হালদায় ওয়াসার প্রকল্পে পরিবেশ অধিদপ্তরের ‘না’

বঙ্গবন্ধু শিল্প নগরে পানি সরবরাহ

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২৪ নভেম্বর, ২০২১ at ৬:২৩ পূর্বাহ্ণ

মীরসরাই অর্থনৈতিক জোনে পানি সরবরাহের জন্য নেয়া ওয়াসার প্রকল্পে না করে দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। ওয়াসার পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন প্রতিবেদন পর্যালোচনা শেষে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিবেশগত ছাড়পত্র বিষয়ক সর্বশেষ সভায় “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরীতে পানি সরবরাহ প্রকল্প; চট্টগ্রাম ওয়াসা” প্রকল্পটিকে সুপারিশবিহীন প্রকল্প হিসেবে চিহ্নিত করেছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মাসুদ ইকবাল মো. শামীমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পরিবেশগত ছাড়পত্র বিষয়ক কমিটির ৪৭৪তম সভায় প্রকল্পটি সুপারিশবিহীন প্রকল্প হিসেবে ঘোষণা দিয়ে প্রস্তাবিত প্রকল্পে হালদার পরিবর্তে বিকল্প উৎস থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরীতে পানি সরবরাহের জন্য সুপারিশ করা হয়। গত ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ বাস্তবায়ন কমিটির ২য় সভার সিদ্ধান্ত এবং গত ২২ আগস্টের জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের প্রেরিত মতামত পর্যালোচনা করে হালদা নদীর পরিবর্তে বিকল্প উৎস থেকে পানি সংগ্রহ ও সরবরাহের বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর এ সুপারিশ করে।
ওয়াসা সূত্র জানায়, হালদা নদীর আধা কিলোমিটার ভেতরে ‘মোহরা পানি শোধনাগার-১’ প্রকল্পে বর্তমানে ৯ কোটি লিটার পানি উত্তোলন করা হয়। আর ছয় কিলোমিটার উজানে মদুনাঘাট পানি শোধনাগারের জন্য আরও ৯ কোটি লিটার পানি উত্তোলন করা হয়। মীরসরাই অর্থনৈতিক জোনে পানি সবরাহের জন্য নতুন প্রকল্পে ১৪ কোটি লিটার পানি উত্তোলনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। হালদা নদী থেকে ঢালাওভাবে পানি উত্তোলনের প্রস্তাবে শুরু থেকে আপত্তি জানিয়ে আসছেন পরিবেশবাদীরা। পরিবেশবিদদের আশংকা বেশি পরিমাণে পানি তুললে শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রাপ্যতা কমে লবণাক্ততা বাড়বে হালদায়। এতে মা মাছের জন্য বিপজ্জনক হবে হালদা নদী। এর আগে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভাও হালদা থেকে পানি উত্তোলনের বিষয়ে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন, পরিবেশ অধিদপ্তর, মৎস্য অধিদপ্তর ও হালদা নদী রক্ষা কমিটির ছাড়পত্র নেয়ার জন্য চট্টগ্রাম ওয়াসাকে নির্দেশনা দেয় পরিকল্পনা কমিশন।
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম জেলার উপ-পরিচালক জমির উদ্দিন দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘হালদা থেকে পানি উত্তোলনের জন্য একটি প্রকল্পের ছাড়পত্রের জন্য ইআইএ (পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন) প্রতিবেদন জমা দেয় চট্টগ্রাম ওয়াসা। প্রতিবেদনটি অধিদপ্তরের পাঠানো হয়। ইতোমধ্যে পরিবেশ ছাড়পত্র বিষয়ক কমিটির সভায় প্রকল্পটিতে সম্মতি দেয়নি অধিদপ্তর। বিকল্প উৎস থেকে মীরসরাই অর্থনৈতিক জোনে পানি সরবরাহের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে বলা হয়’।
হালদা কেন্দ্রিক প্রকল্প নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় মীরসরাই অর্থনৈতিক জোনে পানি সরবরাহের জন্য বিকল্প উৎসের দিকে হাঁটছে ওয়াসা। ইতোমধ্যে চাঁদপুরের মেঘনা নদী থেকে পানি উত্তোলনের বিষয়ে আরেকটি সমীক্ষা চালায় চট্টগ্রাম ওয়াসা। পরিবেশের ছাড়পত্র না পাওয়ার বিষয়ে কথা হলে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার একেএম ফজলুল্লাহ গতকাল মঙ্গলবার দৈনিক আজাদীকে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শিল্পনগরে পানি দেয়ার জন্য হালদা থেকে আমরা পানি আনতে চেয়েছিলাম। নানা আপত্তির কারণে আমরা বিকল্প উৎস থেকে পানি আনার পদক্ষেপ নিয়েছি। এখন চাঁদপুরের মেঘনা থেকে পানি আনার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।’
বাংলাদেশ অর্থনৈতিক জোন অথরিটি (বেজা) সুত্রে জানা যায়, ৩০ হাজার একরের মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে ইতোমধ্যে দেশি-বিদেশি শিল্প উদ্যোক্তারা তাদের বিনিয়োগ নিয়ে এসেছে। ইতোমধ্যে অর্থনৈতিক অঞ্চলটিতে অত্যাধুনিক রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা, টেক্সটাইল শিল্প, চামড়া শিল্প, প্লাস্টিক কারখানা, খাদ্য প্রক্রিয়াজাত কারখানা, ওষুধ শিল্প, অটোমোবাইল শিল্প, জাহাজ নির্মাণ শিল্প, ইস্পাত শিল্প ও পাওয়ার প্লান্টসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠা করছে বিনিয়োগকারীরা। এ শিল্পাঞ্চলে আগামী ১০-১২ বছরের মধ্যে ১৫-২০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে বলে জানিয়েছে বেজা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধশারমিনের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে মেয়েদের বিশাল জয়
পরবর্তী নিবন্ধভাত খেতে বসা অবস্থায় গুলি