হালদাপাড়ে ডিমের জন্য অপেক্ষা

৩ শতাধিক নৌকা নিয়ে প্রস্তুত মৎস্যজীবীরা

রাউজান ও হাটহাজারী প্রতিনিধি | শনিবার , ১৪ মে, ২০২২ at ৫:৩৬ পূর্বাহ্ণ

বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ খ্যাত হালদা নদীর দুই পাড়ে জাল নিয়ে কয়েকশ মৎস্যজীবী ৩ শতাধিক নৌকা নোঙর করে মাছের ডিম সংগ্রহের আশায় অপেক্ষায় আছেন। প্রতি বছর এই সময়ে (এপ্রিল-মে মাসে) এই নদীতে কার্প জাতীয় মা মাছ ডিম দেয়। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে নদীতে জোয়ারের সময় বিভিন্ন স্থানে দুয়েকটি ডিমের আলামত দেখা গেছে। তবে গতকাল শুক্রবার নদীর আর কোনো স্থানে ডিমের আলামত দেখা যায়নি। এটাকে ডিমের নমুনা বলা যাবে কিনা এ নিয়ে ডিম আহরণকারীদের মধ্যে ভিন্ন মত পাওয়া গেছে। আহরণকারীদের এক পক্ষ বলছে, ডিম ছাড়ার পূর্বে এমনিতে দুয়েকটি ডিমের আলামত দেখা যাওয়া বিচিত্র নয়।

তবে এটাকে নমুনা বলা ঠিক হবে না বলেও উল্লেখ করেন তারা। আর অন্য পক্ষ এটাকে ডিম ছাড়ার ‘সংকেত’ বলে উল্লেখ করেছেন। সামনে পূর্ণিমা তিথি/ জোতে বজ্রসহ প্রবল বর্ষণ হলে নদীতে জোয়ার বাড়বে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে মাছ ডিম ছাড়তে পারে। এ দিকে নদীর পাড়ে কয়েকশ’ মানুষ ডিম সংগ্রহ করে পোনায় রূপান্তরের পর সারা বছর মাছ চাষ করে জীবন নির্বাহ করে থাকেন। নদী পাড়ে অপেক্ষায় থাকা মৎস্যজীবীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পর্যাপ্ত পরিমাণ ডিম সংগ্রহের আশায় দিন রাত নদীর পাড়ে অপেক্ষায় আছেন তারা। তবে সবার মাঝে উৎকণ্ঠা আছে সংগৃহীত ডিম থেকে নিরাপদে পোনা রূপান্তর নিয়ে। শংকা আর উৎকণ্ঠার কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে মৎস্যজীবীরা জানান, নদী পাড়ে প্রতিষ্ঠিত সরকারি হ্যাচারিগুলোর মধ্যে কয়েকটি এখন পরিত্যক্ত, যেগুলো সচল আছে সেগুলোর মধ্যেও রয়েছে নানা সমস্যা। ফলে সমস্যা কবলিত হ্যাচারিগুলোতে ডিম ফুটাতে গিয়ে ডিম নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। গত বছর ত্রুটিপূর্ণ হ্যাচারিতে অনেক ডিম নষ্ট হয়েছে। এর বাইরে মৎস্যজীবীদের মাঝে রয়েছে নদীর লবণ পানি আতংক। তারা মনে করছেন নদীর পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে গেলে তাও হবে ডিম নষ্ট হওয়ার আরেকটি কারণ।

জানা যায়, হ্যাচারির বাইরে অনেককেই মাটির কুয়ায় ডিম রেখে পোনা সৃষ্টি করেন সনাতন পদ্ধতিতে। গত বছর নদীর লবণাক্ততা পানি পাড় উপচে কুয়ায় প্রবেশ করলে অনেক পোনা উৎপাদনকারী ক্ষতিগ্রস্ত হন।

নদীর পাড় পরিদর্শনে গিয়ে কথা হয় অনেক ডিম সংগ্রহকারীর সাথে। মাছের ডিমের সংগ্রহের জন্য অপেক্ষায় আছেন গড়দুয়ার কামাল সওদাগর। তাঁর সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি এবারও ছয়টি নৌকা নিয়ে প্রস্তুতিতে আছেন ডিম সংগ্রহের জন্য। এই মৎস্যজীবী বলেন, এবার নদীতে প্রচুর মাছের আনাগোনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ডিম দেয়ার মত অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হলেই মা মাছ যেকোনো সময় ডিম দেবে।

উল্লেখ্য, ব্যতিক্রম ছাড়া বেশির ভাগ সময় বজ্র বৃষ্টির মাঝে নদীতে স্রোত সৃষ্ট হলেই মা মাছ ডিম দিয়ে থাকে। হালদা পাড়ের মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিগত বছরগুলোর তুলনায় এবার হালদার মাছ অনেকটা নিরাপদ আছে। নদীতে যান্ত্রিক নৌযান চলাচলের উপর নিয়ন্ত্রণারোপ, জালপাতার বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসন, নৌপুলিশ ও আইডিএফের স্বেচ্ছাসেবীদের তৎপরতায় নদীর মাছ চোররা এখন তেমন সুবিধা করতে পাচ্ছে না। নদী পাড়ে ডিম সংগ্রহকারীদের অপেক্ষা আর পোনা রূপান্তর নিয়ে শংকার বিষয় নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে রাউজান উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা পিযুষ প্রভাকর বলেন, কাগতিয়া ও পশ্চিম গহিরা দুটি হ্যাচারি কার্যকর না থাকলেও মোবারকখীল হ্যাচারিসহ অন্য হ্যাচারিগুলো ডিম ফুটানোর জন্য উপযোগী করে রাখা আছে। লবণ পানির বিষয়টি প্রাকৃতিক। লবণাক্ত পানি নদীর পাড় উপচে মাটির কুয়ায় পড়লে ডিম নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

এজন্য তুলানামূলক উঁচু স্থানে মাটির কুয়া তৈরি করতে পরামর্শ দেন এই কর্মকর্তা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকর্ণফুলী মার্কেটে তিন হাজার লিটার সয়াবিন উদ্ধার
পরবর্তী নিবন্ধকেন্দ্রীয় নেতারা শুনবেন সবার কথা