞ সম্প্রতি ইনার হুইল ক্লাব অব গ্রিন হিল আয়োজিত বিশ্ব হার্ট দিবস পালন উপলক্ষে এক সচেতনতামূলক সেমিনারে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখছিলেন। নগরীর সিনিয়রস ক্লাবে আয়োজিত ক্লাব প্রেসিডেন্ট জেরীন নিজাম শেখের সভাপতিত্বে সেমিনারে অতিথি বক্তা ছিলেন সিনিয়রস ক্লাবের প্রেসিডেন্ট ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী। অতিথি ছিলেন পাস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইনার হুইল বোর্ড ডিরেক্টর এন্ড ফাউন্ডার আই ডাব্লিউ ডি ৩৪৫ দিলরুবা আহমেদ, পাস্ট ন্যাশনাল রিপ্রেজেন্টেপিভ এন্ড পাস্ট ডিস্ট্রিক্ট চেয়ারম্যান খালেদা এ আউয়াল, ভাইস চেয়ারম্যান ওয়ান আই ডাব্লিউ ডি ৩৪৫ ফারাহনাজ কাইযুম প্রমুখ। শুরুতেই স্বাগত বক্তব্যে জেরিন নিজাম সেমিনারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে বিষদ ব্যাখ্যা প্রদান করেন। সেমিনারে ডা. রিজোয়ান রেহান অত্যন্ত সাবলীল এবং চমৎকার ভাষায় ডাক্তারি টার্মগুলো উপস্থাপনা করেন। তিনি উপস্থিত নারীদের জন্য হৃদরোগ কি, ব্রেইন স্ট্রোক কি, ডায়াবেটিস আর প্রেশার রোগীদের উপসর্গ গুলো কি কি এবং এর ধরন, এর ঝুঁকি এবং প্রতিরোধে কি কি করণীয় অত্যন্ত নিখুঁতভাবে উপস্থাপন করেন। এরপর ডা. বিপ্লব ভট্টাচার্য্য তাঁর আলোচনায় এতক্ষণ ধরে ডা. রিজোয়ান যে গুরুত্বপূর্ণ কথাগুলো বলেছিলেন, সেগুলোকে আরো ডিটেইল করে অত্যন্ত সহজ এবং সহজবোধ্য করে তুলে ধরেন। তাঁদের বিশদ আলোচনার পর প্রশ্নোত্তর পর্বে ইনার হুইল মেম্বাররা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জানতে চান। দুজন বিশেষজ্ঞই সবকটি প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিয়ে সেমিনারটিকে প্রাণবন্ত করে রেখেছিলেন আগাগোড়া।

নারীরা একটি পরিবারের প্রধান চালিকাশক্তি। চাইলেও না চাইলেও রান্নাঘরের দায়িত্ব নারীর ওপরই বর্তায়। বিশেষ করে খাদ্য তালিকায় কি কি মেনু থাকবে, সেটিই নারীরাই সিলেক্ট করে থাকেন। সেমিনারে তাই দ’ুজন ডাক্তারই হার্টকে নিরাপদ ও সুস্থ রাখতে নারীদেরকে খাদ্যতালিকা নির্ধারণে বিশেষ যত্নবান হবার আহবান জানান। কেবল খাদ্য তালিকা নয়, নিয়মিত হাঁটা ও ব্যায়াম, পরিমিত ও সুষম খাবার গ্রহণ, কায়িক পরিশ্রম আর বিশ্রাম এর ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তাঁরা বলেন, একজন মা, একজন স্ত্রী পারবেন রুটিন মেনে চলে নিজের এবং পরিবারের স্বাস্থ্য সুস্থ রাখতে। এটি তেমন কোন কঠিন কাজ না, তবে মেনে চললেই তা আস্তে আস্তে অভ্যাসে পরিণত হবে বলে তাঁরা মত প্রকাশ করেন।

অতিথি বক্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী ইনার হুইল মেম্বারদের ধন্যবাদ জানান এমন গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী একটি সেমিনারের আয়োজন করার জন্য। চট্টগ্রামে ইনার হুইল ক্লাবের কর্ণধার দিলরুবা আহমেদ বরাবরের মতোই তাঁর অসাধারণ ও প্রাঞ্জল বক্তব্যে সেমিনারকে আলোকিত সমৃদ্ধ করেন। আরেক সুবক্তা খালেদা আউয়াল সেমিনারের গুরুত্ব অনুধাবন করেই সময়োপযোগী এই সেমিনার আয়োজনের জন্য গ্রীন হিলস ক্লাবকে ধন্যবাদ জানান। ইনার হুইল একটি চ্যারিটি ক্লাব। তারা মানবসেবার ঝাণ্ডা উড়িয়ে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন। সেমিনারে দুজন হৃদরোগীকে ক্লাবের পক্ষ থেকে চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা হয়।

আসলে হার্ট বা হৃদয় হলো মানবদেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যেটি ছাড়া মানুষের শরীর একেবারেই অচল। একটি পা, একটি হাত কিংবা একটি চক্ষু না থাকলেও মানুষ কষ্ট করে হলেও জীবনধারণ করতে পারে। কিন্তু হার্ট বা হৃদয়ের কোন অসুখ, রক্ত চলাচলে বাধাবিঘ্ন হলে মানুষ অসহায় হয়ে পড়ে। জীবন বিপন্ন হয়ে যায়, হঠাৎ করেই জীবনের স্পন্দনই থেমে যেতে পারে। আমাদের দেশে হার্ট আর নিউরো রোগীর অভাব নেই। একটিবার ডাক্তারের চেম্বার কিংবা হাসপাতালগুলো ঘুরে আসলেই আমরা বুঝতে পারি কি অবস্থায় রয়েছে সাধারণ মানুষ। আবার আমরা নিজেরাই জানি না, কে হার্টের রোগী, কে ব্রেইনের রোগী! অন্যদিকে ডাক্তারের বিষয়েও অনেক ভ্রান্ত ধারণা আমরা পোষণ করি। সবচেয়ে বড় কথা হলো, আমরা ডাক্তাররা যেসব পরামর্শ দেন তা মেনে চলি না। চলার চেষ্টাও করি না। সেমিনারে সেদিন ডাক্তারদের একটি কঠিন এবং জীবনধ্বংসকারী রোগ নিয়ে সরস আলোচনায় যেন আবার উজ্জীবিত হলাম। বিপদকালে কি কি করণীয় তারা বলে দিলেন কি সুন্দর করে। আমি এই দু’জন বিশেষজ্ঞকে আমার অন্তরের অন্ত:স্থল থেকে সাধুবাদ জানাই, জেরিনকে ধন্যবাদ জানাই এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সেমিনারে আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে ঋদ্ধ হবার সুযোগ দেয়ার জন্য।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালী হলে জনগণ সর্বোত্তম সেবা পাবে : পেয়ারুল
পরবর্তী নিবন্ধএক অদৃশ্য নষ্ট সুতায় বন্দী!