হাবিলাসদ্বীপ গ্রামের প্রসিদ্ধ শিবচতুর্দশী মেলা

সিমলা চৌধুরী | বুধবার , ৬ মার্চ, ২০২৪ at ৮:২৩ পূর্বাহ্ণ

মহা শিবরাত্রি হল হিন্দু ধর্মের সর্বোচ্চ আরাধ্য দেবাদিদেব মহাদেব শিবের মহারাত্রি। শিব পুরাণ অনুসারে এই রাত্রিতে সৃষ্টি স্থিতি ও প্রলয়ের মহা তাণ্ডব নৃত্য করেছিলেন শিব ঠাকুর। এই মহা শিবরাত্রি ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে পালন করা হয়। চট্টগ্রামের পটিয়া থানার হাবিলাসদ্বীপ গ্রামের ত্রিপুরা চরণ চৌধুরী বাড়িতে রয়েছে এক সুউচ্চ ও বিশাল আদি শিব মন্দির। ১৯৪২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই মন্দির। কথিত আছে দীর্ঘ ১০ থেকে ১২ বছর লেগে গিয়েছিল এই মন্দির তৈরি করতে। সূক্ষ্ম কারুকাজ সমৃদ্ধ সুদৃশ্য ও বিশালাকৃতির নজরকাড়া এ মন্দির কালের ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে। সঠিক পরিচর্যার অভাবে মন্দিরের সৌন্দর্য কিছুটা ম্লান এখন। সরকারি সহায়তায় সঠিক পরিচর্যা পেলে এই মন্দির ও একটি দর্শনীয় ঐতিহাসিক নিদর্শন হিসেবে পরিচিত হতে পারে। গুগলে সার্চ দিয়ে যে কেউ এই মন্দিরের ছবি দেখতে পারবেন। পুরো পটিয়াতে এত পুরনো শিবমন্দির আর একটিও নেই। প্রতিবছর শিব পূজার দিন অনেক জমজমাট মেলা বসে মন্দিরের চারপাশে এবং অনেক দর্শনার্থী ও পুণ্যার্থীরা শিব দর্শন করতে আসেন এই দিনে। অনেকে মনস্কামনা নিয়ে পুজো দেন এই শিব মন্দিরে। এই মন্দির আমার দাদু সুরেন্দ্র লাল চৌধুরীর বাবা রাম দয়াল চৌধুরীর সমাধিস্থলে প্রতিষ্ঠা করা হয়। দাদুর আন্তরিক প্রচেষ্টায় এই মন্দিরে শিব এনে প্রতিষ্ঠা করা হয়। জানা গেছে সুদূর কামরূপ কামাখ্যা থেকে এই প্রসিদ্ধ শিব মূর্তি আনা হয়েছিল। খুব কম সময়ের মধ্যে এই মন্দির চট্টগ্রামের পটিয়া থানায় প্রসিদ্ধ মন্দির হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ছোটবেলায় শিব চতুর্দশী মেলার অনেক আনন্দের স্মৃতি এখনো স্মৃতি পটে ভেসে বেড়ায়। ছোটবেলায় বাবার হাত ধরে মেলায় যেতাম আর এটা ওটা কেনার বায়না ধরতাম। সারাদিন কতবার যে যাওয়া আসা হত তার কোন হিসেব ছিল না। সারা দিনভর মাইক, বাঁশি ও ডুগডুগির আওয়াজ এই দিনে গ্রামে অন্যরকম আনন্দের আবহ সৃষ্টি করে। গ্রামীণ জনমানুষের জীবনে শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার কাছে এই মেলা ধর্মীয় অনুভূতি ও আনন্দের ঢেউ বইয়ে দেয়। হাবিলাসদ্বীপ গ্রামের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ও দূর দূরান্ত থেকে ও অনেক মানুষ আসে এই শিব মেলায়। এখনো বংশ পরম্পরায় শিব চতুর্দশী তিথিতে এই পূজা পালন করে আসছে ত্রিপুরা চরণ চৌধুরী বাড়ির বংশধরেরা। ফাল্গুন মাসে শিব পুজো আসলে মনটা কেমন আনচান করে ওঠে। স্মৃতিপটে ভেসে উঠে সেইসব মধুর স্মৃতির মুহূর্তগুলো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধযত্রতত্র পার্কিং বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হোক
পরবর্তী নিবন্ধবীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল্লাহ আল রায়হান স্মরণ