বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল্লাহ আল রায়হান স্মরণ

মুসলেহউদ্দিন মুহম্মদ বদরুল | বুধবার , ৬ মার্চ, ২০২৪ at ৮:২৩ পূর্বাহ্ণ

মাগো ভাবনা কেন / আমরা তোমার শান্তি প্রিয় শান্ত ছেলে/ তবু শত্রু এলে অস্ত্র হাতে লড়তে জানি / তোমার ভয় নেই মা/ আমরা প্রতিবাদ করতে জানি। একটি দেশাত্মবোধক গানের প্রথম কয়েকটি লাইন। ষাট ও সত্তুরের দশকে পশ্চিমা শাসক গোষ্ঠীর বর্বরোচিত দমনপীড়ন, শোষণ, বঞ্চনা ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মুখর হয়ে উঠেছিল পূর্ব বাংলার ছাত্র সমাজ। তারই ধারাবাহিকতায় ছাত্রগণ অভ্যুত্থানে রূপ নেয় ১৯৬৯ সাল। স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের মসনদ কেঁপে উঠেছিল এদেশের আপামর ছাত্রজনতার রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মাধ্যমে। পতন ঘটে স্বৈরাচারী আইয়ুব শাহীর। সেই সময় কিছু দেশাত্মবোধক গান পূর্ব বাংলার টগবগে তরুণ ছাত্র সমাজকে দেশপ্রেমে উদ্বেলিত করেছিল। অধিকার বঞ্চিত মায়ের অধিকার আদায়ে শানিত করেছিল তাদের চিন্তা ও চেতনা শক্তি। আপন মায়ের মতই তারা ভালোবাসতো দেশকে। দেশ মাতৃকার মুক্তির জন্য যে কোন ত্যাগ স্বীকারে তারা ছিল প্রস্তুত।

উনসত্তরের ছাত্র গণ অভ্যুত্থানে রাজপথ কাঁপানো এক লড়াকু সৈনিক ছিলেন আবদুল্লাহ আল রায়হান ওরফে রাজু ভাই। রাউজান উপজেলার গহিরা গ্রামের বিশিষ্ট সমাজসেবী ও শিক্ষানুরাগী, আবদুল জব্বার ইয়াংমেন সোসাইটি (.জে.ওয়াই.এস.এস) বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আহমদ কবির চৌধুরীর ৫ম পুত্র আবদুল্লাহ আল রায়হান। রাউজানের অত্যন্ত বনেদী পরিবারের সন্তান তিনি। সেই বৃটিশ আমল থেকেই এই পরিবারের রয়েছে একটি প্রগতিশীল রাজনৈতিক ও সামাজিক ঐতিহ্য। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যেই পরিবারের সাথে ঘনিষ্ঠ ছিলেন। এ ছাড়া পূর্বসূরী পিতৃব্যদের রাজনীতির সুবাদে শেরে বাংলা এ,কে, ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর মতো নেতাদের সংস্পর্ষে রাজু ভাইদের পরিবার হয়ে উঠেছিল সুস্থ রাজনৈতিক চর্চার একটি পাঠশালা। বড় ভাই, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ভাষা সৈনিক, সাবেক গণ পরিষদ সদস্য মরহুম আবদুল্লাহ আল হারুন ও বীর মুক্তিযোদ্ধা, ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান এর অনুজ আবদুল্লাহ আল রায়হান মুক্তিযু্‌দ্ধ কালে ভারতের ত্রিপুরা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ১নং সেক্টরে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ষাটের দশকে বৃহত্তর চট্টগ্রাম জেলা ছাত্র লীগের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। দীর্ঘ দিন গহিরা স্কুল ও কলেজের সভাপতি এবং চট্টগ্রাম অফিসারস ক্লাব এর উপদেষ্টা ও আজীবন সদস্য হিসাবে এবং বিভিন্ন সমাজ হিতৈষী কাজের সাথে জড়িত ছিলেন রাজু ভাই। বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল্লাহ আল রায়হান রাজু ভাই গত ১লা মার্চ দুপুর আড়াইটায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় চট্টগ্রাম শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহে….রাজেউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মরহুমকে জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান করুন। আমিন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাবিলাসদ্বীপ গ্রামের প্রসিদ্ধ শিবচতুর্দশী মেলা
পরবর্তী নিবন্ধদূরের টানে বাহির পানে